ইন্দোর: ইন্দোরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই যেন একটা উৎসবের মেজাজ অনুভব করছি। কিছুদিন পরেই হোলি। তার আগে ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ম্যাচ যেন বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। ট্যাক্সি চালক থেকে অটো চালক। সবার মুখেই ঘুরেফিরে একটাই আলোচনার বিষয়-‘ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া তৃতীয় টেস্ট’। হোলকার স্টেডিয়ামে যেতে যেতে বেশ কিছু জিনিস চোখে পড়ল। শহরের প্রতি ধাপে ছোট ছোট শিবের মন্দির। অনেকটা ‘মহাকাল’ মন্দিরের আদলেই তৈরি। আর এই ছোট ছোট শিবের মন্দিরের মাঝে শহরের প্রানকেন্দ্রে বিরাজ করছে প্রখ্যাত ‘মহাকাল’ মন্দির। কিছুদিন আগে সূর্যকুমার যাদব এসে পুজো দিয়ে গিয়েছেন। ভারত অধিনায়ক থাকাকালীন বিরাট কোহলিও এসেছিলেন। ইন্দোরের আরও একটা বিষয় বলার সেটা হচ্ছে স্ট্রিট ফুড। দুটি বিখ্যাত ফুড স্ট্রিটের নাম ছাপ্পান দুকান এবং সারাফা বাজার। সোমবার রাতে ছাপ্পান দুকানে এসে স্ট্রিট ফুডের মজা নেন রাহুল দ্রাবিড় এবং বিক্রম রাঠোর। তবে মঙ্গলবার সকালে একেবারে অন্য দ্রাবিড়। সকাল ৯টা ৪০-এ পিচ দেখতে চলে আসেন। অনেকক্ষণ ধরে পিচ দেখেন এবং দীর্ঘক্ষণ আলাপচারিতা সারেন পিচ প্রস্তুতকারকের সঙ্গে। উইকেটে কিছুটা ঘাস আছে নজরে পড়ল। তবে মঙ্গলবার সকালে পিচে আর্দ্রতা ছিল না বললেই চলে। মনে করা হচ্ছে প্রথম দু-দিন উইকেট ব্যাটিং সহায়ক। এরপর যত খেলা এগোবে পিচ ভাঙতে শুরু করবে। সেক্ষেত্রে আবারও অ(শ্বিন)-জা(ডেজা) জুটির ম্যাজিক দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এই মুহূর্তে সবথেকে আলোচিত বিষয় হচ্ছে তৃতীয় টেস্টে রোহিত শর্মার ওপেনিং সঙ্গী কে হতে চলেছে? মঙ্গলবার ভারতীয় দলের ঐচ্ছিক অনুশীলন থাকলেও দু-দফায় নেটে ব্যাটিং করতে দেখা যায় শুভমান গিলকে। ব্যাটিং অনুশীলনের পর শুভমান গিলের সঙ্গে আলাদা করে দীর্ঘক্ষণ কথাও বলেন রাহুল দ্রাবিড় এবং বিক্রম রাঠোর। নেটে শুভমানের ব্যাটিং-এর সময় বোলিং করতে দেখা যায় স্বয়ং রাহুল দ্রাবিড়কে। এতেই কি স্পষ্ট এক রাহুলের উপর আস্থা হারিয়েছেন আরেক রাহুল? কেএল রাহুলকে ইতিমধ্যেই সহ-অধিনায়কত্বের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই শুভমানের সম্ভাবনা যে প্রবল সেটা বলাই যায়। সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রসঙ্গে রোহিত শর্মা বলেন, ‘আমরা চূড়ান্ত একাদশ এখনও ঠিক করিনি। যদি কেউ যোগ্য হয় তাহলে তাঁর সুযোগ আসবে। তবে কে সহ অধিনায়ক থাকলেন বা না থাকলেন সেটা কোনও আলোচনার বিষয়ই নয়।’ তবে বিশ্বস্থ সূত্রের খবর, কেএল রাহুলকে আরেকটা সুযোগ দিলেও দেওয়া হতে পারে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট শুভমান গিলের দিকেই। গত দুটি টেস্টে ভারতের টপ অর্ডারের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ভিন্টেজ পুল করার ভঙ্গিমায় উত্তর দেন ভারত অধিনায়ক-‘আমাদের দলে সবাই টপ অর্ডার ব্যাটার। তবে কাউকে ৫-এ ব্যাটিং করতে হয় কাউকে বা ৭-এ।’ একজন অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিকের প্রশ্নে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকেন রোহিত শর্মা। তাঁর প্রশ্ন ছিল- রবীন্দ্র জাডেজা একটি বল করার পর খুব দ্রুত পরের বলটি করেন। এরফলে ব্যাটারদের কাছে চিন্তা করার সময়ই প্রায় থাকে না বলা যায়। এটা কী টিম ইন্ডিয়ার নয়া ট্যাকটিক্স?’ রোহিত শর্মা কিছুক্ষণ তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন-‘আপনি দারুন একটা পয়েন্ট তুলে ধরেছেন।’(প্রেস কনফারেন্স রুম হাসিতে ফেটে পড়ে)
যদি ইন্দোরে ভারত সিরিজ জিতে যায় সেক্ষেত্রে আমেদাবাদের মোতেরাতে গ্রিন টপ প্রস্তুত করে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের ড্রেস রিহার্সাল হতে পারে। এই বিষয়ে একপ্রস্ত কথাও বলা হয়ে গিয়েছে বলে জানান ভারত অধিনায়ক। আর এতেই চটেছে অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্টিভ স্মিথকে এই প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করা হয়-‘ভারত অধিনায়ক বলছেন ইন্দোরে সিরিজের ফলাফল নির্ধারণ হয়ে গেলে আমেদাবাদে অন্যধরনের উইকেট হবে। এই মন্তব্য কি আপনাকে অবাক করছে না?’ উত্তরে স্মিথের সংক্ষিপ্ত জবাব- ‘এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’
তৃতীয় টেস্টে সম্ভবত খেলছেন অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক এবং ক্যামেরুন গ্রিন। আজ মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের দুই স্পিনারকে ডেকে ব্যাটিং এর মহড়া চালাতে দেখা যায় স্মিথকে। ভারতীয় স্পিনারদের খেলার জন্য বিশেষ গেমপ্ল্যানও তৈরি বলে জানান অজি অধিনায়ক। বললেন, ‘মারনাস লাবুশানের ব্যাট থেকে বড় ইনিংস হয়ত অপেক্ষা করছে এই ইন্দোরেই।’
তবে যাই হোক ইন্দোর কিন্তু রয়েছে একেবারে অন্য মেজাজে। স্টেডিয়ামের বাইরে গান বাজছে- ‘রঙ বরসে ভিগে চুনরওয়ালি রঙ বরসে…’ হোলির আবহে হোলকারকে কি রাঙাতে পারবে টিম ইন্ডিয়া? ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা কিন্তু বেশ আত্মবিশ্বাসী!