দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে বাকি আর ৩০ দিন। আগামী ২০ নভেম্বর থেকে কাতারে শুরু হতে চলেছে ফিফা বিশ্বকাপ। ৩২টি দেশকে নিয়ে শুরু হতে চলা ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ নিয়ে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে উঠছে। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অন্তত মাস পাঁচেক পরে হওয়ায় এবার বিশ্বকাপ নিয়ে আগ্রহ আরও বেড়েছে। ২০ নভেম্বর থেকে ২৯ দিনে ৩২টি দেশ ৬৪টি ম্যাচ খেলবে ফিফা বিশ্বকাপের মূলপর্বে।
আরও পড়ুন-East Bengal Beat NorthEast United FC: দুরন্ত! আইএসএলে প্রথম জয় ইস্টবেঙ্গলের
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে কিছু চমকপ্রদ তথ্য
১) এই প্রথম শীতকালে আয়োজিত হচ্ছে ফিফা বিশ্বকাপ:
ফিফা বিশ্বকাপ এই প্রথম শীতকালে আয়োজিত হচ্ছে। জুন মাসে কাতারের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়। এত গরমে খেললে ফুটবলাররা অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন, সেই কথা মাথায় রেখে কাতার বিশ্বকাপ শীতের মরসুম, নভেম্বর-ডিসেম্বরে পিছিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ক্লাব ফুটবলের ক্যালেন্ডার পুরো ঘেঁটে গিয়েছে। প্রিমিয়র লিগ, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মত হাইপ্রোফাইল টুর্নামেন্টের সূচি বদলাতে বাধ্য হয়। বিশ্বকাপ শীতকালে নিয়ে যাওয়ায় ফিফাকে অনেক জটিলতার সামনে পড়তে হয়।
২) সবচেয়ে দামি বিশ্বকাপ:
আগের সব কটা সংস্করণকে ছাপিয়ে কাতার বিশ্বকাপ সবচেয়ে দামি বিশ্বকাপ হতে চলেছে। ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের জন্য আয়োজক কাতার খরচ করছে ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। হ্যাঁ, ২২০ বিলিয়ন। যেখানে রাশিয়া বিশ্বকাপ আয়োজনে খরচ হয় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপ আয়োজনে আয়োজকদের খরচ হয়েছিল ২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শুধু নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করতেই কাতার খরচ করেছে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর বিশ্বকাপের জন্য বিশ্বমানের পরিকাঠামো তৈরিতে খরচ হয়েছে ২০০ বিলিয়নের মত।
৩) বেশ কম সংখ্যক স্টেডিয়ামে হবে কাতার বিশ্বকাপ:
কাতার বিশ্বকাপের খেলা হবে কেবলমাত্র মোট ৮টি স্টেডিয়ামে। যেখানে ২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপে ১২টি স্টেডিয়ামে খেলা হয়। ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনায় হওয়া বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছিল মাত্র ৬টা স্টেডিয়ামে। এরপর এত কম সংখ্যক স্টেডিয়ামে খেলা হচ্ছে কাতারে।
৪) এই প্রথম মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম বিশ্বকাপ:
এশিয়ায় দ্বিতীয় বার। আর প্রথমবার মধ্যপ্রাচ্যে আয়োজিত হচ্ছে বিশ্বকাপ। ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া-জাপানে আয়োজিত হয়েছিল বিশ্বকাপ। সেবারই প্রথম এশিয়ায় আয়োজিত হয়েছিল বিশ্বকাপ। আর এবার আয়োজিত হচ্ছে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে।
৫) সবচেয়ে ছোট আয়োজক দেশ
: আয়তনের দিক থেকে বিশ্বকাপের সবচেয়ে ছোট আয়োজক হতে চলেছে কাতার। কাতারের আয়তন মাত্র ১১,৪৩৭ বর্গ কিমি (৪,৪১৬ বর্গ মাইল)। জনসংখ্যা মাত্র ২৮ লক্ষের মত। যেখানে এর আগের বার ২০১৮ সালে আয়োজক দেশ রাশিয়ার আয়তন ছিল ১৭,০৭৫,৪০০ বর্গকিলোমিটার (৬,৫৯২,৮০০ বর্গমাইল)।
৬) সবচেয়ে দামী টিকিট
: এবার কাতার বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামে বসে দেখার টিকিটের দাম আগের সবগুলো সংস্করণকে ছাপিয়ে গিয়েছে। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে সব থেকে কম দামের টিকিট হল ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৬ হাজার টাকা, আর সর্বোচ্চ দাম লক্ষাধিক।
৭) রেকর্ড সংখ্যক ফুটবল পর্যটক আসছেন কাতার:
কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে, উপস্থিত থাকতে বা কভার করতে গোটা বিশ্ব থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ আসতে চলেছেন।
৮) নিরাপত্তাজনিত সমস্যা নেই:
দুনিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ দেশের তালিকায় প্রথম দিকে থাকে কাতার। এখানে অপরাধের হার খুব কম। রাজধানী দোহায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনাও খুব বেশি হয় না। কাতারের নাগরিকদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কম। যেখানে গত তিনটি বিশ্বকাপের আয়োজক-রাশিয়া, ব্রাজিল আর দক্ষিণ আফ্রিকায় অপরাধের হার অনেকটা বেশি ছিল।
৯) কাতার ফুটবল-
২০১৫ সালে ভুটানকে ১৫-০ গোলে হারিয়েছিল কাতার। এটাই আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বড় জয়। আর ১৯৭০ সালে কুয়েতের কাছে ০-৯ গোলে হারটাই কাতারের সবচেয়ে বড় পরাজয়।
১০) কাতারের ফুটবলে সাফল্য-
২০১৯ এএফসি এশিয়ান কাপে সৌদি আরব, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানের মত শক্তিশালী দেশদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কাতার। ফিফা ক্রমতালিকায় কাতার এখন ৪৮ নম্বরে।
১১) যারা নেই
এবারের বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলতে দেখা যাবে না ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইটালি, সুইডেন, চিলি, সালহার ইজিপ্ট, নাইজেরিয়া, কলম্বিয়া, এরলিং হাল্যান্ডের নরওয়ে-র মত দেশগুলিকে।
১২) কাতারের রাজধানী দোহার সঙ্গে দূরত্ব
কুয়েত: ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট
মাসকাট (ওমান): ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিট
মুম্বই: ৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিট
ইস্তানবুল (তুরস্ক): ৪ ঘণ্টা ১০ মিনিট
মস্কো (রাশিয়া): ৫ ঘণ্টা ২০ মিনিট
বার্লিন (জার্মানি): ৫ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট
মাদ্রিদ (স্পেন): ৬ ঘণ্টা ৪০ মিনিট
প্যারিস (ফ্রান্স): ৬ ঘণ্টা ২৫ মিনিট
লন্ডন (ইংল্যান্ড): ৬ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট
বেজিং (চিন): ৯ ঘণ্টা ১০ মিনিট
নিউ ইয়র্ক (আমেরিকা): ১২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট
সাও পাওলো (ব্রাজিল): ১৫ ঘণ্টা ১৫ মিনিট
লস অ্যাঞ্জেলস (ব্রাজিল): ১৫ ঘণ্টা ৫০ মিনিট