এখনই বিরাট বাহিনীর হেড কোচ হতে চান না রাহুল দ্রাবিড়! নিজের মুখে কিছু বললেন না। কিন্তু তাঁর নেওয়া একটি পদক্ষেপ তা বুঝিয়ে দিয়েছে। তিনি আবারও জাতীয় ক্রিকেট আকাডেমির দেখাশোনার দায়িত্ব পালনের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। আবার আবেদন জানিয়েছে, বোর্ডের দেওয়া বিজ্ঞাপন অনুযায়ী।
এরফলে সিনিয়র জাতীয় ক্রিকেট দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর আবারও এই দায়িত্বে থাকার সম্ভাবনা বাড়ল। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরই রবির এখনকার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। নভেম্বরের পর বিসিসিআই এই পদের জন্য বিজ্ঞাপন দিলে,শাস্ত্রী আগ্রহী হলে আবেদন করতে পারেন। এবং রাহুল এখনই এই পদে আগ্রহ না দেখিয়ে ক্রিকেটার গড়ার কাজে যুক্ত থাকতে চেয়ে রবির সুযোগের মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন।
আরও পড়ুন: রাহুলের ‘টিম’ মন্ত্রে মজেছে সকলে
সম্প্রতি বিসিসিআই বিজ্ঞাপন দিয়ে আবেদনপত্র চেয়েছিল। রাহুল দ্রাবিড়ের দুই বছরের চুক্তি ছিল। যার কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া যায় না। নুতন করে বিজ্ঞাপন দিতে হয়। আগের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে নুতন করে আবেদন করতে হয়।
Rahul Dravid re-applies for National Cricket Academy Head's post
Read @ANI Story | https://t.co/NtY64igR2Z#RahulDravid pic.twitter.com/LMlnO2N0c0
— ANI Digital (@ani_digital) August 18, 2021
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোর্ড কর্তা জানিয়েছেন, ‘রাহুল আবার এই দায়িত্ব নিতে আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। এটা থেকে স্পষ্ট, তিনি এই কাজটাই চালিয়ে যেতে চান। কোনও সন্দেহ নেই, এন সি এতে ক্রিকেটার গড়ার কাজটা তিনি নিষ্ঠা সহকারে করে চলেছেন। এটা আদর্শ সেন্টার অফ এক্সেলেন্স হয়ে উঠেছে’।
জানা গেছে এই দায়িত্ব চেয়ে আবেদনকারীদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যিনি রাহুলের সমকক্ষ।
বোর্ড এই পদে আবেদনের সময়সীমা আপাতত আরও কিছুটা বাড়িয়ে রেখেছে। তার যুক্তি একটাই, ইচ্ছুক কেউ যাতে আরও কিছু সময় হাতে পেয়ে আবেদন করতে পারেন।
আরও পড়ুন: বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে এ এফ সি কাপ অভিযান শুরু মোহনবাগানের
বিসিসিআই ঠিক করেছে ১৫ অগস্টের সীমারেখা আরও কিছুটা বাড়িয়ে রাখতে। কয়েকটা দিন বাড়িয়েও দেওয়া হয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে সকলে জেনে গেছে, এই পদের জন্য দ্রাবিড় আবার আবেদন করেছেন। এবং এটাই নিশ্চিত সফলভাবেই এই কাজ শেষ দুটি বছর করে রাখায়, রাহুলই আবার এই পদে আসবেন।
বোর্ডের এই সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্তেই অন্য কিছু ভাবনা আছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাহুলের যারা খুব কাছ থেকে দেখেছেন,জানেন-তাঁদের ধারণা স্পষ্ট। রাহুল যখন খেলেছেন, তখন পরিবারকে সময় দিয়ে পারেননি। এখন যথেষ্ট সময় দেন। জাতীয় ক্রিকেট আকাডেমি বেঙ্গালুরুতে হওয়ায়, তিনি নিজের হোম টাউনে থেকে এই কাজটি মনের আনন্দে করতে পারছেন। তাঁর দুই ছেলে। দুই ছেলেই ক্রিকেট খেলছে।
২০০৫ সালে জন্ম হয় রাহুল এবং বিজেতার প্রথম সন্তান সমিতের। ৪ বছর পরে জন্ম হয় সমিতের ভাই অন্বয়ের। দুই ভাইয়ের মধ্যে সমিত ক্রিকেট খেলছেন বাবার মতো। ইতিমধ্যে স্কুল পর্যায়ের ক্রিকেটে সমিত দুটি ডবল সেঞ্চুরি করে ফেলেছে।
রাহুল তাঁর লম্বা কেরিয়ারে ১৬৪ টি টেস্টে মোট সংগ্রহ ১৩,২৮৮ রান। সর্বোচ্চ ২৭০। উইকেট পেয়েছেন ১টি। ৩৪৪ টি ওয়ানডেতে মোট রান ১০,৮৮৯। সর্বোচ্চ ১৫৩।
বাবা আর স্বামী রাহুল এখনই মনে হয় না, পরিবার ছেড়ে বেঙ্গালুরুর বাইরে বছরের বেশি সময় কাটাতে চাইবেন। যার জন্য বেঙ্গালুরুর এন সি এ তাঁর খুব পছন্দের।
এখনও সিনিয়র দলের কোচ হলে, বাড়ির বাইরেই কাটাতে হবে বছরের বেশিরভাগ সময়। ছেলে সমিত এখন ১৬ বছরে পা রেখেছে। রাজ্যের বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলছে। বেশ নাম ডাক হয়েছে। স্কুল ক্রিকেটে অদিতি ইন্টারন্যাশনালের হয়ে বাবা রাহুলের মত প্রচুর রান করছে। তাই ছেলের থেকে বাবা রাহুল দূরে দূরে থাকতে চাইবেন না বলেই মনে করছেন ওঁর ঘনিষ্ঠরা।
রাহুল দ্রাবিড় শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছিলেন এক মাসের জন্য। আবার ফিরে এসে বেঙ্গালুরুতে আছেন পরিবারের সঙ্গে। এমনটাই আপাতত পছন্দ তাঁর।
কিন্তু বোর্ড সভাপতি প্রাক্তন সতীর্থ ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে নিয়মিত কথা হয় রাহুলের। সেই সূত্র ধরে মনে করা হচ্ছে, সিনিয়র দলের দায়িত্বে দ্রাবিড়কে নিয়ে আসতে চান সৌরভ।
আবার জাতীয় ক্রিকেট আকাডেমিকে রাহুলের দেখানো রাস্তায় চালিয়ে নিয়ে যেতে চান সৌরভ। এই কারণেই, এই পদে আবেদনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে, রাহুল আবেদন করে দেওয়ার পরও। আসলে বোর্ড দেখে নিতে চায়,দ্রাবিড়ের পর যোগ্য কারা কারা এই লিস্টে থাকছে। রাহুল নভেম্বরের পর সিনিয়র জাতীয় দলের কোচের পদে আবেদন করলে,যাতে এন সি এ যোগ্য-আগ্রহী কারোর হতে ছাড়া যায়। তাই তালিকা তৈরি করতে সময় বাড়িয়ে রাখা। কোনও সন্দেহ নেই, ভারতীয় ক্রিকেটের সাপ্লাই লাইন রাহুল দ্রাবিড়ের দক্ষতায় বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
এখন দেখার, টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দল সাফল্য না পেলে শাস্ত্রীকে সরিয়ে রাহুলকে এই দায়িত্বে সৌরভ আনতে পারেন কিনা।
ছবি:সৌ-টুইটার