বুধবার রাতে নিজেদের মাঠ আনফিল্ডে লিভারপুল উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে মুখোমুখি হবে স্পেনের লা লিগা ক্লাব ভিলারিয়ালের। শক্তির বিচারে, নিজেদের মাঠে এই ম্যাচে লিভারপুল ভীষণভাবে ফেভারিট। কিন্তু এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভিলারিয়াল যেভাবে সিংহশিকারী হয়ে উঠেছে তাতে যতক্ষণ না ম্যাচের উপর যবনিকা পড়ে ততক্ষণ কিছু বলা যাবে না। কারণ লা লিগায় সাত নম্বরে থাকা ভিলারিয়াল এবার প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে জুভেন্তাসকে হারাবার পর যখন কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের মুখোমুখি হল, তখন তাদের অতি বড় সমর্থকও ভাবতে পারেনি যে তাদের ক্লাব ছয় বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে দেবে। প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে ভিলারিয়াল ১-০ জেতবার পর মন হয়েছিল ফিরতি ম্যাচে বায়ার্ন উড়িয়ে দেবে স্পেনের টিমকে। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। নিজেদের মাঠে বায়ার্ন এগিয়ে থেকেও ম্যাচ জিততে পারেনি। শেষ দিকে গোল খেয়ে ম্যাচ ড্র হয় এবং দুই পর্ব মিলিয়ে ২-১ গোলে জিতে যায় উনাই এমেরির টিম।
বুধবার লিভারপুলের বিরুদ্ধে এমেরির টিমের অবশ্য সেই সুবিধে নেই। নিজেদের মাঠে লিভারপুল ভীষণ ভয়ঙ্কর। আর এই মরসুমে তো তারা খুবই ভাল খেলছে। ইতিমধ্যেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে লিগ কাপে। ফাইনালে উঠে পড়েছে এফ এ কাপের। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে আছে। এক নম্বরে থাকা ম্যাঞ্চেস্টার সিটির তুলনায় তারা পিছিয়ে মাত্র এক পয়েন্টে। এর সঙ্গে জুরগেন ক্লপের দল যদি শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তাহলে এক মরসুমে চারটি ট্রফি জয়ের বিরল কৃতিত্ব অর্জন করবে। শেষ পর্যন্ত কী হবে তা অনুমানের বিষয়। কিন্তু বুধবারের সেমিফাইনালে ক্লপের দল যে ফেভারিট তা নিশ্চিত করে বলা যায়। কেন ফেভারিট? প্রথম কথা লিভারপুলের এই টিমটা বহু দিন এক সঙ্গে খেলছে। ক্লপ নিজেও টিমটার দায়িত্বে প্রায় ছয় বছর হয়ে গেল। টিমটাকে তিনি চেনেন নিজের হাতের তালুর মতো করে। তাঁর কোচিংয়েই লিভারপুল সাতাশ বছর পর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জিতেছে। তাঁর কোচিংয়েই ২০০৫ সালের পর ২০১৯ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। তার আগে ২০১৮ সালেও ফাইনালে খেলেছে।
ক্লপের টিমের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হল তাদের ফরোয়ার্ড লাইন। মিশরের মহম্মদ সালাহ, সেনেগালের সাদিও মানে এবং ব্রাজিলের রবের্তো ফিরমিনোকে নিয়ে গড়া তাঁর ফরোয়ার্ড লাইনের ভেদশক্তি দুর্ভেদ্য। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মহম্মদ সালাহের প্রচুর গোল। এখন পর্যন্ত তাঁর গোল সংখ্যা ৩৩। আর চারটি গোল করলে তিনি ছাপিয়ে যাবেন সের্গেই অগুয়েরো এবং দিদিয়র দ্রোগবার ৩৬টা গোল করার রেকর্ড। তবে বুধবারের ম্যাচে লিভারপুল পাবে না রবের্তো ফিরমিনোকে। চোটের জন্য তিনি হয়তো ম্যাচে নেই। তাঁর বদলে খেলার কথা লুইস দিয়াজের।
তবে বাকি টিম অপরিবর্তিত থাকবে। গোলে ব্রাজিলের আলিসন বেকার। চার ডিফেন্ডার ট্রেন্ট আলেক্সজান্দার আর্নল্ড, ইব্রাহিম কোনাতে, ভার্জিল ফান ডিক এবং অ্যান্ডি রবার্টসন। এদের মধ্যে ফ্রান্সের সেন্টার ব্যাক ইব্রাহিম কোনাতে আবার ইদানিং গোলও করছেন। তিন মিডফিল্ডার জর্ডন হেন্ডারসন, ফাবিনহো এবং থিয়াগো আলাকান্তারা। সব মিলিয়ে লিভারপুল একেবারে সেট টিম।
ভিলারিয়াল এই মরসুমে যে জায়গায় আছে তাতে তারা কখন কী করবে তা বলা যায় না। তবে হারার আগে যে তারা হারবে না তা বলা যায়। তাদের বড় সমস্যা হয়ে গেছে। টিমের এক নম্বর স্ট্রাইকার জেরার্ড মোরেনোকে তারা পাচ্ছে না এই ম্যাচে। তবে এ বছর যাঁর গোলে ভিলারিয়াল অনেক ম্যাচ জিতেছে সেই আর্নাউট ডানজুমা অবশ্য থাকবেন মাঠে লিভারপুলের ডিফেন্ডারদের দক্ষতা পরখ করার জন্য। আসলে ভিলারিয়ালের তারকা কম। তাদের টিমটাই তারকা। তবে লিভারপুলকে হারানো, বিশেষ করে তাদের নিজেদের মাঠে বেশ কঠিন কাজ উনাই এমেরির ছেলেদের। তবে অঘটন তো ফুটবলেরই অঙ্গ। আরও একটা অঘটনের দিকে তাকিয়ে ভিলারিয়ালের সমর্থকরা।