হাঙ্গারি–১ ফ্রান্স–১
(আটিলা ফিওলা) (আঁতোয়া গ্রিজম্যান)
সত্তর শতাংশ ফুটবল খেলে এবং এক গুচ্ছের গোলের সুযোগ নষ্ট করে হাঙ্গারিকে হারাতে পারল না বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। কিলিয়ান এম্বেপে, করিম বেঞ্জামা কিংবা আঁতোয়া গ্রিজম্যানরা যা সুযোগ তৈরি করেছিলেন তার সিকি শতাংশ গোল হলেও ফ্রান্স শনিবার হাসতে হাসতে ম্যাচ জিতে যায়। কিন্তু তা তো হল না। উলট পুরান হিসেবে বিরতির ঠিক আগে একটা ঝটিতি আক্রমণ থেকে গোলও খেয়ে যেতে হল দিদিয়র দেশঁর টিমকে। কিন্তু ৬৬ মিনিটে গ্রিজম্যানের গোলে ফ্রান্স হার বাঁচাল বটে। কিন্তু না জেতার কাঁটা তাদের বেশ ভালভাবেই বিদ্ধ করল।
বুদাপেস্টের ফেরেঙ্ক পুসকাস এরিনায় এদিন তিল ধারনের জায়গা ছিল না। করোনাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে কাতারে কাতারে হাঙ্গারিয়ান মাঠে এসেছিলেন প্রিয় দলকে সমর্থন করতে। তাঁরা চেয়েছিলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হার দেখতে। যেভাবে সারাক্ষণ তাঁরা নেচে গেয়ে নিজেদের টিমকে চাগিয়ে গেলেন তাতে হাঙ্গারি যেন বারো জনে খেলার জোশ পেয়ে গেল। প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলতেন “শব্দব্রহ্ম একটা বড় ফ্যাক্টর। নিজেদের পাড়ায় বেড়ালকে বাঘ বানিয়ে দেয়।” প্রয়াত ফুটবলগুরুর কথাটা মনে পড়ছিল হাঙ্গারির লড়াই দেখতে দেখতে। কারণ প্রথম দশ মিনিট থিতু হতে সময় নিয়ে ফ্রান্স যেভাবে রে রে করে ঝাঁপিয়ে পড়ল, তাতে সামাল দিতে বুকের পাটা লাগে। অনেক শক্তধর প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে হাঙ্গারি কখনও খেই হারিয়ে ফেলেনি। তাদের গোলকিপার জিবর নার্ভ শক্ত রেখে একটার পর একটা শট বাঁচিয়েছেন। তবে তার চেয়েও বেশি শট বাইরে মেরেছেন বেঞ্জামারা।
রিয়াল মাদ্রিদের স্ট্রাইকার সাড়ে পাঁচ বছর পর দেশের জার্সিতে চারটে ম্যাচ খেলে ফেললেন। কিন্তু এখনও গোলের মুখ দেখলেন না। যাঁকে বসিয়ে বেঞ্জামাকে প্রথম একাদশে নামানো হচ্ছে সেই অলিভার জিরুকে নামানো হল শেষ পনেরো মিনিটের জন্য। অভিমানী জিরুর কোনও তাগিদ চোখে পড়েনি। তবে ফ্রান্সের গোলের জন্য তাগিদ ছিল কিলিয়ান এম্বেপের। তিন বছর আগে রাশিয়া বিশ্ব কাপে এম্বেপে যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকে তিনি অনেকটা এগিয়েছেন। এখন অনেক পরিণত। নিজে গোল করার চেষ্টার পাশাপাশি গোল করানোর জন্য বেশি সচেষ্ট ছিলেন। তাঁরই বাড়ানো মাইনাস থেকে গ্রিজম্যানের গোল। বলটা এসেছিল গোলকিপার হুগো লরিসের লম্বা গোলকিপার ভলি থেকে। প্রায় পঁচাত্তর মিটার পেরিয়ে বলটা যখন এম্বেপের পায়ে এল তখন সামনে দুই ডিফেন্ডার। ওদের এড়িয়ে ডান দিকে সরে গেলেন এম্বেপে। এবার বেঞ্জামাকে দেখে মাইনাস করলেন। ডিফেন্ডারদের ক্লিয়ারেন্সে বল পেলেন না বেঞ্জামা। কিন্তু ততক্ষণে গোলের গন্ধে আট গজের মধ্যে চলে এসেছেন গ্রিজম্যান। বলটা পেয়েই বাঁ পায়ের বুলেট শটে গোল শোধ।
ফ্রান্স গোলটা খেল ৪৭ মিনিটে। আক্রমণের নেশায় উঠে গিয়েছিলেন রাইট ব্যাক বেঞ্জামিন পাভা। বাঁ দিক থেকে কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে লেফট ব্যাক ফিওলা সোজা দৌড়তে শুরু করলেন। তাঁকে তাড়া করেও ধরতে পারেননি সেন্টার ব্যাক রাফায়েল ভারানে। বক্সের মধ্যে ঢুকে ডান পায়ের শটে গোল করলেন ফিওলা। এই গোলটার আগে এবং পরে ফ্রান্স তাদের আক্রমণ একই রকম রেখে গেল। মাঝ মাঠে অক্লান্ত পরিশ্রম করলেন এনগোলো কন্তে। তবে পল পোগবাকে এদিন স্বমূর্তিতে পাওয়া যায়নি। যাই হোক গ্রিজম্যানের গোলে সম্মান বাঁচল। পয়েন্টও এল একটা। দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে ফ্রান্স নক আউটে যাওয়ার ব্যাপারে অনেকটাই এগিয়ে গেল। এফ গ্রূপে তাদের শেষ ম্যাচ বুধবার পর্তুগালের সঙ্গে। পাঁচ বছর আগে এই পর্তুগালই প্যারিসের সাঁ দেনি স্টেডিয়ামে ফ্রান্সকে হারিয়ে ইউরো কাপটা নিয়ে গিয়েছিল লিসবনে। এবার কি সেই হারের বদলা নিতে পারবেন গ্রিজম্যানরা?