এটিকে মোহনবাগান–৪ বসুন্ধরা কিংস—০
(লিস্টন কোলাসো–৩, ডেভিড উইলিয়ামস)
প্রথম একুশ মিনিটে বসুন্ধরার দুটো শট যখন এটিকে মোহনবাগানের পোস্ট এবং বারে লেগে ফিরে এল তখনও আন্দাজ করা যায়নি ম্যাচের শেষে জুয়ান ফেরান্দোর দল মাটি ধরিয়ে দেবে অস্কার ব্রুজোর ছেলেদের। কাল বৈশাখীর ঝড় বৃষ্টিতে বারো মিনিট পরে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। পঞ্চান্ন মিনিট পরে আবার যখন খেলা শুরু হল তখন যেন অন্য মোহনবাগান। এবার মাঠে আরেকটা কাল বৈশাখী উঠল। সেটা হল সবুজ মেরুন ঝড়। এবং সেই ঝড়েই উড়ে গেল বসুন্ধরা। এ এফ সি কাপের প্রথম ম্যাচে ডিফেন্সের দোষে ভুগতে হয়েছিল রয় কৃষ্ণদের। হঠাৎই চোট পেয়ে তিরি বসে যাওয়ায় খেই হারিয়ে ফেলে মোহনবাগান ডিফেন্স। কিন্তু কোচের কাজ তো ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানো। সেই কাজটাই করলেন জুয়ান ফেরান্দো। যে সন্দেশ ঝিঙ্গনকে নিয়ে সংশয় ছিল, তাঁকেই নামালেন সেন্টার ব্যাক হিসেবে প্রীতম কোটালের জায়গায়। গোলে অমরিন্দরের বদলে অর্শ আনোয়ার। কোচের এই দুটো মুভই বদলে দিল মোহনবাগানকে।
ডিফেন্স এবং গোলকিপার নিজেদের কাজটা ঠিক মতো করায় মোহনবাগান মিডফিল্ডার এবং ফরোয়ার্ডরা নিজেদের খেলাটা স্বচ্ছন্দে খেলতে পারল। চার ডিফেন্ডারের সামনে ডিফেন্সিভ ব্লকার ছিলেন দীপক টেংরি। তাঁর দু পাশে কার্ল ম্যাকহিউ এবং জনি কাউকোকে নিয়ে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল মোহনবাগান তাতে বসুন্ধরার কাজটা বেশ কঠিন হয়ে যায়। তবে শুরুতেই দাপট দেখাচ্ছিল বসুন্ধরা। ১৮ মিনিটে রবসনের ফ্রি কিকে রিমন হোসেনের হেড পোস্টে লেগে ফিরে আসে। তিন মিনিট পরে বিশ্বনাথের লম্বা থ্রো ক্লিয়ার করেছিল মোহন ডিফেন্স। সেখান থেকে বল পেয়ে যান রিমন। চলতি বলে দুরন্ত শট নেন রিমন। বল আনোয়ারের হাত ছুঁয়ে বারে লেগে ফিরে আসে। এর পর ম্যাচে শুথু মোহনবাগান। শেষ পর্যন্ত লিস্টন কোলাসোর হ্যাটট্রিক কিংবা শেষ দিকে নেমে ডেভিড উইলিয়ামসের গোলে তারা শুধু জিতলই না তাদের সামনে যে সুযোগ এসেছিল তা কাজে লাগাতে পারলে আরও বড় ব্যবধানে জয় আসতে পারত। বসুন্ধরার মাঝ মাঠ কিংবা অ্যাটাকাররা খারাপ খেলেনি। কিন্তু তাদের ডুবিয়ে দিয়েছে ডিফেন্স। এত বাজে ডিফেন্সিভ অর্গানাইজেশন নিয়ে বসুন্ধরা কীভাবে বাংলাদেশের এক নম্বর টিম হল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। ২৪ মিনিটে লিস্টনের প্রথম গোলটা তো বসুন্ধরার ডিফেন্সের উপহার। বক্সের মধ্যে বলের জন্য লড়াই চলছিল বিশ্বনাথের সঙ্গে লিস্টনের। বল বিশ্বনাথের পায়েই ছিল। কিন্তু বাঁ পায়ে বলটা ক্লিয়ার করতে গিয়ে বিশ্বনাথ ফস্কালেন। নিজে পড়েও গেলেন। লিস্টনের সামনে তখন শুধু গোলকিপার আনিসুর রহমান। আলতো পুশে বলটা গোলে রাখলেন গোয়ান উইঙ্গার। শোনা যাচ্ছে মোহনবাগান ছেড়ে তিনি চলে যাচ্ছেন মুম্বই সিটি এফ সি-তে। যদি সত্যিই যান মোহনবাগানের ক্ষতিই হবে। কারণ সারা বছর লিস্টন যে ফুটবল খেলেছেন তার জুরি মেলা ভার। গোকুলমের কাছে মোহনবাগান হারলেও ফ্রি কিক থেকে লিস্টনের গোলটার কথা ভোলা যাবে না।
২৪ মিনিটের এই গোলটার পর লিস্টন তাঁর দু নম্বর গোলটা করলেন ৩৩ মিনিটে। এবারও বসুন্ধরার ডিফেন্সের দোষে। তাদের টিম যখন আক্রমণে গেছে তখন নিজেদের অজান্তে অনেকটা উঠে গিয়েছিল ডিফেন্স। এবং চার ডিফেন্ডারই ছিলেন প্যারালাল লাইনে। পিছন থেকে যখন একটা থ্রূ পাস এল তখন চার জনেই এক লাইনে। জনি কাউকোর থ্রু পাসটা অনেকটা দৌড়ে লিস্টন বলটা ধরে গোলকিপারকে কাটিয়ে বল গোলে রাখলেন।
বিরতির পরেও লিস্টন ঝড় অব্যাহত। ৫৩ মিনিটে মনবীরকে আটকাতে ব্যর্থ হন খালেদ শফি। মনবীরের পাস থেকে গোল করেন লিস্টন। ৭২ মিনিটে লিস্টনকে তুলে ডেভিড উইলিয়ামসকে নামান ফেরান্দো। মাঠে নামার পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোল পান তিনি। শুভাশিস বসুর পাস থেকে গোল করে যান অজি ফরোয়ার্ড। তবে এর মধ্যে বসুন্ধরার বেশ কয়েকটা গোল করার সুযোগ নষ্ট করে দিয়েছেন বাগান গোলকিপার আনোয়ার। বিশেষ করে বিরতির একটু পরেই ইয়াসির আরাফতের একটা শট অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বাঁচান বাগানের তরুণ গোলকিপার আনোয়ার। সব মিলিয়ে বসুন্ধরাকে গোলের মালা পরিয়ে এ এফ সি কাপে টিকে রইল মোহনবাগান। তবে গোকুলম কেরালা যদি মেজিয়াকে হারিয়ে দেয় তাহলে কিন্তু তারাই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে এগিয়ে যাবে। কারণ বসুন্ধরার যা ফর্ম দেখা গেল তাতে গোকুলমের পক্ষে তাদের হারানো কঠিন হবে না বলেই মনে হয়।