তাসখন্দ: এএফসি কাপের সেমিফাইনালের মঞ্চ| ঘরের মাঠে গোলের বন্যা বইয়ে দিল এফসি নাসাফ| হাফ ডজন গোল হজম করতে হল এটিকে-মোহনবাগানকে| ৬-০ গোলে হারল হাবাসের সবুজ-মেরুন বাহিনী| সেইসঙ্গে উঠে গেল দল নির্বাচন নিয়েও বহু প্রশ্ন|
দুবাইয়ে আটদিনের প্রস্তুতি| শেষ দুদিন উজবেকিস্তানের মাঠে চুড়ান্ত প্রস্তুতি| ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিল মোহনবাগান শিবির| লক্ষ্য ছিল ইতিহাস গড়ার| প্রতিপক্ষের দিকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল সকলের মুখে|
কিন্তু মাঠে নেমে সমস্ত হিসাবই বদলে গেল| হাড্ডহাড্ডি লড়াইয়ের আশায় থাকা অগুন্তি মোহনবাগান সমর্থক এদিন হতাশা ছাড়া আর কিছুই পেলেন না| কোচ, ফুটবলাররাও মাঠে কেবলই যেন দর্শকের ভূমিকা পালন করলেন এদিন| নাসাফের ঝড়ে খরকুটোর মতো উড়ে গেল হাবাসের দল|
প্রতিপক্ষের শক্তিশালী উইং থেকে মাঝমাঠ| ছক প্রস্তুত ছিল| মাঝমাঠ থেকে রক্ষণ মজবুত করেছিলেন হাবাসও| কিন্তু এফসি নাসাফকে আটকানোর জন্য তা হয়ত যথেষ্ট ছিল না| আশুতোষ, প্রীতমরা রীতিমত হাবুডুবু খেলেন প্রতিপক্ষকে আটকাতে|
রয় কৃষ্ণা থেকে ডেভিড উইলিয়ামসদের গোটা ম্যাচে খুঁজেই পাওয়া গেল না| হাবাসের আক্রমণের যারা প্রধান অস্ত্র, গোটা ম্যাচে তাদেরকেও দেখা গেল রক্ষণ সামলাতে নেমে আসতে| যদিও তাতে লাভের লাভ কিছু হয়নি|
ম্যাচের ৪ মিনিটে প্রথম গোল| তবে সেটা ম্যাকহিউয়ের আত্মঘাতী গোল| এই প্রতিযোগিতাতে বারবারই পিছিয়ে থেকে ঘুরে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে এটিকে-মোহনবাগানকে| প্রথম গোল খাওয়ার পর এদিনও সকলে তেমনটাই আশা করেছিল| কিন্তু ম্যাচের ভবিষ্যত যে আরও ভয়ঙ্কর তা আঁচ করতে পারেনি কেউই|
প্রথম গোলের পর থেকেই মোহনবাগানের বক্সে আক্রমণের চাপ আরও বাড়িয়েছিল এফসি নাসাফ| ১৮ থেকে ৩১ মিনিট| মাত্র ১৩ মিনিটের মধ্যে মোহনবাগানের সমস্ত স্বপ্ন ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছেন একাই হুসেন নরচেভ| হ্যাটট্রিক করেন তিনি| হার যে তখন নিশ্চিত, তা ডাগআউটে বসে পরা হাবাসের চোখে মুখেও ছিল স্পষ্ট|
এদিন মিডফিল্ডে শক্তি বাড়াতে পাঁচজনকে খেলিয়েছেন হাবাস| উইংয়ে নামিয়েছিলেন শেখ সাহিলকে| এএফসির সেমিফাইনালের মতো মঞ্চে অভিজ্ঞ প্রবীর দাস, সুসোইরাজকে বসিয়ে রেখে হঠাত সাহিলকে কেন নামালেন কাউকোর পাশে তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠছে, তেমনই লিস্টন কোলাসোর ডিফেন্সে অনুপস্থিত থাকার কারণটাও বুঝতে পারছেন না অনেকেই|
সব মিলিয়ে হাবাসের দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন যেন থেকেই যাচ্ছে| ৩-৫-২-এর স্ট্র্যাটেজি যে একেবারেই এদিন ব্যর্থ হয়েছে তা প্রথমার্ধেই পাঁচ গোলের বৃত্ত সম্পূর্ণ করে বুঝিয়ে দিয়েছে নাসাফ| মাঝে একটা পেনাল্টি ব্যর্থ না হলে, প্রথমার্ধ শেষের আগেই হয়ত হাফডজন গোল খেয়ে যেত মোহনবাগান|
বিরতির পর সুসোইরাজ থেকে লিস্টন কোলাসোদের মাঠে নামান মোহনবাগান কোচ| কিন্তু ততক্ষণে যে অনেকটাই দেরী হয়ে গিয়েছে বুঝে গিয়েছেন সকলেই| বিরতির পর অবশ্য এক গোলই দিতে পেরেছে এফসি নাসাফ| সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে সংখ্যাটা আরও বাড়তেই পারত| যদিও সেটা হয়নি|
তাসখন্দ থেকে একরাশ হতাশা আর ব্যর্থতা নিয়েই দেশে ফিরছে এটিকে-মোহনবাগান| সামনে আইএসএল| এই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে কতদিন তাদের লাগে, সেটাই দেখার|