অবশেষে এক বছর স্থগিত থাকার পর শুক্রবার উদ্বোধন হতে চলেছে টোকিও অলিম্পিকের। ২০২০ সালের অলিম্পিক হচ্ছে ২০২১ সালে। কিন্তু সব জায়গাতেই বলা হচ্ছে টোকিও আলিম্পিক ২০২০। গত বছর করোনায় আক্রমণ যখন তুঙ্গে তখন স্থগিত হয়ে গিয়েছিল অলিম্পিক। ভাবা হয়েছিল করোনামুক্ত হয়ে ২০২১-এর একই দিনে শুরু হবে টোকও অলিম্পিক। তবে একই দিনে শুরু হতে যাওয়া এই অলিম্পিক কিন্তু করোনামুক্ত নয়। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অ্যাথলিট, সাপোর্ট স্টাফ, কোচ এবং অফিসিয়ালদের মধ্যে প্রায় শ খানেক মানুষ করোনা আক্রান্ত। টোকিও শহরে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। নাগরিকদের বিভিন্ন সংগঠন চায় না এই আবহে অলিম্পিক হোক। কিন্তু আন্তর্জাতিক আলিম্পিক কমিটি ও জাপান সরকার বদ্ধপরিকর যে করেই হোক অলিম্পিক শুরু করতে হবে।
তাই ২০৬টি দেশের প্রায় এগারো হাজার অ্যাথলিট ৩৩টি খেলায় অংশ গ্রহণ করবে। অলিম্পিকের উদ্বোধনের আগেই শুরু হয়ে গেছে মেয়েদের ও ছেলেদের ফুটবল। অলিম্পিকের সেরা আকর্ষণ হচ্ছে এর উদ্বোধন। প্রতি অলিম্পিকেই দেখা যায় সংগঠক দেশ অলিম্পিকের উদ্বোধন নিয়ে নানা ধরনের নতুন নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে। হাজার হাজার শিল্পী অংশ নেয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাদের মহড়া দেখার জন্যই স্টেডিয়ামে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। কিন্তু এবার সেসব কিছুই হচ্ছে না। গোটা গেমসে দর্শকের প্রবেশ নেই। উদ্বোধনও তার ব্যাতিক্রম নয়। টোকিওর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে শুক্রবার রাত আটটায় (ভারতীয় সময় বিকাল সাড়ে চারটায়) যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে তা থাকবে দর্শকশূণ্য। তবে সারা বিশ্বের হাজারখানেক নামীদামী ব্যক্তিত্ব থাকবেন স্টেডিয়ামে। চার ঘণ্টার অনুষ্ঠান। মার্চ পাস্টের সময় সব দলেরই খেলোয়াড়ের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অফিসিয়াল থাকবেন মাত্র ছয় জন। এটা সব দলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অ্যাথলিটদের সংখ্যা এতটা কমে গেছে যে ব্রিটেনের মতো দেশ যাদের প্রতিযোগী ৩৭৬জন, তারা মাত্র তিরিশজনকে উদ্বোধনে পাঠাবে। সব মিলিয়ে টোকিও অলিম্পিকের উদ্বোধন হবে খুবই সাদামাটা।
কী করবে ভারত? তাদের প্রতিযোগীর সংখ্যা ১২৭। আর কোচ, সহকারী কোচ, সাপোর্ট স্টাফ এবং কর্মকর্তা নিয়ে আরও ১০১জন। সব মিলিয়ে ২২৮ জনের প্রতিনিধি দল ভারতের। কিন্তু মার্চ পাস্টে ছয় জনের বেশি কর্মকর্তা যেতে পারবেন না। আর প্রতিযোগী যাবেন ২২ জন। এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে, মার্চ পাস্টে ভারতের অংশগ্রহনকারী হবেন হকি (১), বক্সিং (৮), টেবলটেনিস (৪), রোয়িং (২), জিমন্যাস্টিকস (১), সাঁতার (১), নৌবাইচ (৪) এবং ফেন্সিং-এর (১) প্রতিযোগীরা। ভারেতের হয়ে উদ্বোধনে মশাল বহন করবেন হকি অধিনায়ক মনপ্রীত সিং এবং বক্সিংয়ে ছয় বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মেরি কম। শনিবার সকাল দশটাতেই ভারতের হকি ম্যাচ আছে নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে। তাই শুধু অধিনায়ক মনপ্রীত থাকবেন মার্চ পাস্টে। মেরি কমের অবশ্য শনিবার বক্সিং নেই। তাই তাঁর মার্চ পাস্টে থাকতে কোনও অসুবিধে নেই।
ভারত এবার বেশ বড় দল নিয়ে গেছে টোকিওয়। তাদের আশা এবার অন্তত দশটি পদক আসবে। এত দিন ভারতের সর্বোচ্চ পদক এসেছে লন্ডন অলিম্পিক থেকে। সেবার এসেছিল ছয়টি পদক। দুটি রুপো এবং চারটি ব্রোঞ্জ। এবার কি সেটা বাড়বে? ভারতীয়দের আশা সে রকমই। তীরন্দাজিতে ভারতের দীপিকা কুমারী বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এখন এক নম্বরে। বিশ্ব কাপে সোনা জিতেছেন তিনি। এবার তীরন্দাজি থেকে দীপিকা পদক পেতেই পারেন। এটা দীপিকার তৃতীয় অলিম্পিক। আগের দুবার তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। এবার পদক নিয়েই ফিরতে চান। তাঁর স্বামী অতনু দাস রিও অলিম্পিকের ব্যক্তিগত ইভেন্টে প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলেন। এবার তিনও পদক জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকে ৪০০ মিটারে চতুর্থ হয়েছিলেন মিলখা সিং। কিছু দিন আগে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তাঁর ইচ্ছে ছিল চলে যাওয়ার আগে অলিম্পিকে ভারত যেন অ্যাথলেটিক্সে একটা পদক জেতে। তাঁর সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি। তবে এবার জ্যাভলিনে পদক জয়ের আশা জাগিয়েছেন নীরজ চোপড়া। এশিয়ান গেমস এবং কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতেছেন নীরজ। তাঁর ছোড়া দূরত্ব অলিম্পিকে পদক জয়ের মতো। এখন দেখার অ্যাথলেটিক্সের প্রথম পদকটা তাঁর জ্যাভলিন আনতে পারে কি না। শুটিংয়ে ভারতের অভিনব বিন্দ্রা ২০০৮ সালের বেজিং অলিম্পিকে সোনা জিতেছিলেন। এবারও শুটিংয়ে পদক জয়ের সম্ভাবনা আছে। ভারতের কনিষ্ঠতম শুটার মানু ভাকের কিন্তু পদকজয়ের সম্ভাব্য দাবিদার। ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে সৌরভ চৌধুরির কাছ থেকেও পদক আশা করা হচ্ছে। ভারত্তোলনে ভারতের কর্নম মালেশ্বরী সিডনি অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। এবার কিন্তু মীরাভাই চানুর পদক জেতার সম্ভাবনা আছে। মীরাভাই ৪৯ কেজি বিভাগে বিশ্ব রেকর্ড করেছেন ১১৯ কেজি ওজন তুলে। রাজীব খেলরত্ন পদকজয়ী মীরাভাই রিও আলিম্পিকে অবশ্য ওজন তুলতেই পারেননি।
বক্সার অমিত পাঙ্গাল ৪৮ কেজি থেকে চলে গেছেন ৫২ কেজি ফ্লাই ওয়েটে। বিশ্ব মিটে তাঁর পারফরম্যান্সও ভাল। বক্সিংয়ে তাঁরও পদক পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রথম রাউন্ডে বাই পেয়ে তিনি দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেও গেছেন। কুস্তিতে ভারতের সবচেয়ে বড় বাজি বজরং পুনিয়া। ৬৫ কেজি ফ্রি স্টাইল কুস্তিতে তাঁর পদক পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। মেয়েদের কুস্তিতে বীনেশ ফোগট খুবই ভাল ফর্মে আছেন। ৫৩ কেজি ফ্রিস্টাইলে তিনি পদক জয়ের দাবিদার। তবে ভারতের পদক জয়ের সবচেয়ে বড় দাবিদার হলেন ব্যাডমিন্টনের পি ভি সিন্ধু। গত বার রিও অলিম্পিকে সিন্ধু রুপো পেয়েছিলেন ফাইনালে কেরলের ক্যারোলিন মারিনের কাছে হেরে। পাঁচ বছর আগে সিন্ধু যেখানে ছিলেন সেখান থেকে আরও এগিয়েছেন। এখন তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও। এবার মারিন আসছেন না গেমসে। তবে জাপান, তাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ার তারকারা আছেন। সিন্ধুর র্যাঙ্কিং এখন ছয়। শুরুতে তিনি সহজ প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন। এখন দেখার সোনা জিতে সিন্ধু টোকিও অলিম্পিকে সিন্ধু সভ্যতার উন্মেষ ঘটাতে পারেন কি না।