গোটা ক্রিকেট দুনিয়া জানে এই পরিসংখ্যান। ভারতের মিডিয়াম পেসার কপিল দেব কোনও টেস্ট ম্যাচে একটিও ‘নো বল’ করেননি। ১৩১ টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। নেট প্র্যাকটিসেও একটি নো-বল করতেন না। শনিবার লর্ডসে ভারতের নুতন বলের অন্যতম বোলার জসপ্রীত বুমরাহ প্রথম ইনিংসে ১৩টি নো বল করলেন! ২৬ ওভারে তিনি ওভার পিছু ৩ রান করে দিলেন, কিন্তু ঝুলিতে একটিও উইকেট ঢুকল না। অথচ আগের টেস্টেই তিনি দলের সেরা বোলার ছিলেন। কপিল দেব ভারতীয় ক্রিকেটে সত্যিই ‘দেব’ হয়ে উঠেছিলেন, কারণ তিনি শৃঙ্খলার ঘেরাটোপে নিজেকে ঢুকিয়ে রাখতেন। মনে করতেন, বোলারদের নো-বল করাটা এক বড় অপরাধ। জসপ্রীত বুমরাহ কি মনে করেন জানা নেই। ২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে জর্জটাউনে পেসার জাহির খান টেস্টে ১৭ টি নো-বল করেছিলেন। সেই বছরেই বার্মিংহ্যামে ভারতীয় দল মোট ১৮ টি নো বল করেছিল। বুমরাহ এই ১৩ টি নো বলে যদি একটা ক্যাচও উঠতো, উইকেট মিলতো না। পায়ে লাগলেও নিশ্চিত এল বি ডব্লিউ বাতিল হতো। এই ইনিংসে এসব কিছু যে হয়নি, জসপ্রীত বুমরাহের বরাত ভালো।
About today?!
Expect the unexpected !…@imVkohli#Viratkohli71st pic.twitter.com/sc5S1c4GKo— Yokesh Kohli (@yokesh_kohli) August 15, 2021
তিনি একটা ব্যাপার বুঝিয়ে দিয়েছেন,ভারতীয় পেসারদের ধারাবাহিকতার অভাব রয়ে গেছে। অ্যান্ডারসন, রবিনসনের থেকে অনেক কিছু শেখার এখনও বাকি। আবার ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের জো রুটের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। দলের কঠিন অবস্থায় ব্যাট করতে এলেন। আউটই হলেন না। দলের রান প্রতিপক্ষের গণ্ডি টপকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। আর ভারতীয় অধিনায়ক? দুই বছর হতে চললো, টেস্টে সেঞ্চুরি নেই।
সাম্প্রতিক কালে ভারতের টেস্ট সাফল্য কিন্তু দলের বোলারদের জন্য। প্রতিপক্ষের ২০টি উইকেট নিয়েছেন। তাহলে, ইংল্যান্ডে হচ্ছেটা কী! ২৭২ রান উঠলো শেষ ৭ উইকেটে!
আসলে ফ্ল্যাট ব্যাটিং উইকেটে কী করলে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান ভুল করতে থাকেন, এটা এখনও দখলে আসেনি বোলিং কোচ ভারত অরুণের ছাত্রদের। কাকে ছেড়ে কার কথা লিখি!
ইশান্ত শর্মা:
এই লম্বা পেসারটি বরাবরই একটু আলুথালু। আলগোছে। সেই জোশ নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া, দেখলাম না। টিভিতে ইংল্যান্ডের মজবুত ব্যাটিং যত দেখা গেল, তত দলে না থাকা অভিজ্ঞ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ক্যামেরা বন্দি করে দেখানো হল। টিভি কমেন্ট্রির মজা হল, ক্যামেরা যা দেখাবে-তা নিয়ে বুম রাহতৎক্ষণাৎ কিছু না কিছু বলতে হয়। দল ছুট হয়ে অশ্বিনকে বসে থাকতে দেখা গেল বারবার। প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও কিছু না কিছু মন্তব্য করেই গেলেন। আর সোশ্যাল মিডিয়াতে ‘ট্রোল’ হয়েই চললো – বুমরাহের ব্যার্থতা আর অশ্বিনের প্রয়োজনীয়তা। এখনকার পেসাররা সমালোচনায় ভাসলেন। আর অশ্বিনের হয়ে বলাবলি আর লেখালেখি চলতে থাকলো।
আসলে দলের একমাত্র স্পিনার (বাঁ-হাতি) রবীন্দ্র জাদেজা সমীহ করে নিতেই, আশ্বিন নিয়ে আলোচনা চাগাড় দিয়েছে। সবচেয়ে কম রান তিনিই দিলেন (২২-১-৪৩-০)। ওভার পিছু ২রানের সামান্য কম। বাকি ৪ পেসার দিলেন, ওভারে প্রায় ৩ রান বা ৩ রানের বেশি। রুটরা ১২৮ ওভার এমন পাটা উইকেটে ব্যাট করে ৩৯১ রান তুলে নিল। অথচ শুরুতে,১৫ তম ওভারে ২৩ রানে দুই ব্যাটসম্যান ফিরে ছিলেন।
মহম্মদ সিরাজ:
পুরো ম্যাচ না দেখলেও স্কোরকার্ড দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, সবমিলিয়ে সিরাজই ব্রিটিশ ব্যাটসম্যানদের মাথা ব্যথার কারণ ছিলেন। ৪ উইকেট তুলে নিয়ে সংখ্যার বিচারে সিরাজই সেরা। আর ম্যাচ দেখলে বোঝা যেত কতগুলো সুযোগ তৈরি করেছিলেন, ব্যাটসম্যানদের ভুল করাতে।
তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ভারতীয় দল প্রেস মিটে এই সফল সিরাজকেই পাঠিয়েছিলেন। লাঞ্চের পর এই হায়দরাবাদি পেসার প্রথম স্পেলে ১৭ টি শর্ট লেংথ বল পাঠালেন রুট – বেয়ারস্টোদের। শেষ জনের অস্বস্তি বার বার ধরা পড়েছিল। সিরাজের কাছেই ধরা দিলেন বেয়ারস্টো। কিন্তু সিরাজের পথের কাঁটা হয়ে রইলেন রুট।
চার পেসার ভাবনা:
সিরাজ সাংবাদিকদের সামনে বলেছেন, ‘এটাই ঠিক হয়েছে। শুরুতে আমরা পেসাররা ৩ টি উইকেট নিয়ে ধাক্কা তো দিয়েছি। আমরা ফাস্ট বোলাররা সকলে কাজে লেগেছি। সারাক্ষণ একটা নির্দিষ্ট জায়গাতে বল রেখে গেছি। ইংল্যান্ডে ফাস্ট বোলারদের কার্যকারিতা সবসময় যথেষ্ট। তাই আমাদের অনেক কিছু করার সুযোগ থাকে। কিন্তু আমরা সেসব করছিনা। শুধু পরিকল্পনা মাফিক নির্দিষ্ট জায়গাতে বল ফেলে যাচ্ছি।’
Yeah, I’m looking forward to today’s Test Match cricket at Lord’s…. 😤 pic.twitter.com/hBjTAzJ5sD
— Stuart Broad (@StuartBroad8) August 15, 2021
ডে ফোর:
এসব লড়াইয়ের মাঝেই ইংল্যান্ড ২৭ রানে এগিয়ে গেছে। মোদ্দা কথা হল,মানসিক লড়াইয়ে এগিয়ে থাকা। প্রথম ইনিংসের দৌড়ে রুট বাহিনী এগিয়ে। এই দিয়ে আর কয়েক ঘন্টা পর চতুর্থ দিনের লড়াইয়ে নামবে দুই দল।
উইকেট যে ব্যাটিংয়ের স্বর্গ,তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কোহলিরা আর কবে প্রতিপক্ষকে চেপে ফেলবে? এই তো সুযোগ। রুট দেখিয়েছেন, এমন উইকেটে আউট হতে না চাইলে, নট আউট থাকা যায়।
টি টোয়েন্টি তে টিম ইন্ডিয়ার দাপট আছে। ৫০ ওভারেও আছে। সেই মেজাজে ব্যাটসম্যানরা ক্রিজে যাক। তারপর পেসাররা জ্বলে উঠুক।
ছবি: সৌ – টুইটার।