এবছর বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে পাওয়া যাবে না ঋদ্ধিমান সাহাকে। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়ালেন। আজ সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়াকে ফোনে তা জানান। বাংলা দলের সকলের বুধবার সকালে আর টি পি সি আর টেস্ট করে, পরের দিন কটকে পৌঁছে যাবে। দলগুলি থাকবে ভুবনেশ্বরে।
আরও পড়ুন: CAB: মেয়েদের খেলা শুরু, ক্লাব লিগ ১৬ ফেব্রুয়ারি, থাকছে অবনমন
ঋদ্ধিমান এমন সিধ্যান্ত কেন? ফোন এই প্রশ্ন করতে গিয়ে জানলাম, তিনি ছেলেকে নিয়ে বেড়িয়েছেন। বললেন,’সি এ বি সভাপতিকে জানিয়েছি, ব্যক্তিগত কারণে এবার যাচ্ছি না’।
ব্যক্তিগত কারণ। ভারতীয় ক্রিকেট এটা চালু কথা। এই তো জানা গেল, ব্যক্তিগত কারণে কে এল রাহুল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে তে খেলেননি। কাল দ্বিতীয় ম্যাচে খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঋদ্ধিমান ভেবে চিন্তে সিধ্যান্ত নিয়েছে বলেই মনে হল। মানসিকভাবে চাঙ্গা তাঁকে থাকতে হবে। তাই ফ্যামিলির সঙ্গে থাকাটা খুব জরুরী। মেয়ে – ছোট্ট ছেলে তাদের বাবাকে কাছেই পায় না। করোনা কালে, খেলা মানেই হোটেলে ঘরবন্দী হয়ে কোয়ারান্টিনে কাটানো। তারপর দলে যোগ্য বলে নির্বাচিত হয়ে খেলার সুযোগই না পাওয়া – একজন ক্রীড়াবিদের উপর কী অমানুষিক চাপ তৈরি করে , তা নানান ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে।
Work Mode On ✅ pic.twitter.com/nzwDtA78La
— Wriddhiman Saha (@Wriddhipops) January 9, 2022
প্রশ্ন এখন মাথাচাড়া দিচ্ছে, ভারতীয় দলে শুধু টেস্ট দলে ( লাল বলের ক্রিকেটে) আছেন ঋদ্ধিমান। কখন একটা ম্যাচে রান করে দেবে পন্থ, তার অপেক্ষায় বসে থাকে টিম ম্যানেজমেন্ট। বিশ্বসেরা উইকেটকিপারের স্বীকৃতি পেয়েও বিমাতৃসুলভ আচরণ হজম করে যেতে হচ্ছে বাংলার এই প্রতিভাকে। বাংলার দাদা – এখন বোর্ড সভাপতি। তাঁর সময়ও এই অবহেলা কেন চলবে! এখন এটাও জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যে ঋদ্ধিমানকে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে বলেই নাকি দেওয়া হয়েছে, আসন্ন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম টেস্ট সিরিজে তাঁকে দলে নেওয়া হবে না। পন্থ আর কোনা ভারত থাকবেন দুটি টেস্টের সিরিজ (৪ মার্চ থেকে শুরু)। এরপর নিশ্চয়ই ঋদ্ধিমান সঠিক ভাবনায় ভেবেছে। ৩৭ বছরের এই ক্রিকেটারটি আর কতভাবে বঞ্চনার শিকার হবে!
তাহলে ঋদ্ধিমানকে বোর্ড বলে দিক – তোমাকে নিয়ে আমরা আর ভাবছিনা, তুমি কিভাবে অবসর চাও বলো। কেউ তা বলে না, শুধু মানসিক যন্ত্রণা বয়ে চলে এক সিনিয়র ক্রিকেটার। শাস্ত্রী – সৌরভ – রাহুলরা এমন কঠিন অবস্থায় পড়েননি। পড়লে কি হতো? কিছু কথা চালাচালির নমুনা ভারতীয় ক্রিকেট এর জানা। চ্যাপেল – সৌরভ পর্ব। শাস্ত্রী – সৌরভ পর্ব।
ঋদ্ধিমানকে যদি বিসিসিআই জানতে চায় কেন রঞ্জি ট্রফিতে খেললেন না? ঋদ্ধিমান বললেন, ‘সি এ বি কে যা বলেছি, তাই বলবো। পার্সোনাল প্রবলেম ‘। আসলে মনে হয়, রঞ্জি ট্রফিতে খেলার বাড়তি মোটিভেশন আর পাচ্ছেন না বাংলার এই সর্বকালের সেরা উইকেটকিপারটি।
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ চেতেশ্বর পূজারা আর অজিঙ্কা রাহানে। তাঁরা নেমে পড়ছেন রাজ্য দলের হয়ে রঞ্জিতে খেলতে। বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কয়েকদিন আগেই বলেছেন, ওদের জন্য রঞ্জি ট্রফিতে খেলাটা খুব দরকার। সেখানে রান করে আত্মবিশ্বাস পাওয়াটা যেমন দরকার তেমনই নির্বাচকদের ভরসা পাওয়াটা দরকার। সৌরভ কিন্তু নিজের রাজ্যের সফল উইকেটকিপার – ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিমানকে নিয়ে খুব একটা জনসমক্ষে বলেন না! কেন?
লাল বলে ঘরোয়া ক্রিকেটে না খেললে, ঋদ্ধিমান কি নির্বাচকদের কাছে ব্রাত্য হয়ে যাবেন না? এই প্রশ্নে নিরুত্তর ঋদ্ধি শুধু হেসেছেন। সেই হাসিতে ছিল, একরাশ যন্ত্রণা।
ঘরের মাঠে হোম সিরিজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কাঁধে চোট নিয়ে ব্যাট করেছিলেন ঋদ্ধিমান। দলকে সেই ম্যাচে বাঁচানোই নয়, জিতিয়ে ছিলেন। সেদিন তাঁর লড়াই প্রসংশা কুড়লেও , পুরস্কার স্বরূপ তাঁকে পরের ম্যাচেই মাঠে বাইরে থাকতে হয়েছে। আর পন্থ , অবিবেচকের মত অনেক ম্যাচে ব্যাট চালিয়ে এলেও – ম্যাচের পর ম্যাচ খেলেন। আবার তারই মাঝে একটা রান করে দেন। চলতে থাকে তাঁর গাড়ি। রোটেশন পদ্ধতি না চালু করলে, ভারতীয় ক্রিকেট ঋদ্ধিমানের মত অনেককে হারাবে ।
Success is not in what you have, but who you are. Glad to contribute to the Team’s cause. @BCCI #IndVsNZ #TeamIndia #India pic.twitter.com/J1XydEyFng
— Wriddhiman Saha (@Wriddhipops) November 28, 2021
এরপর? ঋদ্ধিমান বলছেন, ‘আইপিএল আসছে। মেগা অকশন আছে। দেখা যাক’। কোনও সন্দেহ নেই, ঋদ্ধিমানকে দলে পেতে একাধিক দল ঝাঁপাবে। কারণ, নুতন দুই দলের একটি কলকাতা মালিকের দল। বাংলার এই ক্রিকেটকে দলে চাইবে তারা। সব দলের মধ্যে উইকেটকিপারের চাহিদা বেশি এবার।
আপাতত বাংলা দলের সাফল্য কামনা করে নিজের পরিবারের সঙ্গেই কাটাতে চান ঋদ্ধিমান। অবসরের ভাবনা নেই।
ছবি: সৌ টুইটার।