ম্যাচ জিতে প্রেস কনফারেন্স করছিলেন ফেডেরার। তারই মাঝে খবরটা পান। সেরেনা উইলিয়ামস সেন্টার কোর্টে খেলার সময় আছড়ে পড়ে ম্যাচ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। শুনেই ফেদ বলে ওঠেন: ‘ ওহ মাই গড! আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না।’
এভাবে কোর্ট ছাড়তে হবে ভাবতেই পারেন সেরেনাও। তাই কেঁদে ভাসালেন তিনিও। মঙ্গলবার উইম্বলডনের প্রথম রাউন্ডে ৩৯ বছরের সেরিনার বিপক্ষে লড়তে নেমেছিলেন আলিয়াকজান্দ্রা সাসনোভিচ। প্রথম সেটে শুরুতে বেলারুশের প্রতিপক্ষের সার্ভিস ব্রেক করে ৩-১ গেমে এগিয়ে যান সেরিনাই। কিন্তু এরপরই হঠাৎ কোর্টে বাঁ পায়ের গোড়ালি মচকে বেকায়দায় পড়েন তিনি। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কোর্ট ছেড়ে বেরিয়ে যান । এরপর আবার কোর্টে ফিরে এসে দুটি গেম হারেন। ৩-৩ অবস্থায় হঠাৎ কোর্টে তিনি পড়ে যান। চেয়ার আম্পায়ার ছুটে যান। তাঁকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করেন। কিন্তু তখনই টের পান সেরেনা। ওই অবস্থায় তাঁর পক্ষে আর খেলা সম্ভব নয় । এরপরই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। চোখের জলে সেন্টার কোর্টকে বিদায় জানিয়ে কোর্ট ছাড়েন এ বারের ষষ্ঠ বাছাই।
টেনিস তারকা মার্গারেট কোর্টের সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলার সুযোগ ছিল সেরেনার। এবারের উইম্বলডনে তা আর ছোঁয়া হল না সেরেনার ।
কোর্টে পিছলে পড়ে ম্যাচ আর টুর্নামেন্ট ছেড়ে বেড়িয়ে যাওয়ার মুহুর্তে টেনিসের এই স্ট্রং লেডির
কান্নার ছবি আর ভিডিও ক্লিপ মুহুর্তে ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়াতে।
একইদিনে উইম্বলডনে পুরুষদের সিঙ্গলসে পা পিছলে পড়ে যান আদ্রিয়ান মানারিনোরও। এটা ঘটে সেরেনা বিদায় পর্বের দিনেই। মঙ্গলবার ছিল তাঁর ৩৩তম জন্মদিন। এমন দিনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মানারিনোর প্রতিপক্ষ ছিল রজার ফেডেরার। হলে পুরুষদের টেনিসে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ডটা যিনি রাফায়েল নাদালের সঙ্গে ভাগাভাগি করছেন।
ফরাসি খেলোয়াড়টি নিজের জন্মদিনটাকে স্মরণীয় করার সুযোগও পেয়ে গিয়েছিলেন। সবচেয়ে বেশি উইম্বলডন জয়ী ফেডেরারের বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনাও তৈরি করেও ফেলেছিলেন মানারিনো।
প্রথম সেট হারলেও পরের দুই সেট জিতে এগিয়ে গিয়ে জন মানারিনো। চতুর্থ সেটে অবশ্য ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ান ফেডেরার। আটবারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন ৬–২ গেমে সেটটা জিতে সমতা ফেরান। আর দুর্ভাগ্যজনক ঘটে যায় ওই সেটের লড়াই চলার সময়েই।
ফেডেরার যখন ৪–২ গেমে এগিয়ে সেই পা পিছলে কোর্টে পড়ে যান মানারিনো। হাঁটুতে প্রচণ্ড আঘাত পান। এর আগে ফেদেরারের বিপক্ষে কখনো না জিততে পারেননি ফরাসি খেলোয়াড়টি। কোনো রকমে চতুর্থ সেটটা শেষ করলেও পঞ্চম সেটে আর লড়াইয়ে কোর্টেই নামতে পারেননি মানারিনো। চোটের কাছে হার মেনে ম্যাচ ছেড়ে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন তিনি।
এটাই নিশ্চিত করে দেয় ৩৯ বছর বয়সী ফেদেরারের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা। মানারিনো যখন হার মেনে নেন ৬–৪, ৬–৭ (৩/৭), ৩–৬, ৬–২ গেমে, তখনও দুজনের মধ্যে টক্কর ছিল সমানে সমানে। ম্যাচ শেষে ‘আমার ভাগ্য ভালো ছিল’—দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার পর এই ছিল ফেডেরারের অকপট স্বীকোরোক্তি।
এই দুটি ঘটনায়, ক্ষুব্ধ অ্যান্ডি মারে। উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টের সারফেস এতটা পিচ্ছিল কেন – তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে তোলপাড় হতেই, মারে মন্তব্য করেছেন, ‘ সেরেনার কাছে এটা একটা বড় ধাক্কা। এখন উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টের সারফেস সত্যি পিচ্ছিল। কোর্টের এদিক থেকে ওদিক নড়াচড়া বেশ কঠিন।’
২৩ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন সেরেনা উইলিয়ামস সেন্টার কোর্টে লড়ছিলেন বিশ্ব তালিকায় ১০০ নম্বরে থাকা আলিয়াকজান্দ্রার বিপক্ষে। পঞ্চম গেম একটি সার্ভ রিটার্ন করতে গিয়ে সেরেনা পিছলে পড়ে যান কোর্টে।
টুর্নামেন্ট থেকে সেরেনা ছিটকে গেলেও তাঁর বোন, ভেনাস দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছে গেছেন।
ফেডেরার নিজেও সেরেনার এভাবে টুর্নামেন্ট থেকে সরে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ব্যথিত। বলেছেন, ‘ এই কোর্টে এখন খুব সাবধানে নাড়াচাড়া করতে হচ্ছে। বাড়তি শক্তি আর গতি দিয়ে কিছু করতে যাওয়া মানেই, বিপদ। ‘
ছবি:সৌ-টুইটার