এটিকে মোহনবাগান–২ বেঙ্গালুরু এফ সি–০
(রয় কৃষ্ণ, শুভাশিস বসু)
আই এস এল ফাইনালে এটিকে মোহনবাগান হেরেছিল এফ সি মুম্বইয়ের কাছে এ বছরের চোদ্দ মার্চ। তার পর আবার তারা মাঠে নামল বুধবার মালদ্বীপের ম্যাল শহরের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। পাঁচ মাস পর মাঠে নামা এবং বেশ কজন নতুন ফুটবলার নিয়ে টিম গড়া মোহনবাগান কিন্তু প্রথম ম্যাচ বেশ ভালভাবেই উতরে গেল। এ এফ সি কাপের ডি গ্রুপের এই ম্যাচে তাদের সামনে ছিল সুনীল ছেত্রীদের বেঙ্গালুরু। কিন্তু এই বেঙ্গালুরু টিমে আগের মতো ধার বা ভার কিছুই নেই। তাছাড়া নতুন বিদেশি ফ্রান্সের হুগো বৌমো মোহনবাগানে আসায় টিমটার ওজন অনেক বেড়ে গেছে। তাই নব্বই মিনিটিই দাপটে নিয়ে খেলে মোহনবাগান বছরের প্রথম ম্যাচটা বেশ প্রাধান্য রেখেই জিতল। প্রাপ্ত সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে তারা আরও বেশি গোলে জিততে পারত। এই গ্রুপে মোহনবাগানের সঙ্গে আছে মালদ্বীপের মেজিয়া এবং বাংলাদেশের বসুন্ধরা এফ সি। মোহনবাগান টিমের যা ওজন প্রথম ম্যাচে দেখলাম তাতে হাসতে হাসতে তাদের গ্রুপের গণ্ডি পেরিয়ে আঞ্চলিক সেমিফাইনালে যেতে কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। মোহনবাগানের জয়ের নায়ক লেফট ব্যাক শুভাশিস বসু। প্রথম গোলটির ক্ষেত্রে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। আর দ্বিতীয় গোলটি তো শুভাশিস নিজেই করলেন। একজন ডিফেন্ডারের করা ওই গোলটা দেখার জন্য বহু মাইল হেঁটে আসা যায়।
মোহনবাগানের বিদেশিদের অনেককেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তার উপর যাঁকে ধরে টিম বানানো হয়েছিল সেই সন্দেশ ঝিঙ্গন এদিনই মোহনবাগান ছেড়ে ক্রোয়েশিয়ার ক্লাবে যোগ দিলেন। তাই পোড় খাওয়া কোচ আন্তোনিও হাবাস দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে নামিয়েছিলেন কার্ল ম্যাকহিউ এবং সুমিত রাঠিকে। তাঁদের দুই পাশে ছিলেন দুই পুরনো যোদ্ধা। প্রীতম কোটাল এবং শুভাশিস বসু। বেঙ্গালুরু মাঝ মাঠে জমিতে বল রেখে প্রচুর পাস খেলেছে। বলতে গেলে সারা ম্যাচে মাঝমাঠের দখল ছিল তাদেরই পায়ে। কিন্তু স্ট্রাইকিং জোনে গিয়ে তারা খেই হারিয়ে ফেলেছে। হয় মিস পাস করেছে, না হয় বেশিক্ষণ পায়ে বল রেখে বিপক্ষ ডিফেন্ডারদের বল ক্লিয়ার করার জায়গা করে দিয়েছে, না হয় বাইরে মেরেছে। তাদের দুই স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রীর খেলায় আগের সেই ঝাঁঝ নেই। যে সময়টুকু মাঠে ছিলেন তাঁকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে। বাধ্য হয়েই বিরতির একটু পরেই তাঁকে তুলে নিতে হয়। তাঁর পাশে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ক্লেটন প্রচুর ওয়ার্কলোড নিয়েছেন। গোল করার মতো জায়গায় পৌছে গিয়ে শটও নিয়েছেন। কিন্তু বাগানের নতুন রিক্রূট অমরিন্দর সিং-কে টলাতে পারেননি। গোলে অরিন্দম ভট্টাচার্যের জায়গায় অমরিন্দরকে দলে নেওয়ায় মোহনবাগান টিমের শক্তি অনেক বেড়ে গেছে।
আপ ফ্রন্টে এফ সি মুম্বই থেকে আসা ফরাসি মিডিও হুগো বৌমোর জন্য বাগান যখনই অ্যাটাকে গেছে, আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বেঙ্গালুরু ডিফেন্সে। ৩৯ মিনিটে মোহনবাগানের প্রথম গোলের আগেই বৌমো গোল করে ফেলতে পারতেন। কখনও বেঙ্গালুরুর গোলকিপার গুরপ্রীত সান্ধু আটকে দিয়েছেন তাঁর প্রয়াস, কখনও বাইরে গেছে শট। কিন্তু বলতেই হবে দশ নম্বর জার্সিধারী বৌমো যথার্থ অর্থেই দলের নিউক্লিয়াস। এরকম একজন গেমমেকারকে পেয়ে রয় কৃষ্ণদের সুবিধেই হয়েছে। হুগোর ফ্রি কিক কিংবা কর্নার কিকগুলোতে গোলের ঠিকানা লেখা থাকে। প্রথম গোলটা তাঁরই নেওয়া কর্নার কিকে। শুভাশিস বলটা হেড করে গোলের দিকে এগিয়ে দেন। সেই বলটাই হেডে গোল করে গুরপ্রীতকে অপ্রস্তুত করেন রয় কৃষ্ণ। মরসুমের প্রথম ম্যাচেই কৃষ্ণের বাঁশি বেজে গেল। খুব যে আহামরি খেলেছেন বাগান অধিনায়ক বলা যাবে না। কিন্তু তিন কাঠি-টা তো খুব ভালই চেনেন। তাই গোল পেতে অসুবিধে হয়নি। কিন্তু তাঁর পাশে ডেভিড উইলিয়মস কিংবা মনবীর সিং ভীষণ নিষ্প্রভ। উইলিয়ামস না হয় অনেক দেরিতে প্র্যাক্টিসে যোগ দিয়েছেন। ফর্মে ফিরতে তাঁর সময় লাগারই কথা। কিন্তু মনবীরের কী হল? প্রথম একাদশে থাকতে গেলে তাঁকে আরও অনেক ভাল খেলতে হবে। বরং হুগোর পাশে লেনি রডরিগস এবং দীপক টেংরির অক্লান্ত পরিশ্রম এবং বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবল বাগান মাঝমাঠকে অনেক বেশি ভারী করে তুলেছে।
ম্যাচের সেরা মুহূর্ত ৪৬ মিনিটে শুভাশিস বসুর গোল। বাঁ দিক থেকে ডেভিড উইলিয়ামসের ফরোয়ার্ড পাস ধরে বক্সের মধ্যে একজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে তাঁর বাঁ পায়ের ভলি গুরপ্রীতকে বল ধরার সুযোগ না দিয়ে গোলে ঢুকে যায়। চমৎকার গোল। এবং সেটা এক ডিফেন্ডারের পা থেকে বেরিয়েছে বলে আরও ভাল লাগল। দু গোলে হারার জন্যই নয়, বেঙ্গালুরু ডিফেন্সকে কখনও দুর্ভেদ্য মনে হয়নি। গ্যাবনের ইরন্ডু মুসাভু কিং এবং অ্যালান কোস্তার সেন্ট্রাল ডিফেন্স নিয়ে সুনীল ছেত্রীর টিম এই মরসুমে খুব বেশি দূর যেতে পারবে বলে মনে হয় না। আর মোহনবাগান?
সকাল যদি বাকি দিনটার হদিশ দেয় তাহলে এবারের মোহনবাগানের কিন্তু অনেক দূর যাওয়া উচিত।