ফুটবলের পর এবার পাকাপাকি ক্রিকেটে পা ফেললেন কলকাতার অন্যতম শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। মাঝে দুবছর পুনে টিমের দায়িত্ব নিয়েছিল তাঁর সংস্থা আরপিজি গ্রুপ। আগামী মরশুমের জন্য দুটি আরও নুতন দল নিয়ে নিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। কলকাতাতে অবশ্য এই দলের কোনো হোম হবে না। সেটা তো শুরু থেকেই কিনে রেখেছেন কিং শাহরুখ খান। তাই বাংলার এই ব্যবসায়ীকে অন্য শহরকেন্দ্রিক দল কিনতে হল। এসব তো ঠিক আছে, কিন্তু নুতন দল কিনতে যে বোর্ড বেস প্রাইস ঠিক করেছিল তা বিশাল অঙ্কের! দল কিনতে দরাদরি হয়ে তা আরও বেড়ে গেলো। শুরুর দাম ঠিক হয়েছে: ২০০০ কোটি! আর তাই হল। ১০ সংস্থার টাকা নিয়ে দল কেনার দরাদরিতে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সংস্থা আরপিএসজি (RPSG) সেই উত্তরপ্রদেশের লখনউ টিম কিনলেন ৭০৯০ কোটি টাকায়। কে বলে, বাংলায় ব্যবসা করে মুনাফা মেলে না!
বাংলার এই সংস্থার মূল ব্যবসা বিদ্যুতের। কলকাতা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই করপোরেশন ( CESC)। গোটা কলকাতা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এই সংস্থা। এখন অবশ্য আরও অনেক ব্যবসায় ঢুকে পড়েছে এই সংস্থা। বাজার ধরেছে এফএমসিজি (FMCG) প্রোডাক্ট নিয়ে। এবার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গোষ্ঠীর সঙ্গে সিঙ্গাপুরের বিদেশি সংস্থা আন্তর্জাতিক ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম-ইরেলিয়া কোম্পানি পিটিই লিমিটেড পেল অন্য একটি দল।
RPSG group has won the bid for #Lucknow at INR 7090 crores.
CVC Capital has won the bid for #Ahmedabad at INR 5625 crores.The IPL 2022 season will comprise ten teams and will have 74 matches, wherein each team will play 7 home and 7 away matches.#IPL2022 #IPLNewTeam pic.twitter.com/4D7UeuQYJo
— Wisden India (@WisdenIndia) October 25, 2021
ভারতীয় ফুটবলার জনপ্রিয় পেশাদার লিগের কলকাতা শহরের দল কিনেছিল গোয়েঙ্কা গ্রুপ। বিদেশী ক্লাবের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে শুরু এটিকে ( অ্যাথলেটিকো দ্য কলকাতা)। দলটি এই লিগে সবচেয়ে সফল দল। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় শুরু থেকে এই দলের সঙ্গে যুক্ত। এখনও সঞ্জীব গোয়েঙ্কা-সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। গতবছর থেকে এটিকে গাঁটছড়া বেঁধেছে ঐতিহ্য প্রাচীন মোহন বাগান ক্লাবের সঙ্গে। বিশাল ফ্যান বেস এখন এই দলের সঙ্গে জুড়ে গেছে।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এখন বিসিসিআই সভাপতি। এক সময়, দুই বছরের জন্য সঞ্জীব গোয়েঙ্কা পুনে দল নিয়ে নেমেছিল, আইপিএলে দুটি দল সাসপেন্ড থাকায়। তখন তা চলেছিল প্রিন্স অফ ক্যালকাটার পরামর্শে। এবার? এত টাকা দিয়ে বাংলার খেলাপ্রেমী শিল্পপতি ফুটবলের সঙ্গে সঙ্গে, ক্রিকেটেও পা রাখলেন। আমজনতার চিন্তা একটাই-বিদ্যুতের দাম আরও বাড়বে না তো?
ভারতের এই শহর কেন্দ্রিক ক্রিকেট লিগে ঢোকার জন্য যে অকশন হল , তাতে অংশ নিতে দরপত্র তুলেছিল বাংলার এই ব্যবসায়ী সংস্থাটি। কয়েক হাজার কোটি টাকার দল কিনে, তারজন্য ক্রিকেটার কেনা আর কোচিং স্টাফ সাজানো – আরও কয়েকশো কোটির ধাক্কা। তাই সামাল দিতে নাকি প্রস্তুত এই সংস্থা।
আই পি এল-১৫ তে মাঠে নেমে পড়ার দৌড়ে সামিল ছিল আরও বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী সংস্থা। যেমন , প্রাক্তন সাংসদ নবীন জিন্দালের গোষ্ঠী। টরেন্ট ফার্মা, অরবিন্দ ফার্মা, এমনকি ভাসছিল আদানি গোষ্ঠীর কথাও।
প্রায় ২২ টি সংস্থা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারমধ্যে আছে ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড ক্লাবের মালিকরা। কিন্তু বিসিসিআই বলেই দিয়েছে, বিদেশী সংস্থা সরাসরি মালিকানা নিতে পারবেনা। ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে তা নিতে পারবে।
বোর্ডের এক সূত্র থেকে জানা গিয়েছিল, ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড নাকি বোর্ডের এক প্রভাবশালী পদাধিকারীর মধ্যস্থতায় সেই কর্তার (দরপত্র তোলা) এক ইচ্ছুক ব্যবসায়ী ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছেন। রাজস্থান রয়্যালস দলেও এখন শেন ওয়ার্ণের অজি সংস্থা আংশিক মালিকানা নিয়ে বসে আছেন।
১০ লাখ টাকা দিয়ে দরপত্র তুলেছে ২২ টি সংস্থা। আর দুবাইয়ে বিডিংয়ে অংশ নিল ১০ টি সংস্থা। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড যে এখন কেন্দ্রে থাকা রাজনৈতিক দলের দখলে তা আরও একবার ঝকঝকে আয়নার মত পরিস্কার হয়ে গেল। দুটি শহর দল পেল। উত্তরপ্রদেশের লখনউ। আর গুজরাটের আহমেদাবাদ। সেখানে বাংলার শিল্পপতি ধরতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের হাত। অন্য টিম হল,বোর্ড সচিব জয় শাহ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর শহর আহমেদাবাদের। ভাই, বাঃ! সেখানে দল কিনতে, সিঙ্গাপুরে গোষ্ঠীটি-খরচ করলো ৫১৬৬ কোটি টাকা। কী বিচিত্র! লখনউতে ৭ হাজার কোটি, আর আহমেদাবাদের দর আরও ২ হাজার কোটি কম!!
এতো দেখছি অন্য কিছুর গপ্পো। অনেকটাই আগে থেকে সাজানো খেলা, কেউ যেন লড়ে দর না বাড়ায়?
আর হঠাৎ সিঙ্গাপুর গোষ্ঠী! নেপথ্যের কাহিনী হয়তো কখনো পালা বদলে জানা যাবে। এখন ‘চোখে আঙুল দাদা’ হয়েই বোঝা যাচ্ছে,কেন আহমেদাবাদ,কেন লখনউ। আর কেন নয়-কটক,ধর্মশালা,গুয়াহাটি আর ইন্দোর। বিসিসিআই এখন বিজেপির মঞ্চ-নিন্দুকেরা বলে। এসব কাণ্ড দেখলে সন্দেহ গাঢ় হবে। তাতে আর দোষ কোথায়!
ছবি: সৌ- টুইটার