ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকি, ভারতের ওপর বিপুল বাণিজ্য শুল্ক চাপানোর রণহুঙ্কার—এই ঘটনাগুলোকে শুধুমাত্র একজন খামখেয়ালি রাষ্ট্রনেতার হঠাৎ ক্ষেপে যাওয়া হিসেবে দেখলে ভুল হবে। এই সংঘাত আসলে এক দীর্ঘ নাটকের নতুন অঙ্ক। নাটকের একদিকে আছে এক প্রতিষ্ঠিত বিশ্বশক্তি, যে তার আধিপত্য বজায় রাখতে মরিয়া; আর অন্যদিকে আছে এক বিরাট বাজার- ভারত, যার জনসংখ্যার ১৫% গোটা ইউরোপের বাজারের সমান। ট্রাম্পের এই নাক গলানো, যা আপাতদৃষ্টিতে তেল এবং বাণিজ্য নিয়ে বলে মনে হচ্ছে, তার গভীরে লুকিয়ে আছে ভারতের স্বাধীন বিদেশ ও আর্থিক নীতি নির্ধারণের অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করার এক প্রচেষ্টা। একুশ শতকের বহু-মেরুর বিশ্বে ভারতের কৌশলগত সার্বভৌমত্বের (Strategic Autonomy) জন্য এটা এক কঠিন পরীক্ষা। আসলে শক্তিশালী দেশগুলো দুর্বল দেশগুলোর উপর নিজেদের ইচ্ছে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য এক ধরনের জবরদস্তিমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা তৈরি করতে চায়। ভারতের সামনে আজ সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুহূর্ত এসেছে—হয় এই জবরদস্তিমূলক ব্যবস্থাকে মেনে নিয়ে আপোস করতে হবে, অথবা কিছুটা লোকসান স্বীকার করেও নিজের জাতীয় স্বার্থকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ট্রাম্পের এই চাপ আসলে সেই সিদ্ধান্তের পরীক্ষামাত্র। মোদিজির হেঁ-হেঁ যুগের অবসান আসন্ন। হয় উনি সরে যাবেন, নয় ওনাকে রুখে দাঁড়াতেই হবে। প্রথমে আমরা এই সংঘাতের আশু কারণগুলো খতিয়ে দেখব—কেন রাশিয়া থেকে তেল কেনা বা ‘ব্রিকস’-এর মতো মঞ্চে ভারতের অংশগ্রহণ আমেরিকার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপর আমরা ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখব, ইন্দিরা গান্ধীর সময়েও ভারত কীভাবে প্রায় একই ধরনের মার্কিন চাপের মুখে পড়েছিল এবং তার মোকাবিলা করেছিল। সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে আমরা বর্তমান ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়ার মূল্যায়ন করব—এটা কি দুর্বলতা, নাকি এক নতুন ধরনের কৌশলগত দৃঢ়তা?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এবং ভারতের মধ্যে এই সাম্প্রতিক সংঘাতের মূলে রয়েছে তিনটে প্রধান অভিযোগ। ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় এবং প্রকাশ্য অভিযোগ হল- ভারত ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে সস্তায় তেল কিনছে এবং সেই তেল পরিশোধন করে বিশ্ববাজারে চড়া দামে বিক্রি করে লাভ করছে। তাঁর ভাষায়, ভারত ‘Buying massive amounts of Russian Oil’ এবং তা দিয়ে ‘Big profits’ করছে, যা প্রকারান্তরে ‘Russian War Machine’-কে অর্থ জোগাচ্ছে। ট্রাম্পের এই বক্তব্যের মধ্যে আদতে এক নৈতিকতার মোড়ক দেওয়ার চেষ্টা স্পষ্ট। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, ইউক্রেনে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য ভারত পরোক্ষভাবে দায়ী, কারণ তারা রাশিয়ার অর্থনীতিকে সমর্থন জুগিয়ে চলেছে। এবারে তথ্য বলছে, এই অভিযোগের এক বাস্তব ভিত্তিও আছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে ভারতের মোট তেল আমদানির খুব সামান্য অংশই রাশিয়া থেকে আসত, কিন্তু যুদ্ধের পর ভারত রাশিয়ার সমুদ্রবাহিত অপরিশোধিত তেলের বিশ্বের বৃহত্তম ক্রেতা হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ভারতের মোট আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই আসছে রাশিয়া থেকে। কিন্তু ট্রাম্পের এই অভিযোগের পিছনে একটি গভীর কৌশল কাজ করছে। ইউক্রেন যুদ্ধের মানবিক সংকটকে সামনে রেখে তিনি ভারতের নীতিকে অনৈতিক হিসেবে চিত্রিত করতে চাইছেন। এর মূল উদ্দেশ্য হল, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে একঘরে করে দেওয়া এবং এমন একটা প্রেক্ষাপট তৈরি করা, যেখানে ভারতের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়াটা যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়। ট্রাম্পের দ্বিতীয় বড় মাথাব্যথার কারণ হল- ‘ব্রিকস’ গোষ্ঠী, যেখানে ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ট্রাম্প এবং তাঁর সহযোগীরা ‘ব্রিকস’-কে এক ‘Anti-US’ বা আমেরিকাবিরোধী গোষ্ঠী হিসেবেই দেখে। ট্রাম্পের একটা বিখ্যাত উক্তি ছিল, ভারত ও রাশিয়া তাদের ‘Dead Economies’ নিয়ে একসাথেই ডুবে মরুক। এই উক্তিতে আসলে ‘ব্রিকস’-এর জন্য তাঁর তীব্র অবজ্ঞা আর বিরক্তি বেরিয়ে আসছে। এই বিরক্তির কারণ শুধু ভূ-রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিকও। ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, ‘ব্রিকস’ দেশগুলো মার্কিন ডলারের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করছে এবং এক বিকল্প বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরির পথে হাঁটছে। ‘ব্রিকস’-এর সম্প্রসারণ আর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করার উদ্যোগকে তারা ডলারের একচেটিয়া দখলদারির উপর আক্রমণ হিসেবেই দেখে। তাই ভারতের মতো একটা বড় এবং গণতান্ত্রিক দেশের ‘ব্রিকস’-এ সক্রিয় অংশগ্রহণ আমেরিকার কাছে বড় কৌশলগত অস্বস্তির কারণ। এই চাপ তৈরি করে আমেরিকা আসলে ভারতকে বুঝিয়ে দিতে চায় যে, তাকে দুটো শিবিরের মধ্যে একটাকে বেছে নিতে হবে।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | মোদিজি, সময় থাকতে থাকতে শেখ হাসিনা নিয়ে স্পষ্ট নীতি নিন
এর পিছনে অবশ্য আরও একটা গভীরতর কারণ রয়েছে, তা হল আমেরিকা-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ‘ব্রিকস’-এর অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি মূলত চীন। আমেরিকা মনে করে, ‘ব্রিকস’ আসলে চীনের বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তারের এক মঞ্চ। তাই ‘ব্রিকস’-এর উপর আক্রমণ এবং ভারতের মতো সদস্য দেশকে চাপ দেওয়া আসলে চীনের প্রভাবকে খর্ব করার পরোক্ষ কৌশল। ভারতকে চাপ দিয়ে আমেরিকা দেখতে চায়, সে কি মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যবস্থায় থাকবে, নাকি চীন-রাশিয়া অক্ষের কাছাকাছি আসবে। সুতরাং, ভারতের উপর এই চাপ কেবল দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়, এটা বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক খেলার অংশ। ট্রাম্পের তৃতীয় অভিযোগটা নতুন কিছু নয়, ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কের এক বহু পুরনো সমস্যা। ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করেছেন যে, ভারতে মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্কের হার বিশ্বের সর্বোচ্চ স্তরগুলোর মধ্যে একটা ‘Among the highest in the World’ । আর এই অভিযোগকে সামনে রেখেই তিনি ভারতের উপর ২৫% শুল্ক চাপানোর হুমকি দিয়েছেন। আসলে এই শুল্কের হুমকি এক চাপ তৈরির কায়দা, যা দিয়ে তিনি ভারতকে এমন এক বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করতে চান, যা আমেরিকার জন্য বেশি লাভজনক হবে। আমেরিকা অনেকদিন ধরেই ভারতের কৃষি এবং ডেয়ারি ক্ষেত্রগুলোতে অবাধ প্রবেশাধিকার চাইছে, কিন্তু ভারত তার কৃষক এবং অভ্যন্তরীণ শিল্পের স্বার্থে এই দাবি মানতে নারাজ। ট্রাম্পের এই শুল্কের হুমকি আসলে সেই দরজা খোলার প্রচেষ্টা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভারতের স্বাধীন নীতিতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা বা চাপ সৃষ্টির ঘটনা নতুন নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ যা করছেন, তার ছায়া দেখতে পাওয়া যায় অর্ধশতাব্দী আগের ইতিহাসে, যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। সেই সময়কার দুটো ঐতিহাসিক ঘটনা—১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭৪ সালের পারমাণবিক পরীক্ষা—আজকের পরিস্থিতিকে বোঝার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট তৈরি করে দেয়। সেই ইতিহাস মনে করিয়ে দেয় যে, ভারতের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই বহু পুরানো এবং তার ঐতিহ্য বেশ শক্তিশালী। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবস্থান ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। সেই সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের প্রশাসন খোলাখুলিভাবে পাকিস্তানের পক্ষ নেয়, এই সমর্থনের সবচেয়ে বড় নিদর্শন ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরের যুদ্ধবিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস এন্টারপ্রাইজকে (USS Enterprise) বঙ্গোপসাগরের দিকে পাঠানো। সেই চরম সংকটের মুহূর্তে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারা আমেরিকার এই পদক্ষেপের জবাবে নিজেদের নৌবহর পাঠিয়েছিল, যা মার্কিন নৌবহরকে সংযত থাকতে বাধ্য করে। এই ঘটনাটা ইন্দিরা গান্ধীর সরকারকে দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখিয়েছিল। প্রথমত, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নৈতিকতার চেয়ে শক্তির গুরুত্ব অনেক বেশি। দ্বিতীয়ত, আত্মরক্ষার জন্য অন্য কোনও শক্তির উপর পুরোপুরি নির্ভর করা যায় না, নিজের শক্তি অর্জন করা অপরিহার্য। এটাও ঘটনা যে, ১৯৭১ সালের এই ঘটনাই ভারতকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ার পথে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার জন্য ইচ্ছেটা জুগিয়েছিল। ১৯৭৪ সালের ১৮ মে রাজস্থানের পোখরানে ভারত তার প্রথম পারমাণবিক বোমার সফল পরীক্ষা চালায়। ভারত সরকার অবশ্য এটাকে ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক বিস্ফোরণ’ (Peaceful Nuclear Explosion বা PNE) বলে ঘোষণা করেছিল, যার ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল পারমাণবিক শক্তিকে দেশের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা। মজার কথা হল, এই পরীক্ষাটা এতটাই গোপনে করা হয়েছিল যে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাও তার কোনো আঁচ পায়নি। মাত্র ৭৫ জন বিজ্ঞানী এবং কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাই এই প্রকল্পের বিষয়ে জানতেন, যা ইন্দিরা গান্ধীর দৃঢ় এবং গোপনীয়তা রক্ষার অসাধারণ ক্ষমতার পরিচায়ক। এই পারমাণবিক পরীক্ষার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমী দেশগুলো ভারতের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু সেই সময়ের মার্কিন প্রতিক্রিয়া আজকের ট্রাম্পের মতো এতটা উচ্চকিত এবং প্রকাশ্য ছিল না। নিক্সন এবং তাঁর পরামর্শদাতা হেনরি কিসিঞ্জার পারমাণবিক অস্ত্রের অপ্রসারণ চুক্তিকে (NPT) খুব একটা গুরুত্ব দিতেন না এবং ভারতের এই পরীক্ষাকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ‘Setback’ হিসেবে দেখলেও, একে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে হইচই হয়নি। ১৯৭১-এর যুদ্ধজয় এবং ১৯৭৪-এর পারমাণবিক পরীক্ষা—শুধু কয়েকটা নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল না। এগুলো ভারতের আধুনিক কৌশলগত সংস্কৃতির স্ট্রাটেজিক কালচারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিল।
অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল এক দেশ যখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নিজের জাতীয় স্বার্থকে প্রতিষ্ঠা করে, তখন তা দেশের মানুষের মনে এক গভীর আত্মবিশ্বাস এবং গর্বের জন্ম দেয়। এই ‘Defiant’ বা বিদ্রোহী মনোভাব ভারতের জাতীয় পরিচয়ের এক অংশ হয়ে উঠেছে। তাই আজকের দিনেও যখন কোনও বিদেশি শক্তি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তখন দেশের মানুষ তার সরকারের কাছ থেকে ইন্দিরা গান্ধীর মতোই দৃঢ়তা প্রত্যাশা করে। বর্তমান সরকারের পক্ষে এই ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে অস্বীকার করা রাজনৈতিকভাবে প্রায় অসম্ভব। আর ঠিক তাই দেরিতে হলেও সম্ভবত মোদি সরকার বুঝতে পেরেছে, আর তাই ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক (Ministry of External Affairs) এক অত্যন্ত কড়া ভাষায় বিবৃতি জারি করে। এই বিবৃতিতে মার্কিন চাপকে ‘Unjustified and unreasonable’ বা ‘অযৌক্তিক এবং অযৌক্তিক’ বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, তার তেল আমদানি সম্পূর্ণরূপে জাতীয় স্বার্থ এবং জ্বালানি সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে করা হয়। সত্যিটা কী? ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যখন ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং ভারতের চিরাচরিত সরবরাহকারীরা ইউরোপের দিকে মুখ ঘোরায়। তখনই ভারত বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনা শুরু করে। মজার বিষয় হল, সেই সময় বিশ্ব জ্বালানি বাজারকে স্থিতিশীল রাখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই ভারতকে এই তেল কেনার জন্য পরোক্ষেভাবে উৎসাহিত করেছিল। যে দেশগুলো আজ ভারতকে জ্ঞান দিচ্ছে, তারা নিজেরাই রাশিয়ার সঙ্গে বিপুল পরিমাণে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার পারমাণবিক শিল্পের জন্য রাশিয়ার ইউরেনিয়াম এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য প্যালাডিয়ামের উপর নির্ভরশীল। ইউরোপীয় ইউনিয়নও রাশিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং অন্যান্য শিল্পপণ্য আমদানি করে চলেছে। এমনকি, ২০২৪ সালে ইউরোপের রুশ LNG আমদানি রেকর্ড ছুঁয়েছে।
কিন্তু ভারতের দৃঢ় কূটনৈতিক জবাব আর এতদিন পরে হলেও দেশের অটল অবস্থান সত্ত্বেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিগুলোকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ এই হুমকির পিছনে রয়েছে ভারতের কিছু গভীর অর্থনৈতিক দুর্বলতা, যা আমেরিকাকে এই ধরনের চাপ প্রয়োগের সুযোগ করে দেয়। একইসঙ্গে, ভূ-রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাও রয়েছে, যা আবার আমেরিকার হাত-পা বেঁধে রাখে। ভারতের সার্বভৌমত্বের লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় বাধা হল তার অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত নির্ভরশীলতা। ভারতের অর্থনৈতিক দুর্বলতা রয়েছে। কিন্তু এটাও তো সত্যি যে চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে পাশে পাওয়ার জন্য আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক প্রয়োজনটা আরও অনেক বেশি। ভারতের এই ‘স্ট্রাটেজিক ইমপর্টেন্স’ তার সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ। ভারতের বর্তমান বিদেশনীতি এই বিশ্বাস বা বাজিটির উপরই দাঁড়িয়ে আছে যে, আমেরিকার পক্ষে ভারতকে ছাড়া চীনের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই শেষ পর্যন্ত তারা ভারতের কৌশলগত সার্বভৌমত্বকে সম্মান করতে বাধ্য হবে। এই টানাপোড়েনের কারণেই ভারত একদিকে যেমন রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে, তেমনই অন্যদিকে আমেরিকার সঙ্গেও কৌশলগত অংশীদারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। এখন দেখার মোদিজি মাথা উঁচু করে দেশের স্বার্থ বজায় রাখেন নাকি আদানি আম্বানিদের স্বার্থ রক্ষার জন্য দেশের স্বার্থকে বিপন্ন করেন।