কলকাতা: আচ্ছা, নামটা টেস্ট ক্রিকেট (Test Cricket) কেন? কারণ এই খেলায় পরীক্ষা দিতে হয় ব্যাটার, বোলার এবং ফিল্ডারকে। কীসের পরীক্ষা? দক্ষতা, দৃঢ়তা এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ধৈর্য। ভারতীয় ক্রিকেটারদের দক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলা যাবে না, দৃঢ়তাও যথেষ্ট কিন্তু অভাব ছিল ধৈর্যের।
প্রথমে আসি বোলারদের কথায়।
ভারতের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ হলে চিন্তার কিছু থাকে না। অশ্বিন, জাদেজা, অক্ষরদের লেলিয়ে দেওয়া হয় এবং তাঁরা পটাপট প্রতিপক্ষের ২০টা উইকেট তুলে নেন। কিন্তু ওভালের (The Oval) পিচ তো চিপক নয়, সেখানে উইকেট পেতে হলে নাগাড়ে এক জায়গায় বল রেখে যেতে হবে। অপেক্ষা করতে হবে ব্যাটারদের ভুলের। কিন্তু প্রথম ইনিংসে শামি-সিরাজরা বড্ড তাড়াহুড়ো করে ফেললেন। উইকেট আসছে না দেখে লাইন-লেন্থ পাল্টালেন বারবার। ট্র্যাভিস হেড (Travis Head), স্টিভ স্মিথরা (Steve Smith) তারই অপেক্ষায় বসেছিলেন। ধৈর্যের পরীক্ষায় জয়ী হয়ে ইচ্ছামতো রান করলেন তাঁরা।
একইভাবে ধৈর্যের পরীক্ষায় জিতলেন অজি বোলাররাও, হেরে গেলেন বিরাট কোহলিরা (Virat Kohli)। কামিন্স, বোল্যান্ড স্রেফ এক জায়গায় বল রেখে গেলেন। অপেক্ষা করলেন ভুলের এবং ভুল করলেন ভারতীয় ব্যাটাররা। যে বলটায় ব্যাটই চালানোর কথা না তাতে খোঁচা দিলেন কোহলি, একই দশা পুজারা এবং রাহানের। যে বল স্রেফ একটা ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করলে মিটে যায়, তাতে সুইপ করতে গিয়ে আউট রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। সত্যি বলতে অজি বোলারদের বেশি কষ্ট করতে হয়নি, উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছেন রোহিতরা।
আরও পড়ুন: WTC Final 2023 | অশ্বিনকে বসানোর কারণ বুঝতেই পারছেন না শচীন তেন্ডুলকর!
এবার আসল প্রশ্ন হল, ধৈর্যের অভাব ঘটছে কেন? প্রথমেই মাথায় আসবে আইপিএলের (IPL) কথা। ভারতীয় ক্রিকেটাররা যখন খেপে খেপে টেস্ট ফাইনাল খেলতে ইংল্যান্ডে পাড়ি দিচ্ছেন, তখনও তাঁদের আইপিএলের হ্যাংওভার কাটেনি। টানা দু’মাসের তীব্র প্রতিযোগিতার রেশ, শারীরিক ও মানসিক ধকল কাটতে অন্তত একমাস লাগে। সেখানে প্রায় সাতদিনের মধ্যে একেবারে দীর্ঘতম ফর্ম্যাটে নেমে পড়া চাট্টিখানি কথা নয়। তবে চেতেশ্বর পুজারা (Cheteshwar Pujara) কাউন্টি ক্রিকেট খেলছিলেন, ভালো ফর্মে ছিলেন, তাঁর ব্যর্থ হওয়ার রসায়ন বোঝা যাচ্ছে না।
নাগাড়ে ব্যর্থতার জন্য যেমন অজিঙ্ক্য রাহানেকে (Ajinky Rahane) বাদ দেওয়া হয়েছিল, এবার তা করার সময় এসেছে পুজারাকেও। টেস্ট ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান তিন নম্বরে নামেন তিনি। কিন্তু ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রথম ইনিংসে জাজমেন্ট দিয়ে বোল্ড হলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হওয়ার ধরন তো আরও কুৎসিত।
প্রথম এগারো নির্বাচনেও গলদ ছিল। স্বয়ং শচীন তেন্ডুলকর রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে বসানোর কারণ খুঁজে পাননি। প্রতিপক্ষের প্রথম আটজন ব্যাটারের মধ্যে যখন পাঁচজনই বাঁ-হাতি, সেখানে পৃথিবীর এক নম্বর টেস্ট বোলার তথা অফস্পিনারকে না খেলানো জঘন্য সিদ্ধান্ত। এর সিংহভাগ দায় কোচ রাহুল দ্রাবিড়েরই। যিনি ইংল্যান্ডের পরিবেশের সঙ্গে বহুদিন ধরে ওয়াকিবহাল, তিনি এক সকালের মেঘলা আকাশ দেখে চতুর্থ সিমার খেলিয়ে দিলেন। আইসিসি ট্রফির খরা বেড়ে চলল আরও।