এটাই এখন বিশ্ব ফুটবলে মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন।
লিওনেল মেসি ছয় বারের ব্যালন ডি ওর ট্রফির বিজেতা। বার্সেলোনার হয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ চার বার জিতেছেন। স্প্যানিশ ফুটবলের সব ট্রফি তাঁর জেতা। কিন্তু দেশের হয়ে কোনও ট্রফি পাননি তিনি। না কোপা আমেরিকা, না বিশ্ব কাপ। খুব কাছাকাছি পৌছেছিলেন ২০১৪-র বিশ্ব কাপ ফাইনালে। সেদিন তাঁর টিম জার্মানির কাছে হেরে গিয়েছিল। রবিবার সেই রিও দে জেনেরিও-র মারাকানা স্টেডিয়ামেই কোপা ফাইনালে মেসির আর্জেন্তিনার সঙ্গে লড়াই নেমারের ব্রাজিলের।
মেসি যে কোপা জেতার জন্য মরিয়া ছিলেন এক সময় তা বোঝা যায় যখন ২০১৬ সালে শতবার্ষিকী কোপা ফাইনালে চিলির কাছে টাই ব্রেকারে হারের পর তিনি রাগে দুঃখে ফুটবল থেকেই অবসর নিয়ে নিয়েছিলেন। পরে অবশ্য সেই সিদ্ধান্ত বদলে এখনও খেলে যাচ্ছেন। কদিন আগেই ৩৪ পেরিয়ে পঁয়ত্রিশে পা দিয়েছেন মেসি। হয়তো এটাই তাঁর শেষ কোপা। একান্তভাবেই তিনি চাইছেন অধরা ট্রফিটা হাতে নিতে।
এ বারের কোপায় মেসি যা খেলছেন বা তাঁর আর্জেন্তিনা যা খেলছে তাতে ব্রাজিলকে যে হারানো অসম্ভব তা নয়, তবে কাজটা কঠিন। মেসি নিজে চারটে গোল করেছেন। গোল করিয়েছেন পাঁচটি। তাঁর সঙ্গে নিয়মিত গোল করছেন ইন্টার মিলানের লওতারো মার্টিনেস। ডিফেন্সে নিকোলাস ওটেমন্ডির নেতৃত্বে আর্জেন্তিনা খুবই ভাল খেলছে। মেসির পাশে আছেন সের্গেই অগুয়েরো, অ্যাঞ্জেলো ডিমারিয়ারা। যাঁদের অভিজ্ঞতা এবং মার্টিনেসদের তারুণ্য দিয়ে টিমটা ভাল করে সাজিয়েছেন কোচ লিওনেল স্কালোনি। আর আছেন গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেস। আঠাশ বছর বয়সী অ্যাস্টন ভিলার গোলকিপারটি এবারের কোপায় সুযোগই পেতেন না যদি এক নম্বর গোলকিপার ফ্রাঙ্ক আর্মানি কোভিডের কবলে না পড়তেন। কিন্তু যখন সুযোগ পেলেন মার্টিনেজ তখন নিজেকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন। সেমিফাইনালে ম্যাচ যখন টাই ব্রেকারে গেল তখন কলম্বিয়ার তিনটে শট বাঁচিয়ে তিনিই ম্যাচের নায়ক।
সব মিলিয়ে আর্জেন্তিনা কিন্তু ব্রাজিলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। ১৯৯৩ সালে শেষ বার কোপা জিতেছে তারা। সেই জয়ের নায়ক ছিলেন দিয়েগো মারাদোনা। গত বছর তিনি বিশ্বশুদ্ধ মানুষকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন পরপারে। তাঁর জন্য কি এবার ট্রফিটা জিতবেন মেসিরা? কিন্তু নেমাররা কি তাদের সেই সুযোগ দেবেন? গ্যালারিতে যদিও দর্শক থাকবে না। তবু হোম টিম হিসেবে ব্রাজিল সামান্য হলেও একটু এগিয়ে থাকবে। কোয়ার্টার ফাইনালে লাল কার্ড দেখার অপরাধে ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল জেসুস দুটো ম্যাচ সাসপেন্ড হয়েছেন। তাঁকে তাই ফাইনালে পাওয়া যাবে না। কিন্তু নেমার আছেন। তাঁর সঙ্গে রবের্তো ফির্মিনো, রিচার্লিসন, লুকাস পাকুয়েতাদের সঙ্গে মাঝ মাঠে কাশেমিরো, ফ্রেডদের নিয়ে গড়া ব্রাজিলের সামনের দিকটা খুবই ভাল। গোল তারা ঠিক পেয়ে যাচ্ছে। সে ম্যাচের শুরুতেই হোক, কিংবা একশো দশ মিনিটে। ডিফেন্সে রাইট ব্যাক দানিলো, দুই সেন্টার ব্যাক এডার মিলিতাও এবং মার্ককুইনোহোস এবং লেফট ব্যাক রেনান লোরির পিছনে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির গোলকিপার এডারসন বড় ভরসা ব্রাজিলের। সব মিলিয়ে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো টিম। খেলছেও ভাল। ফাইনালে যদি মেসি বনাম নেমারের লড়াইয়ে ব্রাজিলের কোচ তিতে কোনও নতুন স্ট্র্যাটেজি বের করেন তাই এখন দেখার।
তবে আর্জেন্তিনা একটা ব্যাপারে এগিয়ে আছে। তাদের টিমে একজন মেসি আছেন। যিনি একটা ফ্রি কিক কিংবা থ্রূ পাসে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ব্রাজিল কি তাঁকে নিজের খেলা খেলতে দেবে? নিশ্চয়ই না। কারণ তিনি মেসি। তাঁকেই ঘিরেই আর্জেন্তিনার আশা। তিনিই ব্রাজিলের আশঙ্কা। এই মেসি এখন অনেকটাই পরিণত। তাঁর বয়স হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে পাঁচ বছর আগের ফুটবল আশা করা বৃথা। আর ব্রাজিল যেহেতু শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হবে তাই মেসির সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। চিলি কিংবা কলম্বিয়ার মতো তারা শুধু মেসিকে আটকানোর জন্য খেলবে না। মেসি তাই নিজের ম্যাজিক দেখানোর সুযোগ পাবেন।
কোপার ট্রফিটা তাঁর হাতে উঠবে কি না সেটা অবশ্য সময়ই বলবে।