নবীন জী আপনার টুইটটা দেখার পর মনে হল, আজ আপনাকে নিয়েও লেখার দিন। জানি আপনি প্রচারবিমুখ, কিন্তু কাজে বিশ্বাসী। আপনি কোথাও কখনও ‘মন কি বাত’ ঢাক ঢোল পিটিয়ে জানাননি। আপনি যে স্টাইলে সকলকে নমস্কার করেন, আজ আপনাকে দুই হাত জড়ো করে সেই স্টাইলেই – নমস্কার জানাচ্ছি।
কেন? কারণ আপনার ভাবনা। সেই ২০১৮ সাল থেকে ৫ বছরের জন্য দেশের হকি দলের জন্য আপনার রাজ্য সরকার স্পনসর করছে। কেউ বলছেন, ৪১ বছর পর – কেউ পরিসংখ্যান দিয়ে বলছেন ৪৯ বছর পর দেশের পুরুষ হকি দল অলিম্পিক সেমি ফাইনালে উঠেছে। এই প্রথমবার মেয়েদের হকি দল অলিম্পিক গেমসের সেমি ফাইনালে উঠেছে। দুই দলের সামনে এখন পদক জয়ের হাতছানি। সেমি ফাইনালের বাধা টপকালে – সোনা কিংবা রুপোর পদক। সেমিতে টক্কর জিততে না পারলে, থাকবে ব্রোঞ্জ জয়ের সুযোগ।
Glory awaits!
Congratulate Indian Women’s #Hockey Team on registering a thumping victory in the quarter-final against Australia at #Tokyo2020. May the team continue its winning streak & bring glory to the country. Wish the team all the best.#Cheer4India @thehockeyindia
— Naveen Patnaik (@Naveen_Odisha) August 2, 2021
আপনার ভুবনেশ্বর শহর ঘুরে দেখেছিলাম হকি বিশ্বকাপের সময়। কলিঙ্গ স্টেডিয়ামটাই আপনার ভাবনায় বদলে গেছে। আগে পঞ্জাব – হরিয়ানা – লুধিয়ানা – ঝাড়খন্ড – বিহার ছিল হকির শহর। আজ আর শুধু হকির শহর এগুলো আর নয়। ওড়িশা বা ভুবনেশ্বর দেশের হকির শহর হয়ে গেছে – আপনার ঐকান্তিক চেষ্টায়।
আরও পড়ুন- অলিম্পিকে কবীর খানের শুভেচ্ছা
আপনি একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এমন এক সমুদ্র ঘেঁষা রাজ্য, যে রাজ্য প্রতি বছর ঝড় – ঝঞ্ঝাতে লড়াই করে। আজ টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে যে খেলার বিকাশ ঘটিয়েছেন গোটা দেশের হকির ছবিটা আজকের পর আরও বদলে যাবে। প্রায় ৪০ বছর পর।
নিজের তিন দশকের ক্রীড়া সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি , আপনি রাজনীতির মানুষ হয়েও খেলার রাজনীতির মঞ্চ করে ব্যবহার করেননি। ভুবনেশ্বর শহরে একটার পর একটা দেওয়াল দেখেছি – যেখানে হকির ছবি দেখেছি। আপনার বড় – ছোটো কোনও দেখিনি। রাস্তার ধারে বড় বড় কাট আউটে আপনার ইমেজ দেখিনি। যা মুম্বই শহরে দেখেছি প্রথমবার টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর। নেতা ধোনির ছবি আর ক্রিকেটারদের ছবি ঢাকা পড়েছিল বিসিসিআই কর্তা আর রাজনীতির কুশিলবদের ছবিতে। আমি জানি, এই সাফল্যই অন্য রাজা – মন্ত্রীদের সোশ্যাল মিডিয়াতে ‘আমাকে দেখো’ বার্তায় প্লেয়ারদের নিয়ে ভাসবেন। আপনি নন।
Congratulations Indian Women's #Hockey Team on the spectacular win over Australia to seal the semifinal berth in #Tokyo2020. What a terrific game the team played against Australia! Keep the momentum going and wish the team best of luck. #Cheer4India pic.twitter.com/mIPv3lo20a
— Naveen Patnaik (@Naveen_Odisha) August 2, 2021
একটা টুইটার বার্তা লিখেছেন। হ্যাশট্যাগগুলো দেখতে পেলাম। #হকি আছে। #টোকিও২০২০ আছে। শেষে আরও দুটো আছে। #চিয়ারফরইন্ডিয়া আর ট্যাগ করেছেন @দ্যহকিইন্ডিয়া – কে। আপনিতো ওড়িশার নাম কোথাও জুড়তে পারতেন। যেমন ক্রিকেট বা ফুটবল দলের স্পনসররা করে। সেটাও করলেন না। এখানে দেশে আবেগ জড়িয়ে – তাইকি? বার্তায় কী লিখলেন, সেটা আরও একবার এখানে দিলাম ।
ছিমছাম। সুন্দর কিছু আগাম শুভেচ্ছা। আসল সাফল্য যে এখনও আসেনি – সেটা তো শুরুর বাক্যতে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আজ গোটা দেশ জনে ভুবনেশ্বর ‘স্পোর্টস ক্যাপিটাল’ অফ ইন্ডিয়া! আপনি এটা করে দিয়েছেন। যাঁরা আপনার ভাবনার সঙ্গে মিশে গিয়ে কাজ করে চলেছেন, তাঁরা কেউ ফুটবলের, কেউ টেবিলে টেনিসের, কেউ বা শুটিংয়ের। খুব ভুল যদি না করি, গত ৫ বছর ধরে এমনটা চলছে।
বাংলা রঞ্জি জয়ী দলে ছিলেন রাজীব শেঠ। পেটানো চেহারার রাজীব মিডিয়াম পেসার ছিলেন। এখন টাটার সিনিয়র স্পোর্টস অফিসার। যে প্রজেক্টে এই সাফল্য তার পোশাকি নাম – নাভাল টাটা হকি আকাদেমি। তিনি এই প্রজেক্টের ডিরেক্টর। ক্রিকেটার এখন হকিতে। দুটোই ছোটো বলের খেলা। কিন্তু নবীন-জীর এই মিশনে রাজীব এক বড় স্তম্ভ। ওড়িশা আর টাটার যৌথ উদ্যোগে তিনি সবসময় নীরবে প্রশাসনিক কাজ করেই চলেছেন। এই প্রজেক্টের কাজ গ্রাম – গ্রামান্তরে চলে। সুন্দরগড়ের মতন আদিবাসী গ্রাম থেকে প্রতিভা তুলে আনা হচ্ছে।
দেশের কোনও রাজ্য সরকার দেশের কোনও একটি খেলার সঙ্গে স্পনসর হয়ে যুক্ত নয়। হকির সাফল্য না থাকলেও আপনি ভেবেছিলেন। ওড়িশা লেখা থাকে প্লেয়ার্সদের জার্সিতে। ইন্ডিয়া লেখার সঙ্গে সঙ্গে। বিশ্ব জুড়ে ইন্ডিয়ার নাম যেমন সাফল্যে নজর কাড়ে, আপনার ওড়িশাও সকলের নজরে। মনে। মুখে।
কলিঙ্গ স্টেডিয়াম আজ সেরা পরিকাঠামো নিয়ে মাল্টি স্পোর্টস স্টেডিয়াম। হকির হোম গ্রাউন্ড হয়ে উঠেছে। আর ভুবনেশ্বর ঘুরতে গেলে প্যাকেজে এই স্টেডিয়ামটি দেখানো হয়। দেশের গর্ব। দশের গর্ব।
পুরুষদের হকিতে সেমি ফাইনালে ওঠা নিয়ে অনেকে বলছেন ৪১ বছর পর। সকলে ১৯৮০ মস্কো অলিম্পিকে ধরে গুনছেন বছরগুলো। খেয়াল করলে দেখা যাবে, মস্কো অলিম্পিকে রাউন্ড রবিন লিগের খেলা ছিল। দুটো গ্রুপের টপ টিম ফাইনাল খেলেছিল। কোনও সেমি ফাইনাল পর্যায় বলে কিছু ছিল না। তাই ৪৯ বছর পর গোনাটা সঠিক।
ভাবা যায়, রিও অলিম্পিকে (২০১৬) যে মেয়েদের হকি দল, একটাও ম্যাচ না জিতে দেশে ফেরে – সেই দল আজ চার বছর পর সেমি ফাইনালে! আরও কিছু ফ্যাক্টর কাজ করছে। নবীন পটনায়েক এমনই এক ফ্যাক্টর।
ছবি: সৌ – টুইটার