গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার (Alexander) ভারতে (India) পা রেখে ভারতের ভৌগলিক বৈচিত্র অনন্যতা দেখে তাঁর সেনাপতিকে বলেছিলেন ‘সত্য সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!’ আর এত যুগ পরেও উক্তিটি যথার্থ তা সত্যই। এই দেশে এমন বহু জায়গা আছে যা সত্যিই বিচিত্র। সেরকমই এক জায়গা ধনুশকোডি (Dhanushkodi Town in Tamil Nadu)। ধনুশকোডি হল তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে অবস্থিত একটি রহস্যময় ছোটো শহর। এটা ভারতের শেষ গ্রাম। যেখানে কোনও লোকবসতি নেই। সেই শহরের ধার ঘেঁষে যে রাস্তাটি চলে গিয়েছে সেটি হল ভারতের শেষ রাস্তা। এই রাস্তা থেকে শ্রীলঙ্কাকে স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়।
তামিলনাড়ু রাজ্যের পাম্বন দ্বীপের (রামেশ্বরম দ্বীপ) দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত শহর হল ধনুশকোডি। পাম্বনের দক্ষিণ-পূর্বে এবং শ্রীলঙ্কার তালাইমান্নার থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এই রহস্যময় শহর। মনোরম পরিবেশ এবং ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের সংযোগস্থল ধনুশকোডি। রহস্যে ঘেরা এই শহরে পৌঁছোনো বেশ কঠিন।
১৯৬৪ সালে এক ভয়াবহ সাইক্লোন তছনছ করে দেয় এই জায়গাটি৷ ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে, রামেশ্বরমের এই শহরে এক প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়। এবং এই কারণে ধনুশকোডি শহরটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারান প্রায় ১,৮০০ জন। ১০০ জন বিশিষ্ট যাত্রীবাহী একটি ট্রেন ডুবে যায়। যার ফলে এখানে স্থায়ীভাবে কেউ বসবাস করে না। শোনা যায় এটি নাকি একটি ভুতুড়ে জায়গা। প্রশাসনের তরফে বিকেল পাঁচটার পর এখানে কোনও পর্যটককে থাকতে দেওয়া হয়না । রামেশ্বরম থেকে গাড়িতে করে যেতে মিনিট কুড়ি সময় লাগবে। তবে সেখান থেকে বাস সার্ভিসও রয়েছে।
আরও পড়ুন: Niti Aayog | Maternity Leave | ৯ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি চাকরিজীবী মহিলাদের, প্রস্তাব নীতি আয়োগের
ভারত মহাসাগরের তীরে এসে শেষ হচ্ছে ধনুশকোড়ি। রাস্তাটির শেষে রয়েছে একটি গোল চক্কর যেখানে আপনাকে ইউ টার্ন নিতে হবে কারণ এটাই ভারতের শেষ ভূভাগ। শ্রীলঙ্কা থেকে ধনুশকোডির দূরত্ব মাত্র কুড়ি কিলোমিটার। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এই ধনুশকোডি থেকেই লঙ্কা অর্থাৎ (বর্তমানের শ্রীলঙ্কা) যাওয়ার সেতু নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন রাম। কিন্তু এই এলাকার সৌন্দর্য্য এতটাই আকর্ষণীয় যে পর্যটকেরা সেই টানে বারে বারে এখানে ছুটে যায়। দিনের বেলায় পর্যটক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কোলাহলে গমগম করে। যারা রামেশ্বরম বেড়াতে যান, তাঁরা একবার ধনুশকোডি ঘুরে আসেন একবেলা।
তামিলনাড়ুর এই গ্রামটি বিখ্যাত হিন্দু তীর্থস্থান রামেশ্বরমের কাছেই অবস্থিত। ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে পাম্বন ব্রিজের মাধ্যমে যুক্ত। সমুদ্রের বুকে শতাব্দীপ্রাচীন একটি রেলসেতুও আছে। যা পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। এই সেতুর উপর দিয়ে ট্রেন যাওয়ার সময় সমুদ্রের ঢেউয়ের জল ছিটকে আসে ট্রেনের ভিতর। তবে বর্তমানে একটি নতুন রেলব্রিজ তৈরি হচ্ছে প্রাচীন সেতুটির পাশেই। এই পথের অনেকটা অংশ জোয়ারের সময় জলে ডুবে যায়। ফলে বাস বা গাড়ি ওই জলের ওপরেই চলাচল করে।
ভারতের শেষ রাস্তার শেষপ্রান্ত খুবই সুন্দর করে সাজানো হয়েছে সম্প্রতি। উপর থেকে অনেকটা গিটারের মতো লাগে এই অংশটি। এই দ্বীপে বর্তমানে প্রায় ৫০০ জন মৎস্যজীবী বসবাস করেন। ফলে শহরজুড়ে ৫০টিরও বেশি কুঁড়েঘর রয়েছে। পরিত্যক্ত হওয়ার পর থেকে ধনুশকোডিকে ভৌতিক শহরও বলা হয়। দিনের বেলায় এখানে তাও লোকজনকে আসতে দেওয়া হয়। কিন্তু রাতের বেলা এখান প্রবেশ নিষেধ।