এটিকে মোহনবগান–৩ এস সি ইস্ট বেঙ্গল–০
(রয় কৃষ্ণ, মনবীর সি, লিস্টন কোলাসো)
তেইশ মিনিটের মধ্যেই তিন গোল খেয়ে গেল এস সি ইস্ট বেঙ্গল। এর পর ম্যাচের কিছু থাকে না। দেখার ছিল আই এস এল-এর এ মরসুমের প্রথম ডার্বিতে শেষ পর্যন্ত এটিকে মোহনবাগান ক গোলে জেতে। কপাল তাদের ভালই বলতে হবে। শেষ পর্যন্ত ওই তিন গোলেই ম্যাচের ফয়সালা হয়ে গেল।
সব কিছু মিলিয়ে মাঠে নামার আগে ইস্ট বেঙ্গলের চেয়ে মোহনবাগান অনেকটাই এগিয়ে ছিল। বলা যেতে পারে ৬০-৪০। সেটাই ম্যাচের শুরু থেকেই ৭০-৩০ হয়ে গেল ইস্ট বেঙ্গল কোচ ম্যানুয়েল দিয়াজের জন্য। মোহনবাগানের ভয়ঙ্কর মাঝ মাঠ এবং ফরোয়ার্ড লাইনের বিরুদ্ধে তিনি বড্ড দুঃসাহসী হয়ে তিন ব্যাকে খেলা শুরু করলেন। দুই বিদেশি ডিফেন্ডারের সঙ্গে রাজু গায়কোয়াড়। টিমের বারোটা বেজে গেল তখনই। মোহনবাগান প্রথম গোল করতে সময় নিল বারো মিনিট। দু মিনিট পরেই দ্বিতীয় গোল। আর ইস্ট বেঙ্গল তিন নম্বর গোলটা খেল তেইশ মিনিটে। এই গোলটার জন্য অবশ্য লাল হলুদ গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যই দায়ী। হুগো বুমোসের থ্রূ পাসটা ধরার জন্য বাঁ দিক দিয়ে দৌড়চ্ছিলেন লিস্টন কোলাসো। বক্সের মধ্যে বল ঢুকে গেছে দেখে গোল ছেড়ে এগিয়ে এলেন অরিন্দম। কোলাসোর আগেই তিনি পৌছে গিয়েছিলেন বলের কাছে। কিন্তু বল তাঁর বুকে লেগে বেরিয়ে গেল। সেই বলটাই ধরে ফাঁকা গোলে বল ঠেলে দিলেন জীবনের প্রথম ডার্বিতে মাঠে নামা গোয়ান ফরোয়ার্ড। তিন নম্বর গোলটা খাওয়ার সময়েই চোট পান অরিন্দম। সেটা ইস্ট বেঙ্গলের পক্ষে মঙ্গলই হয়েছে। কারণ তাঁর পরিবর্তে যিনি নামলেন সেই তরুণ কিপার শুভম সেন খুবই ভাল খেললেন। তাঁর জন্যই আর গোল খেতে হয়নি ইস্ট বেঙ্গলকে। এই নিয়ে আই এস এল ডার্বিতে পর পর তিনটে ম্যাচ হারল ইস্ট বেঙ্গল।
মোহনবাগানের কোচ আন্তোনিও হাবাস তাঁর দলকে হাতের তালুর মতো চেনেন। প্রথম ম্যাচে কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে তিনি যে দল নামিয়েছিলেন ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে সেই দলই নামিয়েছিলেন। ইস্ট বেঙ্গল কোচ ম্যানুয়েল দিয়াজ ৩-৪-৩ ছকে দল নামালেন। মাঝ মাঠে ডাচ ফুটবলার ড্যারেন সিডোয়েল। তাঁর সঙ্গে বিকাশ জাইরু, হেমন্তে এবং মহম্মদ রফিক। সামনে আন্তোনিও পেরোসেভিচের সঙ্গে নাওরেম সিং। মোহনবাগানের মাঝ মাঠকে কাউন্টার করার জন্য মাঝ মাঠে চার জনকে নামানো খুব খারাপ স্ট্র্যাটেজি নয়। কিন্তু তার জন্য তিন ব্যাকে খেলা বিরাট মূর্খামি। এই সুযোগটা খুবই ভালভাবে কাজে লাগাল মোহনবাগান। মাঝ মাঠে চার জনকে রাখলেও হুগো বুমো কিংবা জনি কাউকেকে ধরতে পারেনি ইস্ট বেঙ্গল। তাঁদের পিছনে লেনি রডরিগস এত ভাল কভার করছিলেন যে অমরিন্দর সিংকে তেমন বলই ধরতে হল না। খুবই আরামে এবং নিরুদ্বেগে একটা ডার্বি খেলে দিল বাগান ডিফেন্স। জনি কাউকো ম্যাচের সেরা হলেন। তবে এই পুরস্কারটা মনবীর সিং-ও পেতে পারতেন।
কারণ সামনের দিকে রয় কৃষ্ণ, মনবীর আর লিস্টন কোলাসো অসাধরণ। ইস্ট বেঙ্গলকে দেখলে রয় কৃষ্ণর যেন আলাদা রোষ চেপে যায়। মোহনবাগানের হয়ে ৪৬টা ম্যাচ খেলে ৩৩টা গোল করলেন রয়। সঙ্গে ১৩টা আ্যাসিস্ট। আর ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচে চার গোল হয়ে গেল তাঁর। শনিবার গোল করতে মাত্র ১২ মিনিট সময় নিলেন কৃষ্ণ। ডান দিক থেকে প্রীতম কোটালের সেন্টারটা না ধরে ডান পায়ে একটা জোরালো জ্যাব। অরিন্দম শরীর ছুড়েও কিছু করতে পারেননি। দু মিনিটের মধ্যেই মনবীরের গোল। দিনের সেরা। এই মুভটাও ডান দিক থেকে। জনি কাউকোর বাড়ানো বলটা ধরে গতি বাড়িয়ে পুরো ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্সকে পিছনে ফেলে জোরালো শটে গোল করলেন। তেইশ মিনিটে লিস্টন কোলাসোর গোলটার কথা আগেই বলা হয়েছে। ইস্ট বেঙ্গল যে তার পরেও আর গোল খায়নি সেটা তাদের সৌভাগ্যই বলতে হবে। এর জন্য তাদের নতুন গোলকিপার শুভমের কথাই বলতে হবে। এই ছেলেটি অনেকগুলো বল বাঁচিয়েছেন। অরিন্দমের দিন মনে হয় শেষ হতে চলল। শুভমই এই দুঃস্বপ্নের ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গলের এক মাত্র প্রাপ্তি।
বিরতির পর ইস্ট বেঙ্গল নামিয়েছিল ড্যানিয়েল চিমাকে। কিন্তু আন্তোনিওর মতো তিনিও তেমন সাপোর্ট পাননি। দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আরও সময় লাগবে। বরং বিরতির পর আদিল খান নামায় ইস্ট বেঙ্গলের ডিফেন্সের ভারসাম্য অনেক বাড়ে। কিন্তু গোল করার মতো লোক ছিল না লাল হলুদের। লিগের সবে এটা দু নম্বর ম্যাচ। ইস্ট বেঙ্গল কোচকে টিম নিয়ে অনেক পরিশ্রম করতে হবে।