Placeholder canvas
কলকাতা সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫ |
K:T:V Clock
চতুর্থ স্তম্ভ: কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  • | Edited By:
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১০:১৫:৫৪ এম
  • / ৭১২ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • • | Edited By:

ঝরণার জল ছিল, গাছে ফল ছিল, গুহা ছিল, গাছের কোটর ছিল, শিকারের জন্য পাথর ছিল৷  ঘসে মেজে নিয়ে শিকারে যেত সব্বাই৷ শিকার হলে মাংস, না হলে গাছের ফল৷ প্রত্যেকের খাবার জুটত, কিংবা কারোরই জুটত না। এরই মধ্যে আগুন আবিস্কার হল, সবাই সেই কায়দা রপ্ত করতে পারলো না৷ যার ঘরে আগুন আছে, যে জ্বালাতে পারে আগুন, সে হল নেতা। যে ঘসে মেজে পাথরকে করে নিল আরও উন্নত তীক্ষ্ণ অস্ত্র, তার কদর বেড়ে গেল৷ শিকারে সে আগে, মাংসের ভাগেও সেই আগে, তারপর মানুষ শিখে গেলো পশুপালন৷ প্যাস্টোরাল এজ, যে গোষ্ঠীর যত বেশি পশু সেই গোষ্ঠী তত বেশি সবল৷ তাদের গোষ্ঠিপতিরাও হয়ে উঠল কেউকেটা, তার আলাদা ঘর হল, তার পশু আলাদা হল, পৃথিবীতে সম্পদ ছিল সব্বার, এখন তা ক্রমশঃ কয়েকজনের হাতে এসে জড়ো হতে থাকল, গোষ্ঠীপতি হয়ে উঠল জমিদার, নবাব, সুলতান।

ভালো ঘোড়া, ইস্পাতের অস্ত্র, পরে কামান আর পোষা সৈন্যবাহিনী, রাজতন্ত্রের ভিত্তি। সম্পদ কুক্ষিগত করেই শ্রেণি তৈরি হল৷ কেউ প্রাচুর্যের মধ্যে বেড়ে উঠল, কেউ অভাবে। তার পর ইতিহাসে যন্ত্র এল৷ খাজনা আদায়ের থেকে কারখানা থেকে, ব্যবসা থেকে লাভ করা অনেক সোজা আর ভদ্রস্থ, কাজেই শিল্পবিপ্লব জন্ম দিল পুঁজির, পুঁজিপতির আর শ্রমিকের। তাদের শ্রম হল মালিকের লাভ। কেউ প্রচুর পেল, কেউ খেল৷ আর কেউ কেউ কিচ্ছু পেল না, খাবারও না। এটাই তো মানব সভ্যতার ইতিহাস।

কিন্তু ইতিহাসে তো একটা স্বর থাকে না, অন্য স্বরও উঠে এল৷ অনেকেই বলল কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না। অতএব দুনিয়া জোড়া নানান প্যাঁচ পয়জার দিয়ে, সেই না খেতে পাওয়া মানুষের ওপর, খেতে পাওয়া মানুষের প্রভুত্ব কায়েম হল। তার জন্য নানান অছিলা, নানান যুক্তি, নানান তিকড়মবাজি। মাঝে মধ্যেই দরদি সেজে এল কিছু নেতা, যারা নিজেদের আখের গুছিয়ে কেটে পড়ল৷ মধ্যিখান থেকে নানান শব্দ জন্ম নিল, বিপ্লব, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি ইত্যাদি। এরই মধ্যেই মাঝে মধ্যেই শুনবেন, জিডিপির গপ্পো। কী সেটা?

দেশের জিডিপি বাড়ছে, কমছে। আমরা বলছি, নেতারা বলছে, মিডিয়া বলছে, অর্থনীতিবিদরা বলছেন। আদতে সেটা কী? জিডিপি বাড়লে কি সত্যিই সেই না খেতে পাওয়ার দল, হ্যাভ নটসদের আদৌ কিছু এসে যায়? সে আলোচনার আগে আসুন জিডিপিটা কী সেটা আর একবার বুঝে নিই৷ দেশের তাবত সম্পদ বা পরিষেবা, মানে জল, জঙ্গল, জমি, কারখানা, উৎপাদিত দ্রব্য, অন্যদিকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি পরিষেবার তো একটা মূল্য আছে৷ সে সবকে যদি যোগ দিয়ে একটা সংখ্যা বের করা যায়, সেটাই খুব সোজা বাংলায় মোট সম্পদ, গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট, আর তাকে যদি জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে নিই, তাহলে পাব পার ক্যাপিটা ওয়েলথ, মাথা পিছু সম্পদ।

কিন্তু গ্যাঁড়াকলটা অন্য জায়গায়৷ সম্পদ মানে? ৫০% মানুষের কুঁড়েঘর আর আম্বানির ২ বিলিয়ন ডলারের অ্যান্টিলার হিসেব একসঙ্গেই হবে, আপনার ১৭ বছরের পুরনো সাইকেল, আর গৌতম আদানির প্রাইভেট এরোপ্লেনের হিসেব, একসঙ্গেই করা হবে। দেশের গ্রস ইনকাম, মোট আয়েরও ৫০% ই যে কয়েকটা পরিবারের, হিসেবের সময় সেটাও দেশের আয়, তারপর তাকে ভাগ করা হবে মোট জনসংখ্যা দিয়ে, যেন সে এরোপ্লেনে বা তাদের প্রাসাদের ওপর আম জনতারও অধিকার আছে, এতটাই মিথ্যে সে হিসেব।

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ: সংসদ…সংসদীয় গণতন্ত্র

কিন্তু মজার হল, সেই হিসেবেও দেশের ২৫% মানুষ হত দরিদ্র। এ ছবি কি ভারতবর্ষের? না, এ ছবি গোটা পৃথিবীর। ওয়ার্লড ইনইকুয়ালিটি রিপোর্ট ২০২১ প্রকাশিত হল, ৭ ডিসেম্বর ২০২১। লুকাশ চ্যান্সেল আর নোবেলজয়ী থমাস পিকেটির নেতৃত্বে, এক টিম এই রিপোর্ট তৈরি করেছেন, কোনও দেশের কেবল আয় নয়, এই হিসেবে আছে বণ্টনের হিসেব। সেই হিসেব বলছে, দুনিয়ার ৫০% মানুষ, দুনিয়ার মাত্র ২% সম্পদের মালিক, আর দুনিয়ার সম্পদের ৭৬% আছে মাত্র ১০% মানুষের হাতে। মানে একশো টাকার ৭৬ টাকার ভাগ বাটোয়ারা হয়েছে ১০ জন মানুষের মধ্যে, আর ৫০ জন মানুষ পেয়েছে ২ টাকা। এবং এই অসাম্য প্রতি বছর বাড়ছে, ফল?

যাদের হাতে অর্থ, তাদের হাতে সরকার, তাদের হাতে পুলিশ প্রশাসন, তাদেরই হাতে বিচার ব্যবস্থা, তাদেরই হাতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন ৷ আর এসবের ফলে তাদের সম্পদ আরও বাড়ছে, তাদের ভাণ্ডার উপচে পড়ছে, বিনোদনের দিকে, সিনেমা, বিজ্ঞাপনের দিকে তাকিয়ে দেখুন, দ্যাখো আমি বাড়ছি মামি, লম্বা হওয়াটা তাদের সমস্যা, পেট ভরা নয়, টু মিনিটস ন্যুডল, ঝটপট খাবার, হুস করে ছুটে যাওয়া বাইক, কিম্বা তুলতুলে নরম পুতুল।
 
অন্যদিকে  আরও অভাব, আরও দারিদ্র, আরও পিছিয়ে পড়া। তারা সংগঠিত হতে চাইলেই আছে নয়া কানুন, আছে পুলিশ, প্রশাসন, জেল, ঝুপ করে উবে যাওয়া। এই রিপোর্টে ভারতের কিছু তথ্যও আছে, গোটা পৃথিবীতে অসাম্যের, বৈষম্যের সবচেয়ে বড় ছবিটা তো আমাদের মহান ভারতবর্ষের। ১০০ জন গবেষক, চার বছরের পরিশ্রম যে রিপোর্ট এনে হাজির করলো, তাতে মেরা ভারত মহানকে সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের দেশ বলা হয়েছে, ১% মানুষ, কেবল ১% মানুষের হাতে রয়েছে দেশের ২১.৭% জাতীয় আয়। ১০% এর হাতে রয়েছে ৫৭% সম্পদ। আর ৫০% মানুষের কাছে রয়েছে দেশের ১৩% সম্পদ। এক্কেবারে তলার ৫০% মানুষের গড় রোজগার বছরে ৫৩৬১০ টাকা, মানে? দিনে ১৪৭ টাকার কম। আর ১০% মানুষের গড় রোজগার ১১লক্ষ ৬৬ হাজার ৫২০, মানে দিনে ৩১৪১ টাকা, অর্থাৎ ২১ গুণ বেশি রোজগার। ফ্রান্স এ এই বৈষম্য ৭ গুণ, জার্মানিতে ১০ গুণ। ১৯৮০ র আগে ঐ ১০ শতাংশের কাছে ছিল ৩৫-৪০% সম্পদ, উদার অর্থনীতি, বিশ্বায়নের ধাক্কায় আজ ১০% এর কাছে রয়েছে ৫৭% সম্পদ, মানে উদার অর্থনীতি, বিশ্বায়ন আমাদের সামনে বিরাট সুযোগ এনে দেবে, অর্থনীতি উন্নত হবে, বিকাশ আসবে ইত্যাদি ভাট কথা বলে, আসলে বড়লোকেদের ঝোলা ভর্তি করা হয়েছে, গরীবরা আরও গরীব হয়েছে, এটাই বাস্তব। কিভাবে এই উন্নয়নের গল্পটা আসে? কারা আনে? এটা বোঝাটা জরুরি। তলায় যা দেখছেন, মানে নির্বাচিত প্রতিনিধি, নির্বাচিত সরকার, এঁরা হলেন কাঠপুতুল, এঁদের টিকি বাঁধা ঐ ১০% এর হাতে, যাঁরা এঁদের নির্বাচিত হবার জন্য কোটি কোটি টাকা ডোনেশন দেন, ঘুস দেন, বিভিন্ন সুযোগ দেন। এদের মধ্যে কোনও কোনও নির্বাচিত সরকার, এক্কেবারে গরীবদের জন্য চুঁইয়ে পড়া কিছু সুযোগ, কিছু সাহায্য এনে হাজির করেন। বাকিটা ঐ তেনাদেরই জন্য, ওনারাই আমাদের আসল প্রভু। আপনার রাজ্যে শিল্পায়ন হবে, বিনি পয়সা বা কম পয়সায় জমি চাই, খনিজ সম্পদ আছে, উৎখাত হতে হবে সেখানকার মানুষজনদের, বড়জোর ভাল ক্ষতিপূরণ, ভাল ৮ লেনের ১২ লেনের চওড়া রাস্তা হবে, বিশাল হাসপাতাল হবে, বিমানবন্দর হবে, বিশাল জাহাজ বন্দর হবে, ফাইবার অপটিক্স আসবে। বিশাল, কোটি কোটি, লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে, সেই ৫০% এর জন্য ছিটেফোঁটা, আর ১০% এর জন্য অনেক অনেক, ৫০% মানুষ আসলে এই উন্নয়ন যজ্ঞে সস্তা শ্রমের যোগান। এরই নাম তো উন্নয়ন, সোজা বাংলায় বিকাশ।
 

নতুন করে পার্লামেন্ট ভবন হবে, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হবে, প্রধানমন্ত্রীর এরোপ্লেন হবে, বড় বড় আধুনিক যুদ্ধ জাহাজ হবে, আবার লক্ষ কোটি টাকার বাজেট, দেশের উন্নয়ন আর প্রতিরক্ষার জন্য, বরাত পাবে টাটা, আম্বানি, আদানি। আবার সেই ১% বা ১০% ফেঁপে উঠবে, হ্যাঁ তারা ৯০ পেলে কি ৮০ পেলে দেশের ৫০/৬০/৭০% মানুষ পাবে বাকি ১০/২০%। মানে আরও বৈষম্য, আরও দারিদ্র।
ব্রেটল্ড ব্রেখট, সেই কবে লিখেছিলেন কবিতাটা

আমাদের জামা যখন ছিঁড়তে থাকে
ছিঁড়তে ছিঁড়তে ছিঁড়তে যখন ফর্দাফাই
তুমি তখন দৌড়ে এসে হে নটবর বলো
যা হয় কিছু করাই চাই
সব রকমের চাই প্রতিকার চাই
#
আমরা যখন ক্ষিদের জ্বালায়
ককিয়ে কেঁদে আকাশ ফাটাই
তুমি তখন দৌড়ে এসে হে নটবর বলো
যা হয় কিছু করাই চাই
সব রকমের চাই সমাধান চাই
#
আস্ত জামা চাই আমাদের
চাই না একটা ছোট্ট তালি
রুটিও চাই গরম আস্তো
চাই না ছোট্ট টুকরো ফালি
আর আমাদের পোষাচ্ছে না দিনমজুরীর ভরণপোষণ
চাই আমাদের গোটা কারখানাটাই
কয়লাখনি চাই রাষ্ট্র শাসন
মোদ্দা, এ সব কিছুই আমাদের চাই
তোমরা শালা দিচ্ছো কি ছাই! 

যাদের শ্রমে চলে দুনিয়া, যাদের ঘামে রক্তে ফলে ফসল, যাদের পেশি আর মগজমারিতে ঘোরে ইঞ্জিনের চাকা, তাদের প্রাপ্য তাদের দিতেই হবে, আওয়াজ উঠছে, কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না৷

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১ ১২
১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯
২০২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫ ২৬
২৭ ২৮ ২৯ ৩০  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

কেমন যাবে এপ্রিল মাসের এই সপ্তাহ
সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
জঘন্য ফুটবল, সুপার কাপ থেকে বিদায় ইস্টবেঙ্গলের
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
২০২৬ বিশ্বকাপ খেলবেন? বড় ঘোষণা মেসির
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
সোমবার এসএসসি ভবনের সামনে ধরনায় বসবেন চাকরিহারারা
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
অলৌকিক! মন্দির উদ্বোধনের আগেই দিঘায় ভেসে এল জগ্ননাথ মূর্তি
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
পাকিস্তানে আক্রান্ত হিন্দু মন্ত্রী, নিন্দা শেহবাজ শরিফের
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
‘রাম-বাম’ তত্ত্বে বামেদের ব্রিগেড সমাবেশকে খোঁচা কুণাল ঘোষের
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
নতুন করে অশান্তির খবর নেই, এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার ২৮৯ : জঙ্গিপুর পুলিশ সুপার
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
খেলা হবের পাল্টা ‘নেমে খেলার ডাক’ সেলিমের
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
মুর্শিদাবাদ প্রসঙ্গে সম্প্রীতির বার্তা, ব্রিগেডে কী বললেন সেলিম?
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
ব্রিগেড থেকে তৃণমূল-বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ অনাদি সাহুর
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
দার্জিলিং-এ বিকল্প রাস্তা চাইছে মোর্চা, কেন্দ্রকে চিঠি রোশন গিরির
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
ভুল বোঝাবুঝি থেকে মারাত্মক ঘটনা ভাবতে পারছে না বিহারের বেতিয়ার পুলিশ লাইন
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
আজই প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে পারে লিভারপুল!
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেবেন রাহুল
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team