মঙ্গলবার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ কোয়ালিফাইং রাউন্ডের তৃতীয় ম্যাচে ভারতের খেলা হংকংয়ের সঙ্গে। চার টিমের গ্রুপ লিগে যে দল সবার প্রথমে থাকবে তারা সরাসরি চলে যাবে এশিয়ান কাপের মূলপর্বে। কিন্তু গ্রুপে যারা দ্বিতীয় হবে তাদেরও মূল পর্বে যাওয়ার সুযোগ থাকছে। সামনের বছরের জুন-জুলাই মাসের টুর্নামেন্টে খেলবে ২৪টি দল। ইতিমধ্যেই তেরোটি দল মু। পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করছে। এশিয়ার বাকি চব্বিশটি দলকে ছটা গ্রুপে ভাগ করে খেলানো হচ্ছে। ভারত যেমন আছে গ্রুপ ডি-তে। এই ছটা গ্রুপের সেরা দলগুলো চলে যাবে মূল পর্বে। আর ছটা গ্রুপের সেরা পাঁচটি রানার্স আপও যাবে মূল পর্বে। ভারত যদি শেষ পর্যন্ত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নাও হয় তাহলেও সেরা পাঁচটি রানার্স আপ টিমের একটি হয়ে ভারত এশিয়ান কাপের মু। পর্বে যেতেই পারে।
ডি গ্রুপে ভারত ও হংকং দুটি করে ম্যাচ খেলেছে। দু দলই জিতেছে দুটি ম্যাচই। পয়েন্ট দু দলেরই ছয়। কিন্তু গোল পার্থক্যে হংকং এগিয়ে আছে। তাদের গোল পার্থক্য ৪, ভারতের ৩। তাই মঙ্গলবার যদি ভারত ম্যাচটা ড্র করে বা হারে তাহলে হংকং সরাসরি চলে যাবে মূল পর্বে। ভারতকে অপেক্ষা করতে হবে সেরা পাঁচ রানার্স হওয়ার জন্য। তবে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট হংকংকে হারানো ছাড়া আন্য কিছু ভাবছে না। ফিফা র্যাংকিংয়ে ভারতের স্থান এখন ১০৬, হংকংয়ের ১৪৬। তবে এ সব র্যাংকিং দিয়ে ম্যাচের আগাম ফল অনুমান করা কঠিন। শনিবারই তো আফগানিস্থান (ফিফা র্যাংকিং ১৫০) প্রায় রুখে দিয়েছিল ভারতকে। ৯১ মিনিটে জয়ের গোল করে মালয়ালি সাহাল আব্দুল সামাদ ভারতকে ম্যাচ জেতান। তার মাত্র দু মিনিট আগে তিনি মাঠে নেমেছিলেন। শেষ বিচারে তাই র্যাংকিং খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়।
এশিয়া জোনে হংকং যে খুব বড় প্রতিদ্বন্দ্বী তা নয়। তবে তাদের টিমে তিনজন ব্রাজিলিয়ান আছে যারা হংকংয়ের নাগরিকত্ব নিয়ে সে দেশের হয়ে খেলছে। আবার হংকং টিমের চারজন ফুটবলার খেলে চিনের সি লিগে। সে দেশে আবার করোনার প্রকোপ বাড়ায় সি লিগ এখন হচ্ছে বায়ো বাবলে। তাই সেই চারজনকে পায়নি হংকং। তাদের বাদ দিয়েই তারা এসেছে কলকাতায় খেলতে। কিন্তু আফগানিস্থান এবং কম্বোডিয়াকে হারাতে কোনও অসুবিধে হয়নি। প্রথম ম্যাচে তারা জিতেছে ২-১ গোলে, দ্বিতীয় ম্যাচে ৩-০ গোলে। আফগানিস্থানের মতো হংকং ফুটবলাররা দীর্ঘকায় নয়। শারীরিকভাবে খুব যে শক্তপোক্ত তাও বলা যাবে না। উচ্চতায় তারা খাটো। তবে প্লেয়ারদের খেলায় গতি আছে। ছেলেদের স্কিলও ভাল। ড্রিবলিং এবং পাসিং নজর কাড়ার মতো। হংকংয়ের কোচ জর্ন অ্যান্ডারসন নরওয়ের মানুষ। সেদেশের জাতীয় দলে পাঁচ বছর খেলেছেন। হংকংয়ের দায়িত্ব নেওয়ার আগে ৫৯ বছরের এই কোচ উত্তর কোরিয়ার কোচ ছিলেন। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে তিনি বলেছেন, “দেশের মাঠে ভারত অবশ্যই ফেভারিট। তার মানে যে আমরা ভারতকে ভয় পাচ্ছি তা নয়। আমরা জেতার লক্ষ্যেই মাঠে নামব।”
ভারতের কোচ ইগর স্টিমাক বলেছেন, “আফগানিস্থান ম্যাচে যেভাবে শেষ মুহুর্তে আমরা জয় ছিনিয়ে নিয়েছি তাতে একটা জিনিস পরিষ্কার এই তরুণ ছেলেরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে। গোল পার্থক্যের কথা মাথায় না রেখে আমরা জেতার জন্য মাঠে নামব।” ভারতীয় দলে খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। বিশৈষ করে ডিফেন্স এবং ফরোয়ার্ড লাইনে। গোলে গুরপ্রীতের সামনে থাকবেন ব্যাক ফোর। রোশন নাওরেম, সন্দেশ ঝিঙ্গন, আনোয়ার আলি এবং আকাশ মিশ্র। ফরোয়ার্ডে লিস্টন কোলাসো, সুনীল ছেত্রী এবং মনবীর সিং। এখন মাঝ মাঠে কোন তিনজন নামবেন সেটাই প্রশ্ন। তবে আফগানিস্থান ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন আশিক কুরুনিয়ন। তাঁর বাড়ানো বল থেকেই গোল করেছেন সাহাল আব্দুল সামাদ। তাই আশিককে শুরু থেকেই নামানোর কথা। তাঁর পাশে সুরেশ এবং জিকসন সিং থাকবেন না কি অন্য কেউ সেটাই দেখতে হবে। তবে আফগানিস্থান ম্যাচে জয়ের কাণ্ডারী সাহাল আব্দুল সামাদকে শুরু থেকে নামানো হবে না বলেই মনে হয়। সুপার সাব সাহালকে পরে নামানোর কথাই ভাবছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
তবে যে টিমই নামানো হোক না কেন ভারত জেতা ছাড়া কিছু ভাবছে না। ঘরের মাঠে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই এশিয়ান কাপের মু। পর্বে যেতে চায় ভারত। সেই ক্ষমতা কিন্তু তাদের আছে। এখন সেটা মাঠের মধ্যে করে দেখানোর পালা। আর যে টিমের ক্যাপ্টেন সুনীল ছেত্রী সেই টিম হারার আগে হারবে না। ৩৭ বছর বয়সী ভারত অধিনায়কের খেলায় এখনও মধ্যাহ্ণের তেজ। নাহলে ৮৬ মিনিটে বিশ্ব মানের ফ্রি কিক থেকে গোল করতে পারতেন না। এই সুনীল-লিস্টন কোলাসো-সাহাল সামাদদের জন্য হংকং ম্যাচেও জেতার জন্য ভারতই ফেভারিট।