এটিকে মোহনবাগান–১ বসুন্ধরা কিংস–১
(ডেভিড উইলিয়ামস) (ফার্নান্ডেজ)
প্রথম দুটি ম্যাচ জিতে থাকায় এ এফ সি কাপের আঞ্চলিক সেমিফাইনালে ওঠার জন্য মঙ্গলবার বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে ড্র করলেই চলত এটিকে মোহনবাগানের। কিন্তু তাদের কোচ আন্তোনিও হাবাস বার বারই বলছিলেন তিনি ড্র নয়, জিতেই যেতে চান পরের রাউন্ডে। কিন্তু তাঁর ছেলেরা শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি। বরং ২৭ মিনিটে গোল খেয়ে বিরতির সময় তারা এক গোলে পিছিয়ে ছিল এবং ৬১ মিনিটে গোল শোধ করে অপরাজিত থেকেই ডি গ্রুপের খেলা শেষ করল। তিন ম্যাচে মোহনবাগানের পয়েন্ট হল সাত, বসুন্ধরার পাঁচ। তাই মোহনবাগানই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নক আউটে গেল। তবে বিরতির ঠিক আগে বসুন্ধরার মিডফিল্ডার সুশান্ত ত্রিপুরা দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখায় লাল কার্ড দেখে ম্যাচ থেকে ছিটকে যান। তাই শেষ পঁয়তাল্লিশ মিনিট দশ জনে খেলতে হয় বসুন্ধরাকে। মোহনবাগান কিন্তু এই সুযোগটা নিতে পারেনি। গোল শোধ করে তারা পরের রাউন্ডে গেল বটে, কিন্তু বসুন্ধরাকে হারাতে পারল না। মোহনবাগানের মতোই বসুন্ধরাও গ্রুপে অপরাজিত থেকে গেল।
মোহনবাগান এই তিনটি ম্যাচে খেলল তাদের নতুন রিক্রূট ফিনল্যান্ডের জাতীয় দলের ফুটবলার জনি কাউকোকে ছাড়াই। তার উপর এই ম্যাচে তারা পায়নি দুটো হলুদ কার্ড দেখা ফরাসি মিডফিল্ডার হুগো বুমোকেও। হুগো-ই এই টিমটার গেমমেকার। আগের ম্যাচে মালদ্বীপের মেজিয়ার বিরুদ্ধেও হুগো প্রথমার্দ্ধে ছিলেন না। বিরতির পর তিনি মাঠে নামেন এবং টিম ৩-১ গোলে জেতে। এদিনও তাঁর অভাব প্রতি পদে অনুভূত হয়েছে। মোহনবাগানে খেলা তৈরি করার লোক ছিল না। ওদিকে বসুন্ধরা শুরু থেকেই ফিজিক্যাল ফুটবল খেলতে থাকে। তাদের ফুটবলাররা একটার পর একটা হলুদ কার্ড দেখতে থাকে। তবে এই ব্যাপারটাকে বাদ দিলে বসুন্ধরা কিন্তু খারাপ খেলেনি। বল দখলের লড়াইতে তারা বেশির ভাগ সময়েই টেক্কা দিয়েছে মোহনবাগানকে। এবং একের বিরুদ্ধে একের লড়াইয়ে বার বারই নিখুঁত ট্যাকল করে বল কেড়ে নিয়েছে বাগান প্লেয়ারদের কাছ থেকে। দুই প্রান্ত দিয়ে দুর্দান্ত দৌড়ে তারা বার বারই পৌছে গেছে বাগান ডিফেন্সে। কিন্তু বক্সের আশেপাশে পৌছেও ভেদশক্তির অভাবে তাদের প্রাধান্যটাকে সুযোগে পরিণত করতে পারেনি। কার্ল ম্যাকহিউ এবং প্রীতম কোটালের সেন্ট্রাল ডিফেন্স তাদের জায়গা দেয়নি।
শুধু একবারই তাদের হার মানতে হয়। ২৭ মিনিটে রবিনহো এবং ফার্নান্ডেজের কম্বিনেশন থেকে বল পেয়ে বক্সের বাঁ দিকের সামনে থেকে ফার্নান্ডেজের নিচু শট অমরিন্দরকে হার মানিয়ে গোলে ঢুকে যায়। এর আগেই অবশ্য দিনের সুবর্ন সুযোগটা নষ্ট করে বাগান। বক্সের মধ্যে ডেভিড উইলিয়ামস একেবারে সাজিয়ে দিয়েছিলেন লিস্টন কোলাসোকে। কিন্তু সামনে ফাঁকা গোল পেয়েও কোলাসো বাইরে মারেন। সতেরো মিনিটে এই গোলটা হয়ে গেলে ম্যাচের চেহারা পাল্টে যেত কি না তা অনুমানের বিষয়। তবে বিরতির আগে কিন্তু মোহনবাগান আর গোল করার সুযোগ পায়নি। তাদের এদিনের অধিনায়ক এবং টিমের প্রাণভোমরা রয় কৃষ্ণ গোল পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছেন। কিন্তু তাঁকে মোক্ষম পাস বাড়ানোর কেউ ছিলেন না। মনবীর কিংবা ডেভিড উইলিয়ামসদের মধ্যে এখনও সেই পরিপক্কতা আসেনি যাতে তাঁরা কৃষ্ণের জন্য গোলের বল বাড়াতে পারেন। বিশেষ করে শেষ পঁয়তাল্লিশ মিনিট যখন বসুন্ধরাকে দশজনে পাওয়া গেল তখন মোহনবাগানিদের আরও একটু উজ্জীবিত ফুটবল প্রত্যাশিত ছিল।
তবু রক্ষে গোল শোধ কিন্তু তারা করেছে। এবং এ ব্যাপারে সব কৃতিত্ব দিতে হবে গোল মিস করা লিস্টন কোলাসোকেই। বাঁ দিক থেকে সাইড লাইন ধরে উঠে লিস্টনের পাস বক্সের মধ্যে থাকা উইলিয়ামসকে ঠিক খুঁজে নেয়। আশে পাশে অনেক ডিফেন্ডার থাকা সত্ত্বেও উইলিয়ামস কিন্তু হালকা পুশে বলটা গোলে রেখে দেন। এর পর গোল করার মতো তেমন সুযোগ তৈরি করতে পারেনি মোহনবাগান। দূর থেকে নেওয়া কয়েকটি শট বসুন্ধরার গোলকিপার আনিসুর রহমানকে কোনও ঝামেলায় ফেলতে পারেনি। আর বসুন্ধরার কথা তো আগেই বললাম। তারা মাঝ মাঠে অনেক এগিয়ে থেকেও দ্বিতীয় গোলটা করতে পারেনি গোল মুখ খুলতে না পারার জন্য। তবু তাদের ফুটবল কিন্তু দেখতে ভালই লেগেছে। কিন্তু দিনের শেষে তো গোলটাই সব। তাই আন্তোনিও হাবাসের এটিকে এ এফ সি কাপের গ্রুপের গণ্ডি ডিঙিয়ে এখন আঞ্চলিক সেমিফাইনালে মাঠে নামার অপেক্ষায়।