শ্রীনগর: গত সোমবার শ্রীনগরের হায়দারপোরা এনকাউন্টারে দুই ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় ফুঁসছে কাশ্মীর৷ নিহতদের পরিবারের দাবি, দু’জনকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের পর ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে পুলিশ৷ যদিও কাশ্মীর পুলিশের বক্তব্য, গুলির লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে মৃত্যু হয়েছে ওই দুই ব্যবসায়ীর৷ তবে নিহতরা আড়ালে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন বলে দাবি করে উপত্যকার পুলিশ৷ সেই দাবি খারিজ করে দুই ব্যবসায়ীর খুনের ঘটনার বিচার চেয়ে রাস্তায় নামে কাশ্মীরের মানুষ৷ দাবি ও পাল্টা দাবির মধ্যে বৃহস্পতিবার কাশ্মীর প্রশাসন হায়দারপোরার এনকাউন্টারের ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়৷ জানায়, কারও সঙ্গে অবিচার হবে না৷
আরও পড়ুন: বাবাকে মারলে কেন? জবাবে শুধুই বাহিনীর কুৎসিত হাসি, কাশ্মীরি মেয়ের ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল
এদিন জম্মু ও কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল টুইট করে লেখেন, হায়দারপোরা এনকাউন্টারের ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ নিরীহ নাগরিকের জীবন রক্ষায় জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন বদ্ধপরিকর এবং কেউ যাতে অবিচারের শিকার না হয় সেটা সুনিশ্চিত করবে৷ পাশাপাশি, কাশ্মীর পুলিশও আলাদা করে ঘটনার তদন্ত করবে৷ ডিজিপি দিলবাগ সিং সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কোথাও ভুল ত্রুটি হলে আমরা সেটা সংশোধন করব৷ সেটা খুঁজে বের করতে পুলিশি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ নিহতদের পরিবারের কথা শোনা হবে৷ হায়দারপোরা এনকাউন্টারে কী ঘটেছিল সেটা জানার চেষ্টা করা হবে৷ মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের কাজ৷ কোনও তদন্তে ভয় পাব না৷
A magisterial inquiry by officer of ADM rank has been ordered in Hyderpora encounter.Govt will take suitable action as soon as report is submitted in a time-bound manner.JK admin reiterates commitment of protecting lives of innocent civilians&it will ensure there is no injustice.
— Office of LG J&K (@OfficeOfLGJandK) November 18, 2021
শ্রীনগরে একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের ভেতর জঙ্গি নিধন অভিযান চলার সময় সিমেন্ট ব্যবসায়ী আলতাফ ভাট এবং ডেন্টাল সার্জেন মুদাসির গুলের মৃত্যু হয়৷ এছাড়া দুই জঙ্গি পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়৷ পুলিশ জানায়, ওই দু’জনের একজন পাকিস্তানি এবং আরেকজন স্থানীয় জঙ্গি৷ বাকি দু’জন আলতাফ এবং মুদাসির জঙ্গিদের মদতদাতা৷ এরা জঙ্গিদের নানা ভাবে সাহায্য করত৷ তবে আলতাফ এবং মুদাসিরের মৃত্যু নিয়ে বারবার অবস্থান বদলায় কাশ্মীর পুলিশ৷ প্রথমে জানায়, জঙ্গিদের গুলিতে তাদের মৃত্যু হয়েছে৷ পরে জানায়, ক্রশ ফায়ারিংয়ের সময় গুলি লেগে মৃত্যু হয়েছে৷ শেষে কাশ্মীর পুলিশের আইজি বলতে বাধ্য হন, ময়নাতদন্তে যদি একে রাইফেলের গুলি মুদাসির এবং আলতাফের শরীরে মেলে তাহলে পুলিশে গুলিতে মৃত্যু হয়েছে বুঝতে হবে৷
আরও পড়ুন: বিজেপি নেতাকে দেখেই গো-ব্যাক স্লোগান, দেউচা-পাঁচামির বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে রাজু ব্যানার্জি
মুদাসির এবং আলতাফের পরিবারের দাবি, পুলিশের গুলিতেই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে৷ মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের পর পুলিশ তাদের খতম করে৷ আলতাফের ১৩ বছরের মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে জানায়, পুলিশ আঙ্কেলকে সে জিজ্ঞাসা করেছিল কেন তার বাবাকে মারা হল? প্রশ্ন শুনে নির্লজ্জের মত হেসেছিল পুলিশ৷ খুনের পর দেহ পরিবারের হাতে দেওয়া হয়নি৷ পুলিশ জঙ্গিদের সঙ্গে আলতাফ এবং মুদাসিরের দেহ করব দেয়৷ অপরদিকে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু ‘জঙ্গি’ আমিরের পরিবারও প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ নিহতের বাবা আব্দুল লাতিফ জঙ্গিকে পাথর মেরে ২০০৫ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে পুরস্কৃত হয়েছিলেন৷ তাঁর ছেলে জঙ্গি হতে পারেন না বলে জোর গলায় দাবি করেন আব্দুল লাতিফ৷