পুরুলিয়া: সকাল থেকে ঘণ্টার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে বহু রোগী৷ কিন্তু পুরুলিয়ার মানসিক আরোগ্য নিকেতন হাসপাতালে একজন চিকিৎসকেরও দেখা নেই৷ ঘড়িতে তখন বাজে ১১টা৷ তারপরেও চিকিৎসা পরিষেবা শুরু না হওয়ায় অস্থির হয়ে ওঠেন মানসিক রোগীরা৷ তাঁদের অভিযোগ, সময়মতো হাসপাতালে না আসাটা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন ডাক্তারবাবুরা৷ বুধবার এর একটা হেস্তনেস্ত চাইতে সবাই মিলে একজোট হয়ে হাসপাতালের বাইরে বসে পড়েন রাস্তায়৷ শুরু হয় অবরোধ৷ ঘণ্টাখানেকের অবরোধেই টনক নড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের৷ তড়িঘড়ি শুরু হয় চিকিৎসা পরিষেবা৷ তারপরই অবরোধ তুলে নেন রোগীরা৷
পুরুলিয়ার বরাকর রাজ্য সড়কের কাছেই মানসিক আরোগ্য নিকেতন৷ প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে রোগীরা আসেন এখানে চিকিৎসা করাতে৷ এমনকী পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড থেকেও রোগীদের নিয়ে এই হাসপাতালেই আসেন তাঁদের পরিজনেরা৷ কাজেই হাসপাতালে রোগীর চাপ প্রচুর৷ কিন্তু সেই তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা কম৷ যে কারণে হাসপাতালে ঠিক মতো চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রোগীদের৷ তাঁরা জানিয়েছেন, ডাক্তারবাবুদের কখনওই ঠিক সময়ে দেখতে পাওয়া যায় না৷ ইচ্ছেমতো সময়ে আসেন৷
বুধবারও একই ঘটনা ঘটে৷ স্থানীয় রোগী তারাপদ মাহাত বলেন, ‘ইচ্ছেমতো সময়ে চিকিৎসকরা আসেন৷ অধিকাংশ দিন মাত্র একজন চিকিৎসকেরই দেখা মেলে৷’ এদিন সকাল ১১টা পর্যন্ত চিকিৎসা পরিষেবা শুরু না হওয়ায় অবরোধ শুরু করে দেন রোগীরা৷ সেই অবরোধে যোগ দেন তারাপদ মাহাতও৷ তাঁর কথায়, ‘আজ একজন চিকিৎসক এখনও পর্যন্ত আসেননি৷ অনেক মানুষ দূর থেকে আসেন৷ তাঁরা না খেয়ে রয়েছেন৷ এদিকে চিকিৎসা পরিষেবা শুরু না হওয়ায় বিরক্ত হয়ে পড়েন তাঁরা৷’ অন্য এক মানসিক রোগী বিশ্বনাথ মাহাত বলেন, ‘মাঝে মাঝে চিকিৎসকও আসেন না৷ রোগীদের ঘুরে যেতে হয়৷ আজ সকাল থেকে কোনও ডাক্তার নেই৷ এদিকে রোগীর চাপ বাড়তেই থাকে৷ তাই সবাই মিলে আজ অবরোধ শুরু করি৷’
এদিকে অবরোধের জেরে রাস্তায় তীব্র যানজট তৈরি হয়৷ ঘটনাস্থলে চলে আসে পুলিস৷ তারা রোগীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য বোঝাতে থাকেন৷ কিন্তু রোগীরা রাস্তা থেকে অবরোধ তুলতে নারাজ৷ পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিস৷ জানা যায়, চিকিৎসক চলে এসেছেন৷ এরপরই অবরোধ তুলে নেন রোগীরা৷ অবরোধের খবর পেয়ে সেখানে চলে এসেছিলেন পুরুলিয়া পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ সাহি৷ হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাবের কথা মেনে নেন তিনি৷ কাউন্সিলর বলেন, মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাব রয়েছে৷ যে কারণে রোগীরা চিকিৎসা পরিষেবা ঠিক মতো পাচ্ছেন না৷ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করব৷ অন্যদিকে জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক কুনালকান্তি দে বলেন, ‘ব্যাপারটা দেখছি৷ ডাক্তার কেন ছিলেন না তদন্ত করে দেখা হবে৷ কারও গাফিলতি থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’