বাহুবলি নে কাটপ্পা কো কিঁউ মারা? আমরা এখন জানি৷ এটা আর কোনও সিকরেট নয়৷ যারা যারা প্রশ্ন করেছিল, তারা প্রত্যেকেই এখন জানে যে বাহুবলি নে কটপ্পা কো কিঁউ মারা? কিন্তু ছোটা মোটা ভাই, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজেপির চাণক্য অমিত শাহ, কিঁউ এক সাল বাদ বংগাল আয়ে? এর উত্তর খোদ শাহজীর কাছেই নেই, তো অন্য কেউ আর এ প্রশ্নের উত্তর দেবেই বা কি করে? কিন্তু আপাতত সমস্যা তো ছোটা মোটা ভাই এর নয়৷ উত্তরপ্রদেশে জয়, গোয়া, মণিপুর, উত্তরাখন্ডে জয়, পঞ্জাবে কংগ্রেসের সেম সাইড গোল খেয়ে আপের উত্থান, সবটাই তো বিজেপির নির্বাচনী পাটিগণিতকে আরও শক্ত পোক্ত করবে৷ অতএব আপাতত সমস্যা তো বাংলার বিজেপির৷ সে বাংলা বিজেপির আবার কতগুলো যে ভাগ, কতগুলো যে গোষ্ঠী, তা গুণে শেষ করা যাবে না৷ নকশালরাও লজ্জা পাবে। কেবল কী ভাগ, কতরকমের কেমিস্ট্রি৷ এর সঙ্গে ওর পটে তো উনি এনার মুখ দেখেন না৷ ইনি সঙ্গে থাকলে উনি থাকেন না৷ নানান রকম ইকুয়েশন চলতেই থাকে৷ সমস্যা সেই বাংলার বিজেপির।
অথচ এমনটা হওয়ার কথা নয় কিন্তু৷ কারণ এখনও ৭০ জন বিধায়ক, সাংসদ ১৭ জন, অর্জুন সিং খসে গেলেও ১৬ জন তো থাকবেই৷ কেন্দ্রে রাজ্যপাট, রাজ্যে রাজভবনের মতো বড় অফিস৷ মাথার ওপরে একজন জ্যাঠামশায় ধনখড় সাহেব৷ ফান্ডের অভাব নেই, কিন্তু দেখলেই বোঝা যায় ১০৮টা রোগে কাবু বঙ্গাল বিজেপি। তো শোনা গেল, ছোটা মোটাভাই অমিত শাহ নাকি এই অসুখের দাওয়াই দিতে এসেছিলেন৷ তিনি বিভিন্ন রাজ্যে শুয়ে পড়া সংগঠনকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন৷ বাঙ্গাল কিস খেত কা মুলি হ্যায়? তিনি নাকি এসেছিলেন সেই দাওয়াই দিতে। কিন্তু ঠিক ১ বছর পরেই কেন?
অসুখ তো আজকের নয়৷ অনেক পুরনো৷ আদি নব্যর লড়াই তো সেই নির্বাচনের সময় থেকেই৷ আদি হইতে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, নাকি নব হইতেই করিতে হইবে মুখ্যমন্ত্রী, তা নিয়ে বখেড়া কি কম হয়েছে নাকি? দিলু ঘোষের ভানিটি ভ্যান আমার কেন নাই? এ প্রশ্নও তো উঠেছিল। অসুখ অনেক পুরনো৷ কিন্তু অমিত শাহ দাওয়াই দিতে এলেন পাঁজি পুথি মেনে ঠিক এক বছর পরে। আসলে অনেক বড় স্বপ্ন, আর স্বপ্নভঙ্গের পরে বিরাট বড় ধাক্কা, অবকি বার ২০০ পার ইত্যাদি বলার পরে একটু তো লজ্জা শরম থাকবে, নাকি? সব মিলিয়ে সেই লজা শরম কাটিয়ে উঠে ওই ৫ তারিখেই বঙ্গাল দওরাতে এসে অমিতজি আসলে বিজেপিকে ২০২৪-এর জন্য আবার এক সম্মুখ লড়াইয়ের জন্য তৈরি করার চেষ্টা শুরু করলেন। আমরা সাংবাদিকরা খোঁজ নিচ্ছিলাম, সাভারকার, হেডগাওয়ার বা গুরু গোলওয়ালকরের কোন কোটেশন ক’বার ব্যবহার করলেন? আরএসএসের নীতি, আদর্শের কোন কথা বললেন? আদবানি, যোশী, মোদিজির কোনও সাংগঠনিক উদাহরণ এনে হাজির করলেন? হ্যাঁ এগুলো জানার চেষ্টা করছিলাম, মানে দাওয়াইটা কী? কোন পথে বঙ্গালে ফুটবে কদম ফুল, থুড়ি পদ্ম ফুল? শেষমেষ যা জানতে পারলাম তাতে বাক্যহারা হওয়ার মতন অবস্থা৷ বুঝুমভোলা হয়ে গিয়েছিও বলা চলে।
অমিত শাহ বঙ্গ বিজেপির নব্য, আদি রত্ন, মণি, মাণিক্যদের বলেছেন, মমতার কাছ থেকে শিখুন৷ হ্যাঁ উনি বলেছেন, সারাক্ষণ ৩৬৫ ৩৬৫ বলে চিৎকার করলেই হবে? লড়তে হবে পথে নেমে৷ আর সেই লড়াইটা শিখতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। পাশেই বসেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, সদ্য হারিয়েছেন কাঁথির রাজ্যপাট৷ কিচ্ছুটি আর হাতে নেই, সমবায় থেকে মিউনিসিপালিটি, আহারে সাজানো বাগান এক্কেরে শুকিয়ে গিয়েছে৷ সে গিয়েছে গিয়েছে৷ এখন কাটা ঘায়ের ওপর নুন ছড়ানো? যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাঝপথে ডোবানোর জন্য এত প্রচেষ্টা, বাংলার দুষ্টু লোকজনেরা যাকে বিশ্বাসঘাতকতা বলছে, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে নিতে হবে লড়াইয়ের পাঠ। ভাবুন একবার, চোখ বন্ধ করে ছবিটা ভাবুন, নবান্নের ছাদ, হাতে ছড়ি নিয়ে দিদিমণি দাঁড়িয়ে, তলায় মেঝেতে বসে শুভেন্দু, দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত, অমিতাভ, অভিনব পাঠদান চলছে, কী করে লড়তে হয়। কী করে রাস্তা অবরোধ করতে হয়, কী করে মানুষ জড়ো করে মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়। কিন্তু এই কথাটা অমিত শাহজি কাকে বললেন? তেনার লগে লগে থাকা নব্য বিজেপি কাঁথির খোকাবাবুকে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যাঁর রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছে? মানে তিনিই তো আপাতত বিরোধী দলনেতা, বিজেপির চিফ মিনিস্টার ইন ওয়েটিং৷ তো তিনি এতদিন ধরে ঘর করেও শিখতে পারেননি? অমিত শাহজি কি খোকাবাবুকে অমনোযোগী ছাত্র বললেন?
আসল সমস্যাটা অন্য জায়গাতে৷ কিছু জিনিস না শেখানো যায় না, গান তো শেখানোই যায়৷ কিন্তু শ্যামল, মান্না, মানবেন্দ্রর গায়কী? শেখানো যায়? রবীন্দ্র সঙ্গীতের তো স্বরলিপি আছে, স্বর মেলালেই সুর আসবে, কিন্তু তা ওই তখন পাতায় পাতায় বিন্দু বিন্দু ঝরে জল, হয়ে উঠবে? মানে দেবব্রত বিশ্বাস হবে? হয় না স্যর, ওটা একটা ব্যাপার, সব্বাই চেষ্টা করলে গোধরার নায়ক হতে পারে না৷ চেষ্টা করলেই এক তড়িপার নেতা হওয়া যায় না৷ শত চেষ্টা করলেও মমতা হওয়া যাবে না৷ কাজেই আপনার ওই মূল্যবান উপদেশ নিয়ে গিয়ে তাকে রেখে দিন৷ ওসব খোকাবাবু, দিলীপ ঘোষদের কাজ নয়।
অমিত শাহ কোন ওঁচাদের পাল্লায় পড়েছেন তা বুঝলেন সেদিন রাতে, মহারাজের বাড়িতে নেমতন্ন ছিল৷ হ্যাঁ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক, ওনার ছেলে আবার ক্রিকেট বোর্ডের সেক্রেটারি, একটা আনুষ্ঠানিক নেমতন্ন। লগে লগে চলে গেলেন তেনারাও৷ অনাহূতের দল, একটু সেলফি আর মহারাজের সঙ্গলাভ৷ ছবি ছাপা হল৷ মহারাজ বলে কথা, ঘাসফুস মানে নিরামিষ আহার হলেও রাজকীয় ব্যবস্থা। সাংবাদিকরা ছিলেন, ছবি উঠল৷ সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে গেল৷ ঠিক এক বছর আগে, দরিদ্র আদিবাসীর বাড়িতে ছোটা মোটা ভাইয়ের ভোজন, বাউলের বাড়িতে শাক দিয়ে রুটি খাবার সেই অভূতপূর্ব দৃশ্য। ভোটের আগে মাটিতে বসে, শালপাতায় শাকান্ন, ভোটের পরে মহারাজের বাড়িতে রাজকীয় ডিনার৷ কোনওদিন পারবেন এরকম একটা রাজকীয় ডিনারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বসাতে৷ দাঁড়িয়ে এক চামচ দই খেয়ে চলে আসবেন, হলফ করে বলতে পারি।
এরপর দু’টো বৈঠক, একটা হল বিজেপি রাজ্য নেতা ইত্যাদিদের সঙ্গে, অন্যটা হল যাদের হাতে থাকবে বঙ্গাল, যাঁরা আগামী দিনে বাংলায় বিজেপির হাল ধরবেন তাদের সঙ্গে বৈঠক। তো পরেরটাতে সুকান্ত, অমিতাভ, শুভেন্দু ছিলেন৷ রাখা হয়নি দিলীপ ঘোষকে৷ মানে দিলীপজী অস্তাচলে৷ সক্কালবেলায় রোজ জগিং করে, বুকনি দিয়েও লাভ হল না, এবং ডাকাই হয়নি লকেট চট্টোপাধ্যায়কে৷ মানে অনেকে যেমনটা ভাবছিলেন, লকেট এই বাংলাতেও গুরুত্ব বাড়াবেন, তা কিন্তু হল না৷ তিনি এখনও বঙ্গ বিজেপির কোর টিমের বাইরেই থেকে গেলেন। মজার কথা হল, যাঁরা থেকে গেলেন, তাদের মধ্যে মানুষের সামনে গিয়ে দাঁড়ানো, কথা বলা, নেতৃত্ব দেবার সামান্য ক্ষমতা আছে শুভেন্দু অধিকারীর৷ বাকিরা শিয়ালদহ হাওড়ার প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকলে মানুষ চিনতে পারবে না। ইতি সমাপ্ত ছোটা মোটা ভাই-এর বঙ্গাল কা দওরা? না না আর একটু বাকি আছে, ওই যে বললাম, বিজেপি নেতা কর্মী ইত্যাদিদের সঙ্গে বসেছিলেন অমিত শাহ, সেই ইত্যাদিদের মধ্যেই ছিলেন রুদ্রনীল ঘোষ, ইদানিং মোদিজিকে দেখে দাড়ি রাখছেন৷ তো তিনি হাত তুলিলেন, সরদার মুঝে ভি কুছ বতানা হ্যায়৷ আজ্ঞে হুজুর বিরাট সমস্যা, অমিত শাহজি নিশ্চই বলিয়াছিলেন, বলিয়া ফেলুন, বঙ্গাল বিজেপির সমস্যা শোনার জন্যই তো ছুটে এলাম। রূদ্রনীল বলিলেন, হুজুর দু বছর ইস্তক আমার কোনও কাজ নাই, আমি বেকার, আমাকে অভিনয় করিতে দেওয়াই হইতেছে না, আমার জন্য যে পকেটমার, ড্রাইভার, চোর, উচক্কার রোলগুলো বরাদ্দ থাকতো৷ মেয়ে দেখলেই সিটি দেওয়ার যে লোফারের রোলে আমি ছাড়া কোনও গতি ছিল না৷ সেই আমি বেকার বসে আছি৷ ওধারে রাবণ কিসমিস আর টনিক খাচ্ছে, হুজুর রাজ্যের নেত্রী ও তৃণমূল দলের জন্যই আমার এই অবস্থা৷ তাদের নির্দেশেই পরিচালকরা পকেটমার, বাস কনডাকটার, ঠেকবাজ লোফারের চরিত্রই বাদ দিয়ে স্ক্রিপ্ট লিখছে৷ দয়া করে মোদিজিকে বলুন এর বিহিত করতে৷ এতবড় ফেলাট আমার, এত বড় গাড়ি, দাড়ি, এসব মেইনট্যানান্স এও তো খরচ লাগে তাই না? মোটা ভাই শুনিলেন৷ মন দিয়া শুনিলেন, বুঝিলেন, শেষ পর্যন্ত বুঝিতে পারিলেন, বাংলার বিজেপির সবথেকে বড় সমস্যা হল, রুদ্রনীল বেকার, তাঁকে কেউ অভিনয় করতে ডাকছে না। এত্তবড় সমস্যা শোনার পর সেই যে অমিত শাহ ফিরে গিয়েছেন, এখনও মুখ খোলেননি।