ভিয়েতনাম–৩ ভারত–০
(ফান ভান ডুক, ভান তোয়ান, ভান কুয়েত)
সিঙ্গাপুরের সঙ্গে তবু সম্মানজনক ড্র করেছিল ভারত। কিন্তু মঙ্গলবার ভিয়েতনামের কাছে গোহারা হেরে গেল ভারত। তিন গোলে নয়, হারটা আরও বড় ব্যবধানে হতে পারত যদি না গোলকিপার গুরপ্রীত সিং বেশ কয়েকটি অসাধারণ সেভ না করতেন। শেষ পর্যন্ত দুটো ম্যাচেই জিতে ত্রিদেশীয় হাং থিং টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হল ভিয়েতনামই। দুটো ম্যাচ থেকে ভারতের সংগ্রহ মাত্র এক পয়েন্ট। থং নাহাট স্টেডিয়ামে মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে গোল খেয়ে যায় ভারত। বিরতির পর তারা আরও দুটি গোল খায়। ভারতের আক্রমণ বলে কিছু ছিল না। সুনীল ছেত্রী যতই আফগানিস্থান কিংবা ্হংকংয়ের বিরুদ্ধে গোল করুন না কেন বড় প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে এখন একেবারে অচল। মুশকিল হচ্ছে ভারতের কোচ ইগর স্টিমাকের হাতে তেমন স্ট্রাইকারও নেই। আশিক কুরুনিয়ন তো আর স্ট্রাইকার নয়। মিডফিল্ডার, গোলটা করতে পারেন। যেমন আগের দিন সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে করেছিলেন। কিন্তু রোজ রোজ গোল করার মতো স্ট্রাইকার তিনি নন। বাকিরা এখনও পায়ের নীচে জমি খুঁজছেন। ম্যাচ জিততে গেলে তো গোল করতে হবে। গোল করার লোকই তো নেই। ভারত জিতবে কী করে?
সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিম থেকে স্টিমাক কয়েকটি পরিবর্তন করেছিলেন। সেন্টার ব্যাকে নামানো হয় সন্দেশ ঝিঙ্গনকে। তাঁর পাশে খেলানো হয় চিঙ্গেলসেনা সিংকে। রাইট ব্যাকে সরে যান আনোয়ার আলি। লেফট ব্যাকে অবশ্য আকাশ মিশ্রই ছিলেন। মাঝ মাঠে অনিরুদ্ধ থাপা, জিকসন সিং, সাহাল আব্দুল সামাদের সঙ্গে নামানো হয় উদান্ত সিংকে। লিস্টন কোলাসোকে শুরু থেকে নামাননি স্টিমাক। সামনে সুনীল ছেত্রীর সঙ্গে আশিক কুরুনিয়ন। শুরু থেকেই মাঠ ভরা দর্শকদের সামনে ভিয়েতনাম অ্যাটাকিং ফুটবল খেলতে থাকে। এবং দশ মিনিটের মধ্যে তারা প্রথম গোলটি পেয়ে যায়। কর্নার থেকে বক্সের মধ্যে বল পড়তে না পড়তেই ভলি মেরে গোল পেয়ে যান ফান ভান ডুক। শুরুতেই গোলের খোঁচা খেয়ে ভারত যে চেগে উঠবে তা কিন্তু হল না। বরং ভিয়েতনামই দ্বিগুণ উৎসাহে আক্রমণ করতে শুরু করল। এবং সেগুলো রুখতে সন্দেশ-চিঙ্গেলসানাদের সঙ্গে গুরপ্রীতকেই বেশি কসরত করতে হল। সব মিলিয়ে ভারতের এক নম্বর প্লেয়ার আর সুনীল ছেত্রী নন, গুরপ্রীত সিং। ৩৮ মিনিটে চোট পেয়ে বসে যান সামাদ। খুব যে আহামরি খেলছিলেন তা নয়। তার বদলি কে পি রাহুল তথৈবচ মাঝ মাঠে ভারতের তেমন জোর ছিল না। সুনীল-কুরুনিয়নরা বল পাবেন কী করে। অনিরুদ্ধ থাপা কিংবা জিকসন সিংরা ডিফেন্স করতেই ব্যস্ত ছিলেন। বিরতির পরেও ভারতের হাল ফেরেনি।
৪৯ মিনিটেই ভারত দু নম্বর গোলটা খেয়ে যায়। শূণ্যের একটা বল ধরে এগিয়ে যান ভান তোয়ান। সামনে ছিলেন আনোয়ার আলি। তাঁকে কাটিয়ে গোলে যে শটটি নেন, তা রুখতে পারেননি গুরপ্রীত। ৬৫ মিনিটে স্টিমাক এক সঙ্গে তিনটি পরিবর্তন করেন। সুনীল ছেত্রীর বদলে নামেন ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজ। চিঙ্গেলসানার বদলে রোশন সিং এবং উদান্ত সিংয়ের বদলে নামানো হয় লিস্টন কোলাসোকে। লিস্টন নামার পর ভারতীয় আক্রমণে একটু ঝাঁঝ আসে। বাঁ দিক থেকে তাঁর দৌড়গুলোকে থামাতে বেশ গা ঘামাতে হয় ভিয়েতনামকে। দুঃখের কথা লিস্টনের পাশে তেমন সাপোর্ট করার মতো কেউ ছিলেন না। দূর থেকে দু একটা শট যা নেওয়া হল তাতে তেমন জোর ছিল না। ভিয়েতনামের গোলকিপারকে হারাবার জন্য যা যথেষ্ট ছিল না। উল্টে ভিয়েতনামের গোলমুখী আক্রমণগুলোতে গোলের গন্ধ ছিল। কিন্তু গুরপ্রীতের জন্য গোল হয়নি। কিন্তু ৭১ মিনিটে পরিবর্ত প্লেয়ার ভান কুয়েতের শট বাঁচাতে পারেননি গুরপ্রীত। সন্দেশ ঝিঙ্গনের ক্লিয়ার করা বলটা ধরেই শট নেন ভান কুয়েত। বলটা আর গুরপ্রীতের পক্ষে ধরা সম্ভব হয়নি।
সব মিলিয়ে ভিয়েতনাম সফরে দুটো ম্যাচে ভারতীয়দের পারফরম্যান্স খুবই হতাশজনক। এসব নিয়ে কাটাছেঁড়ার সময় এখন আর নেই। আই এস এল-এর ডঙ্কা বেজে গেছে। এখন আগামি ছয় মাস শুধু আই এস এল। বিদেশিদের পাশে ভারতীয়দের যেখানে দূরবীন দিয়ে দেখতে হবে। এটাই এখনকার ভারতীয় ফুটবল।