ধরুন আপনার সময় ভালো যাচ্ছে না। আপনি ভালো কিছু করতে পারেন এমনটাও কেউ মনে করছে না। কারও কোনও প্রত্যাশাই নেই আপনার থেকে। ঠিক এমন সময় কেউ আপনার পাশে এসে দাঁড়ালেন এবং পিঠ চাপড়ে বললেন, “যে যা খুশি বলুক, যার যেরকম খুশি ধারণা থাকুক তোমাকে নিয়ে তাতে কিছু যায় আসে না। আমার অগাধ বিশ্বাস তুমি সফল হবেই।” এই পাশে দাঁড়িয়ে পিঠ চাপড়ানোর লোকটা আপনার অভিভাবক হতে পারেন- শিক্ষক হতে পারেন-কোচ হতে পারেন-প্রেমিকাও হতে পারেন!
ভারতীয় টেস্ট দলের অধিনায়ক শুভমান গিলের (Shubman Gill) ক্ষেত্রে এই লোকটা সম্ভবত গৌতম গম্ভীর। SENA- তে গিলের পারফরম্যান্স গাব্বায় একটা ৯১ ছাড়া বলার মতো তেমন ছিল না। কেউ কেউ তাঁর টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল। তবে ঐ যে বললাম প্রত্যেকের সাফল্যের নেপথ্যে কেউ না কেউ একজন থাকে। ভবিষ্যতে কেউ যদি ‘স্টার’ হোন, তাহলে নেপথ্যে ‘স্টার-মেকার’ অবশ্যই থাকবেন। সূত্রের খবর, আইপিএল চলাকালীন দিল্লির গৌতম গম্ভীরের বাড়িতে শুভমান গিলের সঙ্গে প্রায় ৫ ঘন্টার বৈঠক হয়। আর সেখানে গম্ভীর শুভমানকে হয়ত আশ্বস্ত করেন, ‘’তুমি পারবেই। তোমাকে পারতেই হবে।” আজ এজবাস্টনের স্কোরবোর্ডে যখন শুভমান গিলের নামের পাশে ২৬৯ রান জ্বলজ্বল করছে, গম্ভীর নিশ্চয়ই হয়ত সেদিনের বৈঠকের কথা মনে করবেন। এর আগে রোহিত শর্মার ক্ষেত্রেও একই জিনিস হয়েছিল। প্রথমে রোহিতের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তৎকালীন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কার্যত জোর করেই তাকে ভারতীয় দলের অধিনায়ক করেছিলেন। রোহিতের ক্যাপ্টেন্সিতে ভারতের পারফরম্যান্স নেহাত মন্দ নয়- ১.২০২৩ বিশ্বকাপ ফাইনালিস্ট ২. ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ৩. ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি চ্যাম্পিয়ন। অতীতে ধোনির ক্ষেত্রে এই ভূমিকায় দেখা দিয়েছিলেন শ্রীনিবাসন। অধিনায়ক হিসেবে শুভমান কতটা সফল হবেন সেটা অবশ্যই সময় বলবে। তবে অধিনায়কত্বের দায়িত্ববোধ ব্যাটসম্যান শুভমান গিলের কেরিয়ারে রেনেসাঁ নিয়ে এসেছে বলা বাহুল্য। হেডিংলে টেস্টে ১৪৭, এজবাস্টন টেস্টে ২৬৯! এ কোন শুভমান?? এ যেন ব্যাটসম্যান শুভমান গিলের নতুন সংস্করণ! যাঁর ব্যাটে কখনও রবীন্দ্রসঙ্গীত কখনও বা ওয়েস্টার্ন পপ মিউজিকের দুর্দান্ত ফিউশন। নিমেষে ভাঙলেন সানি গাভাসকরের ৪৬ বছরের রেকর্ড! ভাঙলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলির ২৫৪ রানের রেকর্ড! ভাঙলেন শচীনের টেস্টে এক ইনিংস সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড! এই শুভমানকে নিয়ে তো স্বপ্ন দেখাই যায়। আগামী প্রজন্ম স্বপ্ন দেখতেই পারেন এই ভেবে যে একদিন শুভমানের মতো ব্যাটিং করব। ঠিক ৯০ দশকে যে প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে তারা যেমন স্বপ্ন দেখেছে যদি শচীনের মতো কোনওদিন ব্যাটিং করতে পারতাম!
আরও পড়ুন: গিলের এক ইনিংসে পিছিয়ে গেলেন কোহলি, দ্রাবিড়, শচীন, সানি!
শুভমান গিল পাঞ্জাবের হয়ে কোনওদিন অধিনায়কত্ব করেননি। ভারতীয় জুনিয়র দলের হয়েও করেননি। কে বলতে পারে হয়ত এটাই তাঁর সুপ্ত বাসনা ছিল। কেউ অধিনায়কত্বের প্রস্তাব দেননি বলে নিজেও সুপ্ত বাসনার কথা কাউকে জানাননি। আজ যখন সেই সময় এসেছে তখন দেখাচ্ছেন কী করতে পারেন তিনি! ব্যাট হাতে নিজেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। তাই তো “ডন” মুভির একটা গানের লাইন বারবার মনে পড়ছে যেখানে জিনাত আমনের কন্ঠে বাজছে, ‘’জিসকা মুঝে থা ইন্তেজার,জিসকে লিয়ে মেরা দিল বেকারার, উয়ো ঘড়ি আ গয়ি, আ গয়ি…”
ব্যাট হাতে নি:শব্দ বার্তাও দিচ্ছেন শুভমান। অধিনায়ক যখন পারফর্ম করছেন, বাকিদের নিশ্চিন্তে থাকলে চলবে না। তাঁদেরকেও পারফর্ম করতে হবে। এজবাস্টন টেস্ট ম্যাচের ২৪ ঘন্টা আগে প্রেস কনফারেন্সে বুঝিয়েও দিয়েছিলেন এটা বলে, “আমরা হেডিংলেতে ভালো খেলেছি আবার একইসঙ্গে খারাপ খেলেছি। তবে যখন খারাপ খেলেছি এতটাই খারাপ খেলেছি যে ভালোটাকে অতিক্রম করে গিয়েছে।”
প্রার্থনা এইটুকুই, শুভমানের এই ব্যাটিং শিল্পের সাক্ষী থাকুক শুধু হেডিংলে বা এজবাস্টন নয়, বিশ্বের প্রতিটি স্টেডিয়াম। সঙ্গে তাঁর ট্রেডমার্ক সেলিব্রেশন।
শেষে একটাই কথা বলার, ‘স্টার’ হওয়ার জন্য প্রয়োজন একজন ‘স্টার-মেকারের’। আপনার জীবনের সৌরভ বা গৌতম গম্ভীর বা শ্রীনিবাসন কে হবেন সেটা ঠিক করতে হবে আপনাকেই। যখন গোটা পৃথিবী একদিকে থাকলেও সে আপনার পাশে এসে পিঠ চাপড়ে বলবে, “তুমি পারবেই, তোমাকে পারতেই হবে।” বাকিটা আপনার পরিশ্রম, অধ্যাবসায়, ডেডিকেশন……
দেখুন আরও খবর: