ভারতীয় ফুটবলে কি ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (আই এস এল) গুরুত্ব খর্ব হতে চলেছে?
সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স(সি ও এ) যে খসড়া সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আদালতে জমা দিয়েছে তাতে কোথাও আই এস এল-এর কোনও উল্লেখই নেই। খসড়া সংবিধানে সব গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আই লিগকেই। খসড়ার ১ নম্বর ধারার ৩৩ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, “আই লিগ এ আই এফ এফ স্বীকৃত দেশের সব থেকে বড় লিগ।” এর পর ৫৬ নম্বর পয়েন্টে সব থেকে বড় লিগের (সিনিয়র মোস্ট লিগ) ব্যাখ্যা দিয়ে লেখা হয়েছে, “এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সরাসরি যোগ্যতা অর্জনের জন্য ঘরোয়া লিগে উত্তরণ এবং অবনমন থাকা জরুরি। যে লিগে সেটা আছে সেটাই দেশের সিনিয়র মোস্ট লিগ।” ঘটনা হল, আট বছর হয়ে গেলেও আই এস এল-এ কোনও অবনমন নেই। যা থেকে প্রকারন্তরে স্পষ্ট, দেশের সর্বোচ্চ আদালত নিযুক্ত সি ও এ কোনও গুরুত্বই দিতে চাইছে না আই এস এল-কে।
তিন সদস্যের সি ও এ-তে আছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এ আর দাভে, প্রাক্তন জাতীয় ফুটবল অধিনায়ক ভাষ্কর গঙ্গোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি। এই তিনজন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ৭৭ পাতার যে খসড়া সংবিধান মুখবন্ধ খামে সুপ্রিম কোর্টে জমা দিয়েছেন, তাতে আই এস এল-এর গুরুত্ব খর্ব করে আই লিগ-কেই দেশের এক নম্বর ফুটবল টুর্নামেন্ট হিসেবে গুরুত্ব দিয়েছেন। খসড়া সংবিধানে কোথাও আই এস এল-এর উল্লেখই নেই।
খসড়া সংবিধানে ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির খোলনলচে বদলে ফেলার কথাও বলা হয়েছে। এখন ফেডারেশনের ১৭ জনের কার্যকরী কমিটি রয়েছে। এতে আছেন একজন সভাপতি, একজন সিনিয়র সভাপতি, চারজন সহসভাপতি, একজন কোষাধ্যক্ষ এবং ১০ জন সদস্য। ফেডারেশনের সচিব এখন বেতনভুক কর্মচারী। তাঁকে কার্যকরী কমিটির সদস্য ধরা হয় না। সি ও এ তাদের প্রস্তাবিত সংবিধানের ২৪ নম্বর ধারায় বলেছে, কার্যকরী কমিটি আট জনের হোক। এক জন সভাপতি, এক জন সহ সভাপতি, একজন কোষাধ্যক্ষ এবং পাঁচ জন সদস্য থাকুন। এই পাঁচ সদস্যের মধ্যে তিনজনকে প্রাক্তন ফুটবলার হতেই হবে। তাঁদের নির্বাচিত করার জন্য প্লেয়ার্স কমিশন তৈরির কথাও বলা হয়েছে খসড়া সংবিধানে।
প্রসঙ্গত গত ১৮ মে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, ফেডারেশনের পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সিও এ ভারতীয় ফুটবলের প্রশাসনিক দিক সামলাবে। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি পি এস নরসিংয়ের বেঞ্চ বলেছিল, “ফেডারেশন এখন যেভাবে চলছে তা দেশের জাতীয় ক্রীড়ানীতির বিরোধী। ফেডারেশনের কাজকর্মও সন্তোষজনক নয়।” এর পর সি ও এ যে খসড়া সংবিধান সুপ্রিম কোর্টে জমা দিল, তা যদি দেশের সর্বোচ্চ আদালত মেনে নেয় তাহলে ভারতীয় ফুটবলের খোলনলচে বদলে যাবে। আই এস এল চালায় নীতা আম্বানির ফুটবল স্পোর্টস ডেভলেপমেন্ট লিমিটেড নামে একটা কোম্পানি যারা ফেডারেশনের কোনও অংশ নয়। ফেডারেশনের বাতিল কমিটির প্রেসিডেন্ট প্রফুল প্যাটেল এই এফ এস ডি এল-এর হাতে দেশের ফুটবলটাই বেচে দিয়েছিলেন। এখন তিনি আর নেই। নতুন করে আবার কার্যকরী কমিটি নির্বাচিত হবে। তার আগে সুপ্রিম কোর্ট আই এস এল-এর অস্তিত্ব বিসর্জন দেয় কি না তাই এখন দেখার।