মারণ গ্রূপ থেকে এক নম্বর হয়ে নক আউটের প্রথম ম্যাচে ফ্রান্স পেয়ে গেছে খুব সহজ প্রতিদ্বন্দ্বীকে। সোমবার প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে তাদের মোকাবিলা সুইৎজারল্যান্ডের, যাদের বিশ্ব ফুটবলে তেমন কৌলিন্য নেই।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের গত ইউরোর রানার্স। সব মিলিয়ে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বেলজিয়াম এক নম্বরে থাকলেও দুই নম্বর ফ্রান্সকেই বিশ্বের সেরা টিম ধরা হয়। শুধু এখনই নয়, গত তিন বছর ধরেই। তবে এবারের ইউরোতে ফ্রান্স কিন্তু এখনও সেরা খেলা খেলতে পারেনি। তবে এটাও ঠিক শুরুতেই তারা পড়ে গিয়েছিল বিশ্বের বড় দুটি দলের সামনে। জার্মানি এবং পর্তুগাল। দিদিয়র দেশঁর ছেলেদের কৃতিত্ব দিতে হবে তারা কোনও ম্যাচেই হারেনি। জার্মানিকে তারা এক গোলে হারিয়েছে, আর পর্তুগালের সঙ্গে ২-২ ড্র করেছে। এবং হাঙ্গারির সঙ্গে প্রথমার্দ্ধের গোলে পিছিয়ে গিয়েও তারা ১-১ করেছে। ফ্রান্সের তুলনায় তিন ম্যাচের ফল যে খুব ভাল হয়েছে তা বলা যাবে না। কিন্তু পরিস্থিতির বিচারে ফ্রান্সকে পাস নম্বর দিতেই হয়ে।
সোমবার রুমানিয়ার বুখারেস্টে ফ্রান্স তাই চরম ফেভারিটের তকমা নিয়েই নামবে। তাদের টিমে চোট আঘাত আছে। বার্সেলোনা স্ট্রাইকার ওসুমানু দেম্বলে পায়ের চোটের জন্য টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে গেছেন। দুই লেফট ব্যাক লুকাস ডিগ্নে এবং লুকাস হার্নান্ডেজ–দুজনেরই চোট। তবে ডিগ্নের খেলার সম্ভাবনা নেই। হার্নান্ডেজ মাঠে নামবেন। এ ছাড়া ফ্রান্সের আর কোনও চোট আঘাত নেই। সুইসদের বিরুদ্ধে ফ্রান্সকে শুধু জিতলেই হবে এমন প্রাধান্য নিয়ে খেলতে হবে যাতে পরের রাউন্ডের প্রতিদ্বন্দ্বীরা সমীহ করে। এখন পর্যন্ত ফ্রান্স যা খেলেছে তাতে তারা সেই সমীহ আদায় করতে পারেনি।
তার একটা বড় কারণ তাদের এক নম্বর স্ট্রাইকার কিলিয়ান এম্বেপের কাছ থেকে যে খেলা প্রত্যাশা করা হচ্ছে তা এখনও পাওয়া যায়নি। তিনটি ম্যাচ হয়ে গেল এখনও গোল পাননি এম্বেপে। রাশিয়া বিশ্ব কাপের নায়কের কাছ থেকে যা অপ্রত্যাশিত। তাঁর নতুন সঙ্গী করিম বেঞ্জামা প্রথম দুটি ম্যাচে গোল না পেলেও পর্তুগালের বিপক্ষে জোড়া গোল করে নিজের ফর্মে ফিরে এসেছেন। এম্বেপে নিজে গোল না পালেও হাঙ্গারি ম্যাচে তাঁর বাড়ানো বল থেকেই গোল করেছেন আঁতোয়া গ্রিজম্যান। কিন্তু এম্বেপে নিজে এখনও গোলের মুখ দেখেননি। এই ব্যাপারটা প্যারিস সাঁ জাঁমার স্ট্রাইকারকে তো বটেই দিদিয়র দেশঁকে অবশ্যই চিন্তায় রাখবে। সুইসদের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের জয়ের পাশাপাশি, এম্বেপের গোলও কাম্য।
এর সঙ্গে বলতে হবে দুই মিডফিল্ডার পল পোগবা এবং এনগোলো কন্তের কথাও। দুজনেই ফ্রান্স মাঝ মাঠের স্তম্ভ। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের পোগবা আর চেলসির কন্তেকে ভয় পায় তাঁদের প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা। কন্তে তো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে চেলসির জয়ের নায়ক। কিন্তু যে কন্তে সারা মাঠ জুড়ে খেলেন, গোলের বল বাড়ান, ডিফেন্সে নেমে ডিফেন্ডারদের পাশে থাকেন সেই কন্তেকে যেন পাওয়া যাচ্ছে না। তবে টুর্নামেন্টের শুরুতেই হেভিওয়েট দলের বিরুদ্ধে নেমে অপরাজিত থাকা ফ্রান্সের মাঝ মাঠের দুই প্রহরীকে সাধুবাদ দিতেই হবে। কারণ তাঁরা চুড়ান্ত ব্যর্থ হলে তো ফ্রান্স অপরাজিত থাকে না। তবু বলতে হচ্ছে পোগবা এবং কন্তে আরও ভাল খেলার ক্ষমতা রাখেন। সামনের ম্যাচগুলোতে সেই ফর্মে তাদের দেখতে পাওয়াই ফরাসি ভক্তদের কামনা। সুইসদের মতো নরম বিপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁরা কতটা জ্বলে ওঠেন তাই এখন দেখার।
ফ্রান্সের বাকিদের নিয়ে তেমন সমস্যা নেই। সু্ইৎজারল্যান্ড গ্রূপ থেকে তৃতীয় হয়ে নক আউটে উঠেছে। তাদের গ্রূপে ছিল ইতালি, তুরস্ক আর ওয়েলস। একেবারে দুর্বল গ্রূপ নয়। তাই সু্ইসদের কৃতিত্ব দিতেই হবে। তবে সাধারণত তাদের দৌড় শেষ হয়ে যায় নক আউটের প্রথম ম্যাচেই। এটাই দস্তুর। এমন কি ২০০৪ সালে যখন তারা নিজেদের দেশে ইউরো আয়োজনের সুযোগ পেয়েছিল তখনও একই অবস্থা। এবার তার চেয়ে যে খুব ভাল কিছু হবে তা বলা যাচ্ছে না। এখন দেখার জর্ডান সাকিরিরা কতটা লড়াই করতে পারেন।