কলকাতা: বাংলা সিনেমার ইতিহাসে খুব কমবার এই দিন এসেছে যেখানে শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক সকলেই একসুরে মুখ খুললেন বাংলা ছবির ভবিষ্যতের জন্য। একদিকে বড় বাজেটের হিন্দি ছবি ‘ওয়ার টু’ আসছে অগাস্টে, অন্যদিকে মুক্তি পাচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত বাংলা ছবি ‘ধূমকেতু’। হল বাংলার, ভাষা বাংলা—কোণঠাসা বাংলা সিনেমা! রাজ্যজুড়ে যখন বাঙালি অস্মিতায় শান দেওয়া হচ্ছে, তখন সেই আবহেই বাংলা সিনেমাকে বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রসেনজিৎ, দেব (Dev)-সৃজিতরা (Srijit Mukherji)। অবশেষে সুরাহার পথ খুঁজতে আলোচনায় বসলেন টলিপাড়ার তারকারা। বৃহস্পতিবার মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের (Tollywood Director Producer Meet Aroop Biswas) মুখোমুখি টলিউড (Tollywood)।
বলিউড কিংবা দক্ষিণী সিনেইন্ডাস্ট্রির মেগাবাজেট ছবির ধাক্কায় বাংলা সিনেমার মন্দা বাজার। গত কয়েক বছর ধরেই রাজ্যের একাধিক সিঙ্গল স্ক্রিন মাল্টিপ্লেক্সে একটা অদৃশ্য চাপ কাজ করছে। অভিযোগ উঠেছে, কিছু হিন্দি ছবির ডিস্ট্রিবিউটররা হলমালিকদের কাছে আসছে কঠিন শর্ত—চারটে শো, সবই হিন্দি ছবির। বাংলা ছবির সঙ্গে শো ভাগ করা চলবে না। কোণঠাসা বাংলা সিনেমা! এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রীতে চিঠি দিয়েছেন প্রসেনজিৎ, দেব-সৃজিতরা। চিঠি পাওয়ার পর মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এক জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। সেই সমস্যার সমাধান খুঁজতেই বৃহস্পতিবার নন্দনে টলিপাড়ার তাবড় প্রযোজক, পরিচালকরা একজোট হয়ে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেই ইতিবাচক বৈঠকে খুশি টলিউড। নির্ধারিত সময়ে মিটিংয়ে যোগ দেন দেব, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (Shiboprosad Mukherjee), প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা, নিসপাল সিং রানে, রানা সরকার প্রমুখ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইম্পা সভাপতি পিয়া সেনগুপ্তও।
আরও পড়ুন: ‘মির্জা ২’তে নেই কৌশিক, কাকে দেখা যাবে?
দেব বললেন, “শুধু ‘ধূমকেতু’ নয়। সমস্ত বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ ভেবে এই বৈঠক। বাংলায় বাংলা সিনেমা চলবে না, সেটা তো অত্যন্ত দুঃখজনক। খুব ইতিবাচক বৈঠক হল। অরূপদা আমাদের বক্তব্য শুনেছেন। আশা, ভাল কিছু হতে চলেছে। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখেও, “বাংলা ভাষা আমার প্রাণ। আট বছর এই ভাষাতেই শিক্ষকতা করেছি। আমার ভাষা আমার গর্ব। সেই ভাষাতেই ছবি বানাই। নিজের রাজ্যেই একঘরে হয়ে রয়েছে বাংলা ছবি, এ কথা মানতে কষ্ট হয় সকলের। সেই জায়গা থেকেই সকলে একজোট। মনে হচ্ছে এই বৈঠক বাংলা ছবির পক্ষে যাবে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের মন্তব্য, “আমার ছবিগুলো চলছে, লোকও দেখছে। তারপরও টাইম স্লট বদলে দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশকরাও অনেক সময় প্রযোজকদের যথাযথ যুক্তি দিতে পারেন না। সেখানে প্রযোজকদের মধ্যেও তো একটা হতাশা কাজ করে। দু’টো সপ্তাহ তো সিনেমাটা রাখা উচিত। সব সিনেমার ব্যবসা তো সমান হয় না। কেউ যখন ভালোবেসে বাংলা সিনেমা তৈরি করছে তখন তাঁকে বাংলাতে তো একটা জায়গা দিতে হবে।মন্ত্রীর আশ্বাস, “মুখ্যমন্ত্রী বাংলা ভাষা নিয়ে আন্দোলন করছেন। যাঁরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাতৃভাষার অবমাননা করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। বাংলা ছবির স্বার্থরক্ষাও আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।”
ই চিঠিতে বাংলা চলচ্চিত্রের এক গভীর সংকটের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়েছেন তারা। চিঠিতে বাংলার দুই উল্লেখযোগ্য তারকা বাংলা চলচ্চিত্রের এটি অসম্মানজনক পরিস্থিতি বলে মুখ্যমন্ত্রী শরণাপন্ন হচ্ছেন এমনটাই জানিয়েছেন। বাংলা ভাষা আন্দোলনের এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। বাংলার সিনেমা হল গুলোকে বাংলা ছবি চালানো প্রায় মুশকিল হয়ে পড়েছে। এমনকি শর্তে বলা হচ্ছে যে হিন্দি ছবি চালাকালীন বাংলা ছবি চালালে তাহলে হিন্দি ছবি চালাতে দেওয়া হবে না। ব্যবসায়িক দিকের কথা মাথায় রেখে হল মালিকরা অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। তার ফলে আল-মালিকরা বাংলা ছবি বাতিল করে হিন্দি ছবি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ মহারাষ্ট্র পাঞ্জাব কিংবা দক্ষিণ ভারতের তারা এমন কোন শর্ত দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেন না।
অন্য খবর দেখুন