“আমি এখন গুজরাত টাইটান্সের ( #GT) হয়ে খেলছি, আমার হোম মোতেরা। ইডেন তো আমার কাছে, অ্যাওয়ে গ্রাউন্ড। এটা তো কেকেআরের (#KKR) হোম গ্রাউন্ড। আমি তো কেকেআরের ক্রিকেটার নই।” বলেছেন- ঋদ্ধিমান সাহা। প্রসঙ্গ ছিল – মঙ্গলবারের আইপিএল কোয়ালিফায়িং ম্যাচ। সোমবার ইডেনে চুটিয়ে প্র্যাকটিসে করার সঙ্গে সঙ্গে ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে তিনি এক প্রশ্নের জবাবে এটা বলেছেন।
সদ্য বাংলার ক্রিকেট কর্তাদের সঙ্গে মনোমালিন্য তুঙ্গে থাকা পর্বে এমন কথা শুনে , অধিকাংশ সংবাদ প্রতিনিধি ” অন্য কিছু ” খুঁজে পেলেন ঋদ্ধির এই জবাবে। আমার কিন্তু খুব পেশাদার মন্তব্য বলে মনে হয়েছে। বরঞ্চ, ভালো লেগেছে, এক বাঙালি ক্রিকেটারের এই কঠিন মানসিকতা দেখে আর শুনে।
Jab bhi yeh ho Saha-th, badiya hoti hai apni shuruat 🤩🙌🔥#SeasonOfFirsts #AavaDe #TATAIPL pic.twitter.com/EkhEL6ho9I
— Gujarat Titans (@gujarat_titans) May 23, 2022
সত্যিই তো। তিনি কেকেআরের ক্রিকেটার নন ( যেটা হলে কলকাতার দল লাভবান হতে পারত হয়তো)। কাজেই ইডেন তাঁর আইপিএলে হোম নয়। এই টুর্নামেন্টে ইডেন ম্যাচ, চার দলের কাছেই ‘ হোম অ্যাডভান্টেজ ‘ নেই। আসলে ঋদ্ধি – শামিরা বাংলার ক্রিকেটার। বছরের পর বছর বাংলার হয়ে খেলে চলেছেন। ইডেনে ক্লাব ম্যাচও পর্যন্ত খেলেছেন । সব ঘাস চেনা। মানুষের মুখ গুলো চেনা। আর নিজের সময় খারাপে ঋদ্ধি বরঞ্চ টের পেয়েছেন, এই বাংলার কারা কারা মুখোশ পরে ছিলেন আর আছেন। তা সত্ত্বেও ইডেনে বাড়তি সুবিধা পাবে গুজরাত।
দুই ঘরের ছেলে ব্যাট – বল – কিপিংয়ে দারুন ছন্দে। ওপেনার – ব্যাটার ঋদ্ধিমান নিজেকে টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে এতটাই বিস্ফোরক ( মাঠে আর মাঠের বাইরেও) যে আগ্রাসী মনোভাবটা অন্য খাতে বইয়ে দিয়েছেন। নাহ্ হলে কেউ আবেগ সরিয়ে বলতে পারেনা, ‘ ইডেন নয় , আমার হোম গ্রাউন্ডে এখন মোতেরা’।
নেটে ঋদ্ধিকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রেখে যেটা বুঝলাম, দারুন মেজাজ আর ছন্দে আছেন। ৯ ম্যাচে ৩১২ রান। আইপিএলে খেলা কজন বাঙালির এমন সাফল্য আছে? ইডেনে হোম টিমের ড্রেসিং রুমে জায়গা পেয়েছে গুজরাত। সেই দিকের দুটি নেটে অনুশীলন সারলেন দলের সঙ্গে। শুরুতে নেটে ব্যাট করতে ঢুকলেন, সফল জুটি – ঋদ্ধি আর গিল। বাংলার ছেলেটি শুরু করলেন স্পিনারদের মোকাবিলা দিয়ে। তারপর নেট বদল। এলেন পেস বোলারদের মোকাবিলা করতে। আর নেটে যে সব শটস খেললেন, তাতে বোঝা গেল – শান্ত ছেলেটি , ব্যাট হাতে অশান্ত। সেই চেহারা আজ ইডেন দেখতে পেলে বেজায় খুশি হবে।
ঋদ্ধি কি এমন ব্যাটিং করতে চান, যা সেই মুখোশে ঢাকা মানুষ গুলোকে সমুচিত জবাব দিতে পারেন? এমন কিপিং করবেন, যা অনেকের লজ্জা বাড়াবে (বয়স নয়,পারফরম্যান্স শেষ কথা এই তত্ত্বকে উস্কে দিতে)?
তিনি যাই করুন, তিনি টিমম্যান। তাই বলতে পারছেন জাতীয় দলে জায়গা না পেয়েও। ” আমি সবসময় দলের জন্য খেলি। মঙ্গলবার সেটাই আমার লক্ষ্য হবে। জাতীয় দলের জন্য আমার মানসিকতা একই। দলের যদি দরকার হয় , আমাকে নেওয়া হবে। আমি মাঠে সেরাটা দিতে চাই। এসব নিয়ে আমার কোনো হেলদোল নেই।”
মুখে এসব বলছেন। ইডেনে সতীর্থদের সঙ্গে খুনসুটিতে মাতছেন। টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে। ইডেনে নামছেন খেলতে। তবুও, সিএবি কর্তাদের দ্বারস্থ হননি – বাড়তি টিকিটের জন্য। বরঞ্চ, দলের অনেকেই নিজেদের কোটার টিকিট দিয়েছেন ঋদ্ধিকে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, বজ্র বিদ্যুৎ সমেত বৃষ্টির সম্ভবনা আছে। বরুনদেবের কাছে আবদার রইলো, ঋদ্ধিকে এই ম্যাচে ব্যাট – কিপিং গ্লাভস হাতে দাপিয়ে খেলার সুযোগটা দিন। অপমান আর অবহেলার জবাব দিক ঋদ্ধি-এলাকার ঢুকে।
আজ মেয়ের জন্মদিনে কি উপহার দেবেন ঋদ্ধি?
আর এমনই দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকুক মেয়ের জন্মদিনে। টার্গেট প্রথম বছরই ফাইনাল। আর টুর্নামেন্ট আত্মবিশ্বাস আরও জমাট করে ‘হোম গ্রাউন্ড’ মোতেরাতে নামা।
ছবি: সৌ টুইটার।