কলকাতা: সংক্রমণ সামাল দিতে গোটা বঙ্গ যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন ব্যতিক্রমী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবার (Diamond Harbour Model)। কোভিড পজিটিভিটি হার (Covid positivity rate) নেমে এল ৩ শতাংশে। আর তার পরেই ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’-এর সাফল্য (Covid Diamond Harbour) নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট (Facebook post) করলেন এলাকার সাংসদ, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, ‘আরও একবার করে দেখাল ডায়মন্ড হারবার। কলকাতা ও গঙ্গাসাগরের সঙ্গে নৈকট্য থাকা সত্ত্বেও ডায়মন্ড হারবারে পজিটিভিটি হার নেমে এল ৩ শতাংশের নীচে।’ কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ডায়মন্ড হারবারের মানুষ তাঁর পাশে দাঁড়ানোয়, আরও একবার ধন্যবাদ দেন অভিষেক।
কোভিড-যুদ্ধে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের সাফল্য কোথায়, তার জন্য পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। শনিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য দফতর করোনার যে সর্বশেষ বুলেটিন পেশ করেছে, তাতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন আক্রান্ত ১৪ হাজার ৯৩৮ জন৷ করোনায় মারা গিয়েছেন ৩৬ জন৷ মৃত্যু ও সংক্রমণের নিরিখে জেলার মধ্যে শীর্ষে কলকাতা৷ কলকাতায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে৷ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৮৯৩ জন৷ তার পরেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা৷ উত্তর ২৪ পরগনায় একদিনে ৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন৷ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫৬৫ জন৷
আক্রান্তের নিরিখে উত্তর ২৪ পরগনার পরেই রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা৷ একদিনে ১ হাজার ৩৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ ৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন৷ রাজ্যে এই মুহূর্তে সংক্রমণের পজিটিভি হার ২৭.৭৩ শতাংশ৷ সেখানে ডায়মন্ড হারবারে পজিটিভিটি হার ৩ শতাংশের নীচে নেমে আসা, নিঃসন্দেহে কৃতিত্ব দাবি করেছেন।
ঠিক কী করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? বেলাগাম দৈনিক সংক্রমণে রাজ্য প্রশাসন যখন হিমশিম খাচ্ছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তখন নিজের সংসদীয় এলাকা ডায়মন্ড হারবারের জন্য একগুচ্ছ কোভিড বিধির কথা ঘোষণা করেন। তার আগে একটি বৈঠকও করেন।
সারা রাজ্যে যে বিধি জারি রয়েছে, তার সঙ্গে বেশ কিছু নয়া সংযোজন করেন তিনি। রাজ্যের মধ্যে তাঁর কেন্দ্রকে একটা মডেল হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। হাইকোর্ট শর্তসাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি দিলেও, অভিষেক তাঁর কেন্দ্রে ধর্মীয় সমাবেশ বন্ধ করে দেন। রাজনৈতিক সভাতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
অভিষেক ঘোষণা করেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনও ধর্মীয় বা রাজনৈতিক সমাবেশ হবে না ডায়মন্ড হারবারে। কেউ বাড়িতে চাইলে পুজো করতেই পারেন। তবে, যে পুজোয় ১০০-র বেশি মানুষের সমাবেশ হতে পারে, সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না।
একটার জায়গায় তাঁর সংসদীয় কেন্দ্রের লোকজনকে রাস্তায় বেরোলে ডবল মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করেন। অভিষেক জানিয়েছিলেন, বাজার এলাকায় যেতে গেলে দু’টি মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ক্রেতা বা বিক্রেতা উভয়ের জন্যই এই নিয়ম প্রযোজ্য। লোকজনকে সতর্ক করতে মাইকিং করার কথাও বলেন।
জেলা বা মহকুমা স্তরে রাজ্যের তরফে আগেই কন্ট্রোল রুম তৈরি হয়েছে। অভিষেক তাঁর কেন্দ্রের প্রতিটি ওয়ার্ড ও পঞ্চায়েত এলাকায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলার নির্দেশ দেন। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ জানান, ওই সব ওয়ার্ডে বা পঞ্চায়েত এলাকায় কারও মধ্যে উপসর্গ দেখা দিলে, কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে পারবেন। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।
এ ছাড়াও ‘ডক্টর অন হুইলস’ চালু করেন। চিকিৎসকদের একটি টিম ডায়মন্ড হারবার এলাকায় চষে বেড়ান। কেউ অসুস্থ হলে, তাঁকে সাহায্য করাই উদ্দেশ্য। যাতে অসুস্থরা সহজেই চিকিৎসকের কাছে পৌঁছতে পারেন। ডাক্তার দেখিয়ে নিতে পারেন।
আরও পড়ুন: Shaoli Mitra Passed away: বাংলা নাট্যজগতে নক্ষত্রপতন, প্রয়াত শাঁওলি মিত্র
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও করেন। বাড়ি বাড়ি অ্যান্টিজেন টেস্ট। যে এলাকায় পজিটিভিটি রেট বেশি, সেখানে আক্রান্তরা হোম আইসোলেশনে থাকতে পারবে না। অভিষেকের নির্দেশ ছিল, এক বাড়িতে ৫ সদস্য থাকলে, হোম আইসোলেশন হতে পারে না। সে ক্ষেত্রে আক্রান্তকে আইসোলেশন সেন্টারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। বাড়ির অন্যান্য সদস্য বিশেষ করে ছোটদের, যাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি, তাদের মধ্যে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়, তার জন্য এই পদক্ষেপ।
২০ জানুয়ারি ফের পর্যালোচনা বৈঠকে বসবেন বলে অভিষেক ঘোষণা করেছিলেন। এ-ও জানিয়েছিলেন, তাঁর লক্ষ্য পজিটিভিটি হার ৩ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনা। নির্ধারিত বৈঠকের আগেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ডায়মন্ড হারবার।