স্বপ্ন নয়, সত্যি| এই দিনটার অপেক্ষায় কত রাত নির্জনে কেঁদেছেন লিওনেল মেসি, না দেখলেও, বিশ্বজোড়া তাঁর মিত্র থেকে শত্রু কারোরই অজানা নয়| অবশেষে ফুটবল ঈশ্বরের দেশ থেকে এবার অন্তত শূন্যহাতে ফিরতে হল না মেসিকে| ফুটবল কেরিয়ারের সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে থাকা এই রাজপুত্রকে ফুটবল ঈশ্বর দু হাত উজাড় করে নয়, উপুড় করে আশীর্বাদ করে দিয়ে গেলেন|
খেলোয়াড় জীবনে অনেক মণি মুক্ত ছড়িয়ে রাখলেও, বিশ্বকাপ বা কোপার মত আন্তর্জাতিক মঞ্চে ২০২১-এর এই দিনটার আগে ট্রফি ওঠেনি তাঁর হাতে| ২০১৪-র বিশ্বকাপ থেকে ২০১৬-র কোপা আমেরিকা| তিনবার ফাইনালিস্ট আর্জেন্তিনা| কিন্তু মাঠ ছাড়ার সময় যন্ত্রনাই সঙ্গী ছিল মেসির| ২০১৬-এ কোপায় ব্যর্থতার পর তো অবসরই ঘোষনা করে ফেলেছিলেন| ভক্তদের ডাকে এবং দেশের প্রয়োজনে সেই অবসর ভেঙে মাঠে ফিরেছিলেন| কিন্তু ২০১৮-র বিশ্বকাপে ফের হতাশা|
নিয়মের স্রোতে বেড়ে চলেছে বয়সও| এটাই হয়ত শেষ কোপা মেসির জীবনে| রেফারির শেষ বাঁশিটা বাজতেই, তাই হয়ত শিশুর মত লোফালুফি চলল মেসিকে নিয়ে| সতীর্থদের আলিঙ্গন থেকে বেরোতেই পারছিলেন না তাঁদের নায়ক| চাইছিলেনও না| ২০১৬-তে এই মারাকানা দেখেছিল মেসির জল চোখ| সেটা হতাশার| আর রোববারের মারাকানা দেখল মেসির আনন্দাশ্রূ| চ্যাম্পিয়নের ট্রফি হাতে তোলার আনন্দে এল এম টেন ভুলে গিয়েছিলেন প্রতিযোগিতার সেরা ও প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার উচ্ছ্বাস|
ব্রাজিলের মাঠে ব্রাজিলকে হারানোর কঠিন| এই নিয়ে ষষ্ঠবার নিজেদের মাঠে হারল ব্রাজিল| সেটাও আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে| এসব পরিসংখ্যানও মেসির কাছে ম্লান হয়ে গেছে কাপটা ঠোঁটে ঠেকানোর পর| ছটা ব্যালন ডি ওর জয়ও যেন তুচ্ছ আজ তাঁর কাছে| স্বপ্ন সকলের সত্যি হয় না| কিন্তু তিনি পেরেছেন| মেসি তাঁর এই সাফল্য উত্্সর্গ করেছেন তাঁর সব প্রিয় মানুষদের| নাম না করলেও, সেই তালিকায় নিশ্চয় রয়েছেন দিয়েগো মারাদোনা| তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন মেসি| আর কয়েকটা মাস বেঁচে থাকলে রোববারের ঐতিহাসিক মারাকানা একসঙ্গে দুই শিশুর উত্্সবের সাক্ষী হয়ে থাকতে পারত|