বহু দিন ধরেই তারা বিশ্ব ফুটবলের এক বড় শক্তি। কিন্তু বেলজিয়াম এখন পর্যন্ত না জিতেছে ইউরো না জিতেছে বিশ্ব কাপ। ইউরোতে তবু তারা একবার ফাইনালে উঠে হেরে গিয়েছে জার্মানির কাছে। সেটা সেই ১৯৮০ সালে। আর বিশ্ব কাপে তারা সেই জায়গাতেও পৌছতে পারেনি। গত বার রাশিয়ায় তাদের স্থান ছিল তৃতীয়। তা সত্ত্বেও তারা এখন বিশ্বের এক নম্বর টিম। কিন্তু শুক্রবার ইতালির বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে মিউনিখের আলেয়াঞ্জ স্টেডিয়ামে তারা কতটা লড়বে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ যে চারজনের উপর বেলজিয়াম টিমটা দাঁড়িয়ে আছে তাদের দুজনই আহতের তালিকায়। অধিনায়ক উইঙ্গার এডেন হ্যাজার্ড এবং মিডফিল্ডার কেভিন দে ব্রূইনের মাঠে নামার সম্ভাবনা খুবই কম। নেই বললেই হয়। দে ব্রূইনের আ্যাঙ্কেলের লিগামেন্টে চোট। হ্যাজার্ডের হ্যামস্ট্রিংয়ে। যে চারজনের জন্য টিমটা বিশ্বের এক নম্বর টিম তাদের দুজনেই যদি খেলতে না পারেন তাহলে অন্যদের ক্ষেত্রেও যে অসুবিধে হয় বেলজিয়ামের ক্ষেত্রেও তা হবে। রাতারাতি তো আর হ্যাজার্ড কিংবা দে ব্রূইনের বিকল্প পাওয়া যাবে না। তাই শুক্রবার অ্যাডভ্যান্টেজ ইতালি।
চারজনের বাকি দুজন হলেন গোলকিপার থিওবা কুর্তোয়া এবং স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকু। জার্মানি ইউরো থেকে বিদায় নেওয়ায় রিয়াল মাদ্রিদের কুর্তোয়া-ই এখন টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপার। পর্তুগালের বিরুদ্ধে প্রিকোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে তিনি অনেকগুলো সেভ করেছেন। আর ইন্টার মিলানের লুকাকু এখন পর্যন্ত তিনটে গোল করে নিজের স্ট্রাইকিং এবিলিটির পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু এই দুজন কি পারবেন বাকিদের নিয়ে ইতালিকে হারাতে? টানা ৩১টা ম্যাচে অপরাজিত ইতালি। বেলজিয়ামের মতো তারাও ইউরোতে পর পর চারটে ম্যাচ জিতেছে। তাদের তিন ফরোয়ার্ডই গোলের মধ্যে। সেই সিরো ইম্মোবিল, লরেঞ্জো ইনসিগনের সঙ্গে শুক্রবার হয়তো ফেদেরিকো চিয়েসাকে দিয়েই শুরু করবেন ইতালি কোচ রবের্তো মানচিনি। চিয়েসা আগের ম্যাচে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে গোল করেছেন। তাই প্রথম একাদশে ডোমেনিকো বেরার্দির বদলে শুরু করবেন চিয়েসা।
তবে আসল লড়াইটা হবে লুকাকু বনাম জিওরজিনহো চিয়েলিনির। ইতালি অধিনায়ক চিয়েলিনির ব্যাক ফোরের মেরুদণ্ড। তাঁর সঙ্গে থাকবেন অপর সেন্টার ব্যাক লিওনার্দো বোনুচ্চি। ৩৬ বছর বয়স হল চিয়েলিনির। তাঁর থেকে দু্ বছরের ছোট বোনুচ্চি। দুজনে মিলে ইতালির হয়ে খেলেছেন ২০৯টা ম্যাচ। চিয়েলিনি ১০৭টা, বোনুচ্চি ১০২টা। অতএব তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনও কথা হবে না। জুভেন্তাসের হয়ে ম্যাচের পর ম্যাচ খেলে গেছেন তাঁরা। আর ইন্টার মিলানের হয়ে খেলা লুকাকুকে তাঁরা হাড়ে হাড়ে চেনেন। এখন দেখার লুকাকুকে তাঁরা কীভাবে সামলান। তবে অন্য সময় লুকাকুর সঙ্গে হ্যাজার্ড কিংবা দে ব্রূইন থাকেন। শুক্রবার তাঁরা থাকবেন না। তাই চিয়েলিনিদের কাজটা অনেক সহজ। অবশ্য এডেন হ্যাজার্ডের ছোট ভাই থোর্গান হ্যাজার্ড কিন্তু ভাল খেলছেন। বেলজিয়াম তাঁর গোলেই হারিয়েছে পর্তুগালকে। ছোট হ্যাজার্ড খেলেন মিডফিল্ডে। ফরোয়ার্ডে লুকাকুর পাশে থাকবেন ড্রাই মার্টেন্স এবং ইয়ানিক কারাসকো। এখন দেখার তাঁরা কতটা সাপোর্ট দিতে পারেন লুকাকুকে।
ইতালি এবারের ইউরোতে খুবই ভাল খেলছে। বিপক্ষের দিকে না তাকিয়েও বলা যায় রবের্তো মানচিনির টিম মাঝ মাঠে পাসের বন্যা বওয়াচ্ছে। তাদের মাঝ মাঠে সমযোগ্যতার এত প্লেয়ার আছে যে ম্যানুয়েল লোকাতেল্লির মতো প্লেয়ার সুইৎজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করেও প্রথম একাদশে ঢুকতে পারছেন না। শুক্রবার হয়তো শুরু করবেন নিকোলো বারেল্লা, জর্জিনহো এবংমার্কো ভেরাত্তি। পিএসজি মিডফিল্ড মাস্টার ভেরাত্তি তাঁর হাঁটুর সমস্যা সামলে এখন ভাল ফর্মে আছেন। আর ব্রাজিলজাত জর্জিনহো তো ইতালি মাঝ মাঠের সবচেয়ে তেজি ঘোড়া। এই মাঝমাঠকে সামলাতে খুবই ঝামেলা পোয়াতে হবে বেলজিয়ামকে। তারা চার জনকে খেলায় মাঝ মাঠে। থোর্গান হ্যাজার্ডের সঙ্গে থাকেন অ্যাক্সেল উইটসেল, ইউরি টিলেম্যানস এবং টমাস মেউনিয়ের। কিন্তু কেভিন দে ব্রূইনের অভাব অবশ্যই অনুভূত হবে। এখন দেখার রেড ডেভিলসরা কীভাবে আজুরিদের সামলান।
দুর্দান্ত শুরু করে বেলজিয়াম কিছুতেই ট্রফিতে হাত ছোঁয়াতে পারছে না। আড়ালে তাই তাদের চোকার্স বলে ডাকা শুরু হয়েছে। এবার যদি তারা কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নেয়, তখন যতই তারা বিশ্বের এক নম্বর হোক না কেন চোকার্স তকমা কিন্তু আটকানো যাবে না। তখন কেউ আর শুনবে না হ্যাজার্ড-দে ব্রূইনের চোটের কথা।