কলকাতা: সেই কবে অতুলপ্রসাদ সেন লিখে গিয়েছিলেন, ‘নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান। বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান।’ বৈচিত্রের মধ্যে এই ঐক্যের নামই হল ভারতবর্ষ (India)। এদেশের নানা প্রান্তে নানা ভাষার সমাহার। এক এক ভাষার এক এক রকম চলন-বলন। তার মধ্যেও রয়েছে একটা ঐক্যের বার্তা। অনেক রাজ্যের মানুষ হিন্দিতে স্বচ্ছন্দ, কেউ তেলুগুতে, কেউ মারাঠিতে, কেউ গুজরাতিতে, আবার কেউ বাংলা ভাষায় স্বচ্ছন্দ। এটাই ভারতের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য। তবে ভারতের বাইরেও এমন কোনও কোনও দেশ আছে, যেখানে হিন্দিই সরকারি ভাষা। সেখানকার বাসিন্দাদের অধিকাংশই হিন্দিতেই কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আসুন জেনে নিই সেই দেশের কথা।
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের উপর ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র ফিজ়ি। আনুষ্ঠানিক ভাবে এই দেশ ওশিয়ানিয়া মহাদেশের অন্তর্গত। কিন্তু দেশটিতে ভারতের ছোঁয়া রয়েছে। ফিজ়িতে সরকারি ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে হিন্দি। বর্তমানে এই দেশে তিনটি সরকারি ভাষা রয়েছে। ইংরেজি, ফিজ়িয়ান এবং ফিজ়ি হিন্দি। ২০২১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, ফিজ়ি দ্বীপের মোট জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৯ লক্ষ ২৫ হাজার। তার মধ্যে ৩৮ শতাংশই হিন্দিভাষী। দেশের অধিকাংশ মানুষ হিন্দিতে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ। ফিজ়িতে প্রচুর সংখ্যক মানুষ স্থায়ী ভাবে বাস করেন যাঁরা ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তবে এঁরা কেউ কিন্তু প্রবাসী ভারতীয় নন। ফিজ়ির স্থায়ী নাগরিকত্ব রয়েছে তাঁদের। ১৯৫৬ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ভারতীয় বংশোদ্ভূতেরাই ফিজ়িতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন। পরে অবশ্য তাঁদের সংখ্যা কিছুটা কমে। তবে বর্তমানেও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপটি ভারতময়’।
ফিজ়িতে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বেশির ভাগই আওয়াধি এবং ভোজপুরি সংস্কৃতির বাহক। অতীতে মূলত কাজের সন্ধানেই ফিজ়ি দ্বীপে পাড়ি দিতেন ভারতীয়েরা। লখনউ, কানপুর, ফৈজাবাদ, গোরক্ষপুর, গাজিপুর, বালিয়া, সুলতানপুর, শাহবাদ, সিওয়ান থেকে দলে দলে শ্রমিকেরা কাজের সন্ধানে যেতেন সে দেশে। তাঁদের বংশধরেরাই এখন ফিজ়ির জনসংখ্যার একটা বড় অংশ। যদিও দক্ষিণ ভারতের তেলুগু এবং তামিলভাষী কিছু মানুষও ফিজ়িতে আছেন। এ ছাড়া আছেন আফগানিস্তান, নেপালের আদি বাসিন্দারা। ১৮৭৯ থেকে ১৯১৬ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বহু মানুষ আখের বাগানে কাজ করতে ফিজ়িতে চলে গিয়েছিলেন। তাঁরাই দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন।
ফিজ়ির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও ভারতীয়েরা সক্রিয়। দ্বীপটির প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রীর নাম মহেন্দ্র চৌধরি। ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন তিনি।