আজ কলকাতায় ঢুকে পড়বেন আইপিএল চ্যাম্পিয়ন দলের বাংলার এক প্রতিনিধি – ঋদ্ধিমান সাহা। সিএবি’র কোনও প্রতিনিধি নিশ্চয়ই বিমানবন্দরে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে ফুলের বোকে নিয়ে যাওয়ার সৌজন্য দেখাবেন না। তবে বিশ্বাস নেই , সি এ সভাপতি অভিষেক ডালমিয়াকে। বাংলার ক্রিকেটার ঋদ্ধি। অভিষেক পৌঁছে যেতে পারেন। এবং তা পারেন – এতো কিছু ঘটে যাওয়ার পরও। তবে হলফ করে বলতে পারি প্রাক্তন সচিব বিশ্বরূপ দে , এখনও সিএবি তে থাকলে – এই দৃশ্য দেখা যেতই। আমি হলফ করে বলতে পারি।
ঋদ্ধি কি করেছেন, যে এমনভাবে সিএবি কর্তাদের ছুটতে হবে! এমন কথা আজ বাংলার ক্রিকেটের একটা অংশ বলতেই পারে। সেই অংশকে ময়দান চেনে : গুরু ভঞ্জনা ভক্ত বলে।
এইবার হয়ে গেল, ১৫ তম আইপিএল। বাংলার কোন ক্রিকেটার তিনটি ফাইনাল খেলছেন? ‘প্রিন্স অফ কলকাতা’ ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই স্বাদ পূরণ হয়নি। কেকেআরের হয়ে লক্ষীরতন শুক্লা , মনোজ তিওয়ারি দের একবার সেই স্বাদ বরাতে জুটেছিল। আর ঋদ্ধির?
Rajat Patidar joins the elite list ?
?: IPL#IPL2022 #cricket #batsman #sportzcraazy #iplt20matches #followus #champions #score #playoffs #team #rajatpatidar #rcb #VirenderSehwag #MuraliVijay #WriddhimanSaha #ShaneWatson pic.twitter.com/MYpNeV47Zx
— SportzCraazy (@sportzcraazy) May 26, 2022
কেকেআর কোনোদিন তাঁর কথা ভাবেনি। কেন? কারণ অজানা। অথচ বাংলার এই ক্রিকেটারটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় টি টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আইপিএলে সফল। একবার ঋদ্ধি পাঞ্জাবের হয়ে ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন। এই ইডেনে সেই ফাইনালে ওপেন করতে নেমে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এরপর মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে চেন্নাই সুপার কিংসে ছিলেন। সেই দল ফাইনাল খেলে খেতাব জিতে ছিল। কিন্তু সেবার ফাইনালে প্রথম একাদশে জায়গা হয়নি বাংলার এই ‘ গড ফাদার হীন ‘ ক্রিকেটারটির। দুবার কোনো বাংলার ক্রিকেটার ফাইনাল খেলা দলে ছিলেন না। তিনি নীরবে এই সাফল্য পেয়েছেন। আর এবার?
Most Runs in IPL 2022#HardikPandya – 453#DavidMillier – 449#ShubmanGill – 438#WriddhimanSaha – 312#Tentaran #India #IPL2022 #T20 #Cricket #TeamIndia #BCCI #T20WorldCup #KLRahul #SanjuSamson #JosButtler #GT #GujaratTitans pic.twitter.com/4yiJxXsn90
— Tentaran Sports (@SportsTentaran) May 25, 2022
মোক্ষম সময় (৩৭ বছর বয়সে) বিশ্বের অন্যতম সেরা উইকেটকিপারটি গুজরাত দলের হয়ে ফাইনাল ম্যাচে খেললেন। দল চ্যাম্পিয়ন হল। নিয়মিত তাঁর ব্যাট রান দিয়েছে ওপেনার হয়ে। একটি ম্যাচে সেরার সম্মান পেয়েছেন। এবার গ্লাভস হাতে গলিয়ে দাপটে কিপিং করেছেন।
Rajat Patidar, today, smashed the fastest ? in the IPL Playoffs ⚡️
?: IPL#IPL2022 #cricket #Match #champions #rcb #batsman #score #centuries #playoffs #rajatpatidar #tournament #WriddhimanSaha #virendarsehwag pic.twitter.com/UJ6DD3Xbf0
— SportzCraazy (@sportzcraazy) May 26, 2022
আইপিএলে ৩ বার ফাইনাল খেলা দলের সদস্য। দুবার ফাইনালে দলের হয়ে মাঠে খেললেন। একবার ফাইনালে সেঞ্চুরি করে দলকে ট্রফি জেতাতে পারেননি। আর এবার রান না করতে পারলেও, দল ট্রফি জিতেছে। ঋদ্ধির সাফল্য ক্রিকেটার সৌরভকেও আইপিএল মঞ্চে পিছনে ফেলে দিয়েছে।
Wriddhiman Saha comes up with savage response to critics after Gujarat won their maidein title.
(? : BCCI)#WriddhimanSaha #Gujarat #IndianT20League2022 #Cricket #SKY247 #Socialmedia pic.twitter.com/cGGUDnEJSI
— Sky247 (@officialsky247) May 30, 2022
সেই ক্রিকেটার তো বাংলার গর্ব। হোক না- গুজরাত টাইটান্স তাঁকে দেরিতে হলেও দলে নিয়েছিল দল মজবুত করার পরিকল্পনায়। ক্রিকেটার নিলামে প্রথম তালিকার বিক্রি না হওয়ার ঘটনার স্বাক্ষী তো সৌরভ স্বয়ং!
তাহলে ঋদ্ধি বরণ নয় কেন?
https://twitter.com/fantasycricbuz/status/1529407176699105280?t=jwPjct3bTMZCExCl30j0kw&s=19
যে ছবিটা দেখলে খুব খুশি হতাম – বিমান বন্দরে সি এ বি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া আর ফুল আর মিষ্টি নিয়ে সেই ‘ প্রলাপ ‘ বকা কর্তা দেবব্রত দাস। এই টাউন ক্লাবের কর্তাটি পায়ে চাকা লাগিয়ে উত্তর – দক্ষিণ – পূর্ব – পশ্চিমে পৌঁছে যান। অনেক ছবি আছে, যেখানে উনি অভিনন্দন জানতে একধাপ – দুধাপ উঁচুতে থাকা কর্তাদের সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা বন্দি হয়েছেন অতীতে। সেই সুযোগে ঋদ্ধি কে সামনে দাঁড়িয়ে তিনি যদি বলতে পারতেন, ‘সেদিন গুরু ভজনা করার কথা মাথায় রেখে তোমার সম্পর্কে ওসব কথা বলাই ঠিক হয়নি।’ কিন্তু এটা বলতে পারবেন না। কারণ গুরু ধরে সি এ বিতে তাঁর আরও কিছু পাওয়ার উদগ্র বাসনা চাগার দিচ্ছে সারাক্ষণ।
এতটাই যথেষ্ট হত হয়তো বাংলা কর্তা বনাম ঋদ্ধি ইস্যুর যবনিকা পাত ঘটাতে। ঋদ্ধিকে অন্য রাজ্য খেলাতে নিয়ে যেতে পারতো না। অপমানিত ঋদ্ধি বাংলা ছাড়বেন জানা জানি হতেই, গোটা দেশের রঞ্জি ট্রফিতে খেলা ৯ টি দল তাঁকে পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এতে ক্রিকেটার ঋদ্ধির লাভ। বাংলার মুখ পুড়ছে।
আমার বিশ্বাস, সি এ বি সভাপতিকে বেশি অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। কারণ অভিষেককে ( ডালমিয়া ) দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রিকেট কর্তারা স্নেহ করেন। ভালোবাসেন। অবশ্যই চেনেন। যতটা অচেনা কর্মকর্তা সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। জানি না, সি এ বি সভাপতি কি বলে সংস্থার মান বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। অবাক হতে হয়, বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজ্য সংস্থায় এমন ঘটনা ঘটছে, আর তিনি আশ্চর্য্য রকম নীরব! কেন? তিনি তো নিজে জানেন তাঁর মত এক প্রতিভাবান ক্রিকেটারের সঙ্গে দেশের একাধিক বোর্ড কর্তারা একসময় কি কি যন্ত্রণা দিয়েছিলেন। তিনি একজন ক্রিকেটার হয়ে নিজ রাজ্যের ক্রিকেটারের পাশেই দাঁড়াবেন – এটাইতো স্বাভবিক।
অবশ্য তিনি এখন প্রশাসক। অনেক দাবার চাল নিয়ে ভাবতে হয়। ফলে এই ‘ দেবু ‘ দের ঠান্ডা না করে, অন্য কাজে লাগাচ্ছেন হয়তো। এসব এক্কেবারে ব্যাক্তিগত ভাবনা। মিলে গেলে সত্যি। না মিললে – অসত্য। কিন্তু চোখের সামনে সত্যিটাই বেশি চোখে পড়ছে যে।
যা যা খবর পাচ্ছি, এই সংস্থায় এখন যিনি সচিব – তিনি এক নামজাদা প্রাক্তণ ক্রিকেটার। তিনি ‘দাদা’ রও ‘ দাদাভাই ‘। স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি একবার প্রচার মাধ্যমে ‘জাতীয় দল আর ঋদ্ধি’ – ইস্যুতে মুখ খুলেছিলেন। সেটা তাঁর ভাই – মহারাজকে এই বিতর্কে কেন ঋদ্ধি টেনে এনেছিলেন , তার বিরোধিতা করে। স্নেহাশিস বাংলার ক্রিকেট সংস্থার সচিব। রঞ্জি ট্রফি থেকে বাংলার যাবতীয় ক্রিকেট প্রশাসনিক কাজ তাঁকেই দেখার কথা। কিন্তু তিনি কতোটা সফল, তা শুধু বাংলার ক্রিকেটারদের মাঠের সাফল্য দিয়ে মাপলেই ভুল হবে। তিনি মাঠের বাইরের ইস্যু কতোটা সামলেছেন, সেটাই তো তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা। সেখানে বার বার দেখা যাচ্ছে, তাঁর চেয়ে কম বয়সী হয়েও সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া সামাল দিচ্ছেন।
এক সময় বাংলার ক্রিকেটকে মাঠের লড়াইকে সমৃদ্ধ করার জন্য দুটি পরিবারের কথা বলা হত। ‘রায়’ পরিবার আর ‘গাঙ্গুলি’ পরিবার। পঙ্কজ-অম্বর-প্রণব রায় । এরপর সৌরভ আর স্নেহাশিস। প্রশাসনিক পদে থেকে বাংলার ক্রিকেটকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিলেন সৌরভ- স্নেহাশিসদের বাবা চন্ডী গঙ্গোপাধ্যায়। আজ ময়দানে কান পাতলেন শোনা যায় (বিশ্বনাথ দত্ত আর জগমোহন ডালমিয়া প্রয়াত হওয়ার পর), ভবানীপুর বা আলিপুর আর নয়, বেহালার বীরেন রায় রোড থেকে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে বাংলা ক্রিকেটের হেড অফিস-সি এ বি।
সে হোক। একজন ক্রিকেটার দক্ষ প্রশাসক হয়ে রাজ্য সামলে, দেশ সামলে বিশ্ব ক্রিকেট সামলাতে গেলে তো – সকলের গর্ব। কিন্তু, তারজন্য ঋদ্ধিদের মত ক্রিকেটারদের বাংলা ছাড়তে হবে (কর্তাদের নির্বুদ্ধিতায়, কিংবা চক্রান্তে)-এটা মানা কষ্টের।
#IPL2022 Why is #wriddhimansaha making headlines so frequently these days? @gulf_news takes a look. @GBGulf1 #RRvsGT #Cricket https://t.co/EnzN38lmqi
— Gulf News Sport (@GulfNewsSport) May 28, 2022
একজন ক্রিকেটার কখন কী পরিস্থিতি দিয়ে যান,তা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের চেয়ে ভালো করে এই দেশে খুব কম মানুষ জানেন। তবুও কেমন সব নিরবতা! বাংলার ক্রিকেটকে এক উত্তরবঙ্গের জেলা – শিলিগুড়ি থেকে আসা ঋদ্ধিমান কিছু দেননি এটা ভাবা ভুল।
Saha had good career with Bengal#RanjiTrophy #CricketTwitter @Wriddhipops #WriddhimanSaha pic.twitter.com/AjQCxhq6rz
— Indian Domestic Cricket Forum – IDCF (@IDCForum) May 27, 2022
বরঞ্চ, নির্লোভ ( বাংলা দলের ভালোর জন্য অধিনায়ক হতে চাননি), অজাতশত্রু ( এক এই সি এ বি কর্তা ছাড়া কেউ কোনোদিন তাঁর দিকে আঙুল তোলার সুযোগ পাননি), সকলের ভালো চাওয়া ( পন্থকে নিজে থেকে কিপিং টিপস দিতেন, এটা নিশ্চিত হওয়ার পর, যে এই পন্থই এসে তাঁর জাতীয় দলের জায়গা নিয়ে নিয়েছেন)।
https://twitter.com/sportstigerapp/status/1530510085247512576?t=jr_oirp369Pc5FYATcjFIQ&s=19
জানি না ঋদ্ধি পর্বের শেষ কোথায়। শুধু স্যালুট জানাবো এই ৩৭ বয়সী তরুণকে – মাঠের বাইরের কোনো ঝড় – ঝাপটা তাঁর ক্রিকেটকে টলিয়ে দিয়ে যেতে দেন নি। বাংলার ক্রিকেটারদের তো বটেই, দেশের অনেক এমন ক্রিকেটারদের আদর্শ হন – পাপালি। যিনি লড়াই থেকে পালান না।
ছবি: সৌ টুইটার, ফেসবুক।