ময়নাগুড়ি: প্রাথমিক তদন্ত শেষে রেলের নিরাপত্তা আধিকারিকেরা আচমকা যান্ত্রিক ত্রুটিকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দায়ী করলেও, আরপিএফের ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জয় চন্দর (IPS Sanjay Chander) এ নিয়ে বিশদ কিছু জানাতে চাননি। শুক্রবার সকালে ময়নাগুড়ির দুর্ঘটনাস্থল (Mainaguri train accident) পরিদর্শন করেন আরপিএফের ডিজি। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সঞ্জয় চন্দর বলেন, ‘রেলেওয়ের পদস্থ আধিকারিকরা তদন্ত করে ইঞ্জিনের যান্ত্রিক ত্রুটি থাকার কথা বলছেন। সব দেখে আমারও তাই মনে হয়েছে। তবে, কী থেকে কী হয়েছে, তা রেলওয়ে সিকিওরিটি কমিশনারই বলবেন।’ পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না বলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ ময়নাগুড়ির দোমোহনীর কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আপ বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস ট্রেন। ১২টি বগি লাইনচ্যুত হয়। মৃত্যু হয় ৯ জনের। আহত ৪২ জন জলপাইগুড়ির সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সূত্রের খবর, শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: যান্ত্রিক ত্রুটিতেই ময়নাগুড়ি রেল দুর্ঘটনা, প্রাথমিক অনুসন্ধানে দাবি রেলমন্ত্রীর
বৃহস্পতিবার বিকেলে ট্রেন দুর্ঘটনার পরপরই তদন্তের নির্দেশ দেয় রেলওয়ে সেফটি কমিশন। রেলের নিরাপত্তা ও টেকনিক্যাল বিষয়ক আধিকারিকদের নিয়ে তদন্ত টিম গড়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই রেলের আধিকারিকরা সেখানে পৌঁছে যান। এ দিন সকালে আরপিএফের ডিজি ময়নাগুড়ি পৌঁছনোর আগেই রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সেখানে পৌঁছে যান। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ইঞ্জিনটি পরিদর্শনের পর বিকানের এক্সপ্রেসের চালকের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। আহতদের দেখতে হাসপাতালেও গিয়েছিলেন।
দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে চালকের তরফে গাফিলতি থাকার কথাও উঠেছিল। কারণ, হঠাত্ করেই নাকি এক্সপ্রেসের গতি বেড়ে যায়। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব চালকের সঙ্গে কথা বলে, যান্ত্রিক ত্রুটি সামনে আনেন। রেলের পদস্থ আধিকারিকরাও প্রাথমিক পর্যায়ের তদন্তে যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলছেন।
আরও পড়ুন: ময়নাগুড়ি ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত বেড়ে ৯, ঘটনাস্থলে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী
মনে করা হচ্ছে, ইঞ্জিনের ট্র্যাকশন মোটর ভেঙেই বিপত্তি। এই ট্রাকশন মোটরের কাজ হল, চাকা ঘোরানো। রেলের ইঞ্জিনে এমন ৬টি ট্র্যাকশন মোটর থাকে। তার একটি খুলে পড়ে যায়। তার জেরেই চালক আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। ট্রেনের ১২টি বগি লাইনচ্যুত হয়। তবে, এই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই ময়নাগুড়ির দোমোহনীতে দুর্ঘটনা ঘটেছে কি না, সবকিছু পরীক্ষার পর, তা নিশ্চিত করে জানাবেন রেলওয়ে সেফটি কমিশনার। তবে, রেল ট্রাকে যে কোনও ত্রুটি ধরা পড়েনি, রেলমন্ত্রী ও আরপিএফের ডিজি তা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন।
আরপিএফ কর্তা সঞ্জয় চন্দর জানিয়েছেন, এই মুহর্তে রেলের লক্ষ্য, দ্রুত ট্র্যাকটি পরিষ্কার করে, রেল পরিষেবা সচল করা। এ জন্য শিলিগুড়ি থেকে গ্যাস কাটার আনানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বগিগুলো কেটে রেল ট্র্যাক থেকে সরানো হচ্ছে। রেল সকালেই ঘোষণা করে উদ্ধারকাজ শেষ। ফলে, দুর্ঘটনাস্থলে রেলের বগিতে আর কোনও যাত্রী আটকে নেই।