কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: ফের মোদির টুইস্ট। রূপবদল অশোক স্তম্ভের সিংহের। দেশবাসী বলছেন, মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। সোমবার পুজোআচ্চার মাধ্যমে, রাজধানীর নতুন সংসদ ভবনের মাথায় মুকুটের মতো বসানো জাতীয় স্মারক অশোকস্তম্ভের ঘটা করে উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তা নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবল সমালোচনার ঝড় উঠলেও পরে দেখা গেল ভারতকে ‘রূপান্তরকামী’ তৈরির চেষ্টায় সম্রাট অশোকের স্মারকেও রূপান্তর ঘটিয়ে দিয়েছে মোদি সরকার। যে অশোক স্তম্ভের চারটি সিংহই ধৈর্য, সহনশক্তি, শান্তি ও স্থিতধী রাজধর্মের প্রতীক। সেটাই এখানে হিংস্রমুখী, ক্রোধী, প্রতিহিংসার দৃষ্টিতে শোভা পাচ্ছে বলে অভিযোগের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। জাতীয় প্রতীকের প্রতি এটা ঘোরতর অপমান বলে ঝড় উঠেছে।
আমরা সবাই জানি, সম্রাট অশোক রাজ্যদখলের জন্য একের পর এক যুদ্ধ করেছিলেন। প্রায় গোটা ভারতকে পদানত করেছিলেন রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধে। শুধু তাই নয়, সিংহাসন দখল করতেও তিনি পরিবারের সদস্যদের হত্যা করতে দ্বিধা করেননি। কিন্তু, কলিঙ্গ যুদ্ধের সময় নিহত সেনার রক্তে নদীর রং লাল হয়ে যাওয়া দেখে তাঁর মধ্যেও আকস্মিক পরিবর্তন ঘটে। চণ্ডাশোক থেকে তিনি রূপান্তরিত হন ধর্মাশোকে। বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে পৃথিবীব্যাপী শান্তি-সম্প্রীতির প্রচার করেন। সারনাথে তাঁরই আমলে তৈরি হয় একটি স্তম্ভ। যা পরবর্তীকালে অশোকস্তম্ভ নামে বিখ্যাত হয়। ১৯৫০ সালে এই স্তম্ভকেই জাতীয় স্মারক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। স্তম্ভে রয়েছে একটি চারটি সিংহ। প্রতিটি একে অপরের দিকে পিঠ করা। তার নীচে রয়েছে ধর্মচক্র। একটি ষাঁড় ও ঘোড়ার খোদিত মূর্তি। মোদির জমানায় সেই অশোকস্তম্ভের সিংহের মুখ ও অবয়বে আমূল পরিবর্তন ঘটায় নিন্দার বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
কী কী বদল ঘটেছে?
প্রকৃত অশোকস্তম্ভে সিংহের মাথাটি তার দেহের তুলনায় বড়। যেমনটি সাধারণত হয়ে থাকে। কিন্তু, নতুন মূর্তিটির সিংহগুলির মাথা অত্যন্ত ছোট। দেখে মনে হবে, চিতার মাথার আকারে তৈরি করা মূর্তি। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই রূপান্তরিত অশোকস্তম্ভ কি কারও নির্দেশে হয়েছে! নাকি অপদার্থ শিল্পীদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে কয়েক কোটি টাকা উলুখাগড়ার বনে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে!
বিষয়টি এখানেই থেমে নেই। নেট দুনিয়ায় দাবানলের মতো নতুন এই মূর্তির ছবি ছড়িয়ে পড়েছে এবং মোদি ও তাঁর সরকারের মুণ্ডপাত, বংশ লোপাত করা চলছে। যেমন, তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য জহর সরকার মোদি সরকারকে তুলোধনা করে টুইটে লিখেছেন, এই অশোকস্তম্ভে মোদি সরকার দেশকে অপমানিত করেছে। সিংহের আকৃতি ও অবয়ব ঠিক হয়নি। এমনকী সিংহের মুখও অনেক বেশি হিংস্র ও আগ্রাসী। জহর সরকার এই সিংহকে মোদির প্রতিভূ বলেও তোপ দেগেছেন। টুইটে তিনি একে লজ্জা বলে উল্লেখ করে শীঘ্রই তা বদলে ফেলার দাবিও তুলেছেন। দলের আরেক সাংসদ মহুয়া মৈত্র শুধু আসল ও নতুনের ছবি দুটি পাশাপাশি দিয়ে টুইট করেছেন, কিছুই মন্তব্য করেননি।
টুইটের দেওয়াল আরও মন্তব্যে রাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন কেউ লিখেছেন, প্রাচীন ভারত ছিল এই সিংহের মতোই শক্তিশালী, আত্মবিশ্বাসী অথচ সহনশীল। আর আজকের আধুনিক ভারত হল— ক্রোধী, অনিশ্চিত এবং প্রতিহিংসা পরায়ণ। বিশিষ্টদের মধ্যে প্রশান্ত ভূষণ লিখেছেন, গান্ধী থেকে গডসে, জাতীয় স্মারকের সিংহ থেকে সংসদ ভবনে বসানো সিংহের ক্রোধ ও দাঁত বের করা হিংসার বহিঃপ্রকাশই আমাদের মোদির আধুনিক ভারত। প্রশান্ত ভূষণের টুইটের জবাবে আরও একজন মশকরা করে লিখেছেন, আগের সিংহের কেশরগুলি দেখুন, কীরকম ব্যারিস্টারের উইগে মতো। আর এটার দেখুন, দেখে মনে হবে যেন নাগা সাধুর জটা! কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, নরেন্দ্র মোদিজি আপনি দয়া করে সিংহের মুখটা দেখুন! এটা কী সারনাথের মূর্তি, নাকি গুজরাতের গির জঙ্গলের সিংহের বিকৃত রূপ?