তিন বারের চ্যাম্পিয়ন স্পেনের ইউরো অভিযানে একটা সুন্দর মজা আছে। স্পেন যদি কোয়ার্টার ফাইনালের বাধা অতিক্রম করতে পারে তাহলে তারা চ্যাম্পিয়ন হবেই হবে। শুক্রবার রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে স্পেনের সামনে সুইৎজারল্যান্ড যারা প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে এবারের সবচেয়ে বড় অঘটনটা ঘটিয়েছে। সেই টিমটাকে আর অঘটন ঘটাতে দিতে চায় না লুই এনরিকের দল। ভবিষ্যৎ কী হবে সেটা সবারই অজানা। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীত বলছে স্পেনের কাছে গত বাইশটা ম্যাচে সুইৎজারল্যান্ড মাত্র একবার জিতেছে। হেরেছে ১৬ বার। শুধু তাই নয়, ১৯৫৪ সালের বিশ্ব কাপের পর এই প্রথম কোনও বড় টুর্নামেন্টের শেষ আটে গেল সুইসরা। সেবার অবশ্য বিশ্ব কাপের আসর বসেছিল সুইসদের দেশেই।
ইউরোতে এখন পর্যন্ত যে দলগুলি টিকে আছে তাদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শুধু স্পেন আর ইতালি। লুই এনরিকের স্পেন ২০০৮ এবং ২০১২-তে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেই দল দুটোর তিনজন মাত্র প্লেয়ার আছেন এই দলে। অধিনায়ক সের্গেই বুসকোয়েটস, মিডফিল্ডার কোকে এবং ফরোয়ার্ড আলভারো মোরাতা। তাই বাকিদের কাছে এবারের টুর্নামেন্ট নিজেদের নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লড়াই। সেই লড়াইয়ে স্পেন যে দুর্দান্ত খেলছিল তা নয়। প্রথম দুটি ম্যাচে তারা সুইডেন ও পোল্যান্ডের সঙ্গে জিততে পারেনি। তবে গ্রূপের তৃতীয় ম্যাচে তারা স্লোভাকিয়াকে ৫-০ গোলে হারিয়ে দেওয়ার পর প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে গত বিশ্ব কাপের রানার্স ক্রোয়াশিয়ার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সময়ে ৫-৩ গোলে জিতেছে। নির্দ্ধারিত সময়ে ৩-৩ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ে লুকা মদ্রিচদের বিরুদ্ধে গোল করেন আলভারো মোরাতা এবং মিকেল ওয়াজবাল।
শুক্রবার স্পেনের কোচ যে প্রথম একাদশের কথা ভেবেছেন তাতে ফরোয়ার্ডে মোরাতার সঙ্গে আছেন ফেরান তোরেস এবং পাবলো সারাবিয়া। তিন মিডফিল্ডার বুসকোয়েটস, পেদ্রি এবং কোকে। বার্সেলোনার পেদ্রি খুবই ভাল খেলছেন প্রতি ম্যাচে। এখন পর্যন্ত স্পেনের সেরা প্লেয়ার তিনিই। চার ডিফেন্ডার হবেব সিজার আজপিলিকুয়েতা, এরিক গার্সিয়া, আয়মেরিক লাপোর্তে এবং জর্দি আলবা। সুইসদের হারানোর পক্ষে এই টিম যথেষ্ট বলেই মনে করছেন স্প্যানিশ কোচ।
সুইৎজারল্যান্ড কোচ ভ্লাডিমির পেতকোভিচ এই ম্যাচে পাচ্ছেন না তাঁর অধিনায়ক গ্রানিট শাকাকে। দুটো হলুদ কার্ড দেখায় এই ম্যাচে বসতে হবে তাঁকে। তাঁর জায়গায় শুরু করবেন ডেনিস জাকারিয়া। ফ্রান্স ম্যাচে জোড়া গোল করে নায়ক হয়েছিলেন বেনফিকার স্ট্রাইকার হ্যারিস সেফেরোভিচ। তাঁর পিছনে দুই মিডফিল্ডার থাকবেন মারিও গাভরানোভিচ এবং ব্রেল এম্বোলো। এই দুজনের সঙ্গে থাকবেন লিভারপুলের জর্দান সাকিরি। দলগত শক্তির বিচারে কিংবা ব্যাক্তিগতভাবে প্লেয়ারদের গুণমান যদি মাপা যায় তাহলে স্পেনই এগিয়ে। তা সত্ত্বেও আগের ম্যাচে ফ্রান্সকে হারিয়ে দিয়ে অঘটন ঘটিয়ে ফেলা সু্ইসদের হালকাভাবে নিতে চাইবে না বুসকোয়েটসরা।
ফ্রান্স যে ভুল করেছিল অর্থাৎ চার ব্যাক থেকে তিন ব্যাকে খেলা, স্পেন সেদিকে যাচ্ছে না। তারা চার ব্যাকেই খেলবে। আর তারা জোর দেবে তাদের পাসিং ফুটবলের উপর। এই পাসিং ফুটবল অর্থাৎ তিকিতাকার জোরে এক সময় বিশ্বসেরা ছিল। সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে চান এনরিকে। কিন্তু বললেই তো আর ফিরিয়ে আনা যায় না। সুইডেন কিংবা পোল্যান্ড ম্যাচে সেটা দেখাতে পারেনি স্পেন। কিন্তু স্লোভাকিয়া ম্যাচে সেটা তারা অনেকটাই পেরেছিল। এমন কি ক্রোয়াশিয়া ম্যাচেও সেই স্পেনকে অনেকটাই পাওয়া গেছে। এখন দেখার সুইসদের বিরুদ্ধে সেই স্পেনকে পাওয়া যায় কি না।
আরও একটা কথা আছে। কাগজে কলমে সুইসরা অনেকটাই পিছিয়ে। তাদের কিছুই হারাবার নেই। এমনিতেই ফ্রান্সকে হারিয়ে তারা বীরের মর্যাদা পেয়ে গেছে। স্পেনের বিরুদ্ধে তাদের কিছুই হারাবার নেই। এই আন্ডারডগ সুইৎজারল্যান্ডকেই ভয়। একবার অঘটন ঘটাবার কৃতিত্ব দেখিয়ে ফেলেছে তারা। বিশ্ব কাপজয়ী ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আশি মিনিট পর্যন্ত ১-৩ পিছিয়ে থেকেও তারা ৩-৩ করেছে এবং অতিরিক্ত সময়ে গোল না খেয়ে টাই ব্রেকারে জিতেছে। এই সুইৎজারল্যান্ড অপরিচিত। স্পেনের সুবিধে তারা সেই সুইসদের দেখে ফেলেছে। তাদের পক্ষে সব রকম প্রতিরোধ নেওয়ার সুযোগ আছে। এখন সেটাই তারা কাজে লাগাতে চায়।
সুইসদের আর অঘটন ঘটাতে দিতে চায় না স্পেন।