ময়নাগুড়ি: উত্তরবঙ্গের ময়নাগুড়িতে ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’তে রেল দুর্ঘটনা বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে দাবি করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টও সামনে আনেন। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অসমগামী বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের ১২টি বগি একসঙ্গে লাইনচ্যুত হল কী করে? রেলের বিশেষজ্ঞরা সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
প্রাথমিক অনুসন্ধান পর্বের পর রেলের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, WAP-4 ইঞ্জিনে চারটি ট্র্যাকশন মোটর রয়েছে। এই মোটরের কাজ হল রেলের চাকাকে সচল রাখা। এই ইঞ্জিন দিয়েই টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ১৫৬৩৩ বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসকে।
ময়নাগুড়ির কাছে এই চারটি ট্র্যাকশন ইঞ্জিনের একটি আচমকা খুলে যায়। তাতেই বিপত্তি। এই অবস্থায় এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে থামাতে লোকো ইঞ্জিনের চালককে ইমার্জেন্সি ব্রেক কষতে হয়। গতিবেগ বেশি থাকার কারণে ইমার্জেন্সি ব্রেক কষতেই কয়েক’টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে রেলওয়ে সেফটি কমিশনারই কারণ জানাবেন, বললেন সঞ্জয় চন্দর
বিকানের এক্সপ্রেসের বগিগুলি পুরনো শুধু নয়, আধুনিক কোচের তুলনায় অনেকটাই ভারী। এই বগিগুলি ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরিতে তৈরি। বগির ওজন বেশি হওয়ার কারণে ইমার্জেন্সি ব্রেক কষতেই চাকা লাইনের বাইরে বেরিয়ে যায়। ২৪টি বগির মধ্যে প্রথম ১২টিই লাইনচ্যুত হয়। এর মধ্যে অন্তত দুটো কামরা ঘাড়ে ঘাড়ে উঠে যায়। রেলেওয়ে সেফটি কমিশনার তদন্ত শেষ করে খুব শিগগির রেলমন্ত্রকে রিপোর্ট জমা দেবেন।
রেলের রিপোর্ট অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ ময়নাগুড়ির কাছে দুর্ঘটনার সময় ট্রেনটিতে ১,০৫৩ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ৯ জন মারা গিয়েছেন। হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছেন ৪২ জন। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা সংকটজনক।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ট্র্যাকশন মোটরের কাজ হল ইঞ্জিনের চাকা ঘোরানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি তৈরি করা। ২৪ কেভি-র এসি ইলেকট্রিক লোকোমোটিভের ফোর্থ জেনারেশন শ্রেণির যে WAP-4 ইঞ্জিনে বিকানের এক্সপ্রেস চলছিল, তার উত্পাদন ২০১৬ সালের অগস্ট থেকে বন্ধ। বগিগুলো পুরনো হওয়ায় ইমার্জেন্সি ব্রেকের ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
আরও পড়ুন: যান্ত্রিক ত্রুটিতেই ময়নাগুড়ি রেল দুর্ঘটনা, প্রাথমিক অনুসন্ধানে দাবি রেলমন্ত্রীর
রেলের রুলবুক অনুযায়ী, আইসিএফ কোচে গতিসীমা ঘণ্টায় ৬৬ কিলোমিটার। দুর্ঘটনার সময় বিকানের এক্সপ্রেসের গতি ৬৬ কিলোমিটারের বেশি ছিল কি না, ইঞ্জিনের ডেটা রেকর্ডার থেকেই তা জানা যাবে। গতি ৬৬ কিলোমিটারের বেশি থাকলে, সে ক্ষেত্রে চালকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠবে। যদিও একটি সূত্রে খবর, ইঞ্জিনের গতি ছিল ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার।
আইসিএফ কোচ তৈরি কয়েক বছর আগে বন্ধ হয়ে গেলেও বিকানের শুধু নয়, একাধিক দূরপাল্লার ট্রেনে এখনও কিন্তু মান্ধাতার কোচ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে, যাত্রীদের নিরাপত্তার সঙ্গে রেল আপস করছে, এমন অভিযোগও কিন্তু উঠছে।