উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফিরতি সেমিফাইনালে বুধবার নিজেদের মাঠে রিয়াল মাদ্রিদ খেলবে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির সঙ্গে। প্রথম দফার সেমিফাইনালে ৪-৩ গোলে জিতেছিল ম্যান সিটি। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের ঘরের মাঠে পেপ গুয়েরদিওলার টিমের কাজটা কিন্তু কঠিন। প্রথম কথা নিজেদের মাঠে রিয়াল বরাবরই ভয়ঙ্কর। দ্বিতীয় কারণ হল করিম বেঞ্জামা। এই ফরাসি ফুটবলারটি এই মরসুমে দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন। প্রথম দফার সেমিফাইনালে রিয়ালের তিনটি গোলের মধ্যে দুটো গোল বেঞ্জামার। যার একটি গোল আবার পেনাল্টিতে পানেনকা শটে। গত সপ্তাহেই রিয়াল আবার লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবার নিয়ে ৩৫ বার লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হল রিয়াল। আর তাদের কোচ কার্লোস আনসোলত্তি হলেন সেই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী যাঁর কোচিংয়ে পাঁচটি দেশের ক্লাব তাদের দেশের লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এর আগে কার্লোস আনসোলত্তির কোচিংয়ে সেরা হয়েছে এ সি মিলান, চেলসি, প্যারিস সাঁ জামাঁ এবং বায়ার্ন মিউনিখ। ইতালির মানুষ আনসোলত্তি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তাঁর কোচিংয়ে এর আগে চ্যাম্পিয়ণ হয়েছে এ সি মিলান (২০০৭) এবং রিয়াল মাদ্রিদ (২০১৪)। আবার রিয়াল এবং আনসোলত্তির সামনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার সম্ভাবনা।
তবে তার আগে বুধসন্ধ্যয় রিয়ালকে জিততে হবে ম্যান সিটির বিরুদ্ধে। ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন ম্যান সিটি এ বছরও লিগ জয়ের দাবিদার। ৩৪ ম্যাচের পর ৮৩ পয়েন্ট নিয়ে তারাই এখন এক নম্বর। তবে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি কখনও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে পারেনি। গত বছরেও ফাইনালে উঠে তারা হেরে গিয়েছিল চেলসির কাছে। এবার সেমিফাইনালে নিজেদের মাঠে বারো মিনিটের মধ্যে দু গোলে এগিয়ে গিয়েও সিটি ম্যাচ জিতেছে বটে, কিন্তু ব্যবধানটা খুব বেশি বাড়িয়ে রাখতে পারেনি। এটাই স্বস্তিতে রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ আনসোলত্তিকে। গত সপ্তাহে ম্যাচ হারার পরেও মুখে চওড়া হাসি ছিল তাঁর মুখে। বুধবারের ম্যাচের পর সেই হাসি বজায় থাকে কি না তাই এখন দেখার।
দু দলেরই ফুটবলারদের ফিটনেস নিয়ে সমস্যা আছে। যেমন ম্যান সিটির রাইট ব্যাক কাইল ওয়াকার অ্যাঙ্কেল চোটের জন্য এই ম্যাচে নেই। সেন্টার ব্যাক জন স্টোনসকে পাওয়া নিয়েও সমস্যা আছে। তবে সিটির সামনের দিকের প্লেয়াররা সবাই ফিট। কেভিন দে ব্রুইন, ফিল ফডেন, রদ্রি, রহিম স্টার্লিং, রিয়াধ মাহরাজ, বের্নাদো সিলভা, গ্যাব্রিয়েল জেসুসরা শুধু ফিটই নন, মাঠে নামার জন্য ছটফট করছেন। রিয়ালের কাশেমিরো এখন ফিট। তাঁকে নামানোর কথাই ভাবা হচ্ছে। টনি ক্রূস, লুকা মদ্রিচের সঙ্গে মাঝ মাঠে কাশেমিরো থাকলে রিয়ালের আক্রমণ আরও জোরদার হবে। আর ফরোয়ার্ড লাইনে ভালভার্দে, ভিনিসিয়াস জুনিয়রের সঙ্গে করিম বেঞ্জামা থাকায় তাদের গোল পাওয়া নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ডিফেন্সে কার্ভাজাল, এডের মিলিতাও, নাচো এবং মার্সেলো নিয়ে রিয়াল ডিফেন্স বেশ শক্তপোক্ত। তবে ভুলে গেলে চলবে না এই ডিফেন্সকেই চার বার পরাস্ত করেছে সিটির ফুটবলাররা।
বুধবার সিটিকে যদি জিতে মাঠ ছাড়তে হয় তা হলে যে করেই হোক আটকাতে হবে করিম বেঞ্জামাকে। এ মরসুমে স্বপ্নের ফর্মে আছেন ফরাসি তারকা। ইতিমধ্যেই বাতাসে ভাসছে ব্যালন দি ওরের জন্য ভাবনায় রয়েছে তাঁর নাম। রিয়ালকে লা লিগা চ্যাম্পিয়ন করার পর যদি চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও চ্যাম্পিয়ন করতে পারেন তা হলে বেঞ্জামার ব্যালন দি ওর পাওয়া আটকাবে কে? কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসির বিরুদ্ধে তাদের মাঠে গিয়ে হ্যাটট্রিক করার পর ম্যান সিটির মাঠে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জোড়া গোল। এই বেঞ্জামাকে আটকাতেই হবে সিটিকে। তবে সিটির গোল করার লোক কম নেই। কেভিন দে ব্রুইন তো আছেনই, সঙ্গে ফিল ফডেন, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, রহিম স্টার্লিং কিংবা রিয়াধ মাহরেজরাও যে কোনও আক্রমণের বিরুদ্ধে গোল করার ক্ষমতা রাখেন। সব মিলিয়ে প্রথম দফার মতো আরও একটা রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের আশা করা যেতেই পারে। তবে করিম বেঞ্জামার জন্য রিয়াল মাদ্রিদকে এগিয়ে রাখতেই হচ্ছে।