বিশ্ব কাপ চ্যাম্পিয়ন বনাম ইউরো কাপ চ্যাম্পিয়ন।
ফের্নান্দো স্যান্টোস বনাম দিদিয়র দেশঁ।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বনাম করিম বেঞ্জামা।
বুধবার বুদাপেস্টের পুসকাস এরিনায় ইউরো কাপের মারণ গ্রূপের শেষ ম্যাচে ফ্রান্সের সঙ্গে লড়াই পর্তুগালের। দুই ম্যাচ খেলে ফ্রান্সের পয়েন্ট চার। পর্তুগালের তিন। গ্রূপের অন্যতম শক্তিশালী দল জার্মানির পয়েন্টও তিন। জার্মানির শেষ ম্যাচ হাঙ্গারির সঙ্গে। বড় কোনও অঘটন না ঘটলে জার্মানির জেতার কথা। কিন্তু কী হবে ফ্রান্স-পর্তুগাল ম্যাচে?
গত ইউরোর ফাইনালে ফ্রান্সের মাঠে পর্তুগাল ১-০ গোলে ফ্রান্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ফ্রান্সের সেই দলটার প্রায় সবাই আছে এবারের দলে। তবে সেবারের টিমে ছিলেন না কিলিয়ান এম্বাপে কিংবা করিম বেঞ্জামা। এম্বাপের পরবর্তীকালে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছিলেন ২০১৮-র বিশ্ব কাপে। ফ্রান্স টিমের তিনি এখন এক নম্বর স্ট্রাইকার। দশ নম্বর জার্সির মালিক। করিম বেঞ্জামা সাড়ে পাঁচ বছর পর ফ্রান্স টিমে ফিরেছেন। দলের সঙ্গে মানিয়ে নিলেও পাঁচটি ম্যাচে গোল পাননি। আর আছেন আঁতোয়া গ্রিজম্যান। সেই অভিশপ্ত ফাইনালে টিমে ছিলেন। পর্তুগালের কাছে হারের ক্ষত এখনও মেটেনি তাঁর। বুধবার জিতলে হয়তো অনেকটা মিটবে। কিন্তু ফ্রান্স কি পারবে জিততে? কঠিন প্রশ্ন। ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে জিতেছে বটে, কিন্তু ম্যাচের একমাত্র গোলটা জার্মানির ম্যাটস হামেলসের আত্মঘাতী। পরের ম্যাচে হাঙ্গারিকে হারাতে পারেনি ফ্রান্স। বরং বিরতির সময় তারা এক গোলে পিছিয়ে ছিল। বিরতির পর আঁতোয়া গ্রিজম্যান গোলটা শোধ করেন। কিলিয়ান এম্বাপে গোল না পেলেও তিনিই আক্রমণ ভাগের সেরা। প্রচুর বল বাড়াচ্ছেম সতীর্থদের জন্য। সেগুলো থেকে গোল করতে পারলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হত। কিন্তু বেঞ্জামা এবং গ্রিজম্যান ঝুরি ঝুরি গোল মিস করায় ফ্রান্স জিততে পারেনি। আসল কথা হল, ফ্রান্সের গোল স্কোরিং এবিলিটির যথার্থ পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।
রোনাল্ডোদের বিরুদ্ধে ফ্রান্সকে জিততে হলে তাদের ফরোয়ার্ড লাইনকে আরও অনেক ভাল খেলতে হবে। গত দুটো ম্যাচে দিদিয়র দেশঁর ছেলেরা যা খেলেছে তা হবে না। কারণ পর্তুগালের ডিফেন্স খুবই ভাল। জার্মানির বিরুদ্ধে পর্তুগাল দুটো আত্মঘাতী গোল খেয়েছে বলে তাদের ডিফেন্সকে দুর্বল ভাবার কোনও কারণ নেই। রুবেন ডায়াস, পেপে কিংবা গুয়েইরো যথেষ্ট ভাল। পর্তুগালের সমস্যা হচ্ছে তাদের মাঝ মাঠটা ভাল খেলতে পারছে না। বিশেষ করে ব্রূনো ফার্নান্ডেজ। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ব্রূনো যে ফুটবলটা খেলেন তার ধারেকাছে নেই তিনি। তাই চাপ বাড়ছে বের্নাদো সিলভা এবং দিয়োগো জোটার উপর। এই জায়গাটায় একটু সমস্যা আছে পর্তুগালের।
তবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো থাকায় অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। পর্তুগাল অধিনায়ক দুটো ম্যাচে তিনটি গোল করেছেন। ফর্মেই আছেন। তাঁকে রুখতে ফরাসি ডিপ ডিফেন্সে রাফায়েল ভারানে কিংবা প্রেসনেল কিমপেম্বে-কে যে অনেক উদ্বেগজনক মুহূর্ত পেরোতে হবে তা বলাই যায়। হাঙ্গারি ম্যাচে ওভারল্যাপে গিয়ে নামতে পারেননি বেঞ্জামিন পাভা। তাঁকে তো বটেই লেফট ব্যাক লুকাস হার্নন্ডেজকে বেশি ওভারল্যাপে যেতে দেওয়া হবে না বলেই ফ্রান্স শিবিরের মন্ত্র।
কিন্তু ফুটবল তো খেলা হয় মাঝ মাঠে। এখানে ফ্রান্সের মাস্তানি কিন্তু গত দুটো ম্যাচে দেখা যায়নি। পল পোগবা, এনগোলো কান্তে কিংবা রাবিয়তরা খেলছেন খারাপ নয়। কিন্তু সেটাকে শুধু ভালয় নয়, খুব ভাল-তে নিয়ে যেতে হবে। ভুললে চলবে না রোনাল্ডো এমন একন ফুটবলার যিনি কখন কী করবেন কেউ জানে না। শূণ্যে হেড করে বা ফ্রি কিক থেকে গোল করে তিনি ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন। ১০৭টা গোল তো আর এমনি এমনি হয়নি। আর ম্যাচটা জিততেই হবে রোনাল্ডোদের। না হলে অনেক অঙ্ক, অন্যরা কী করল তার দিকে তাকিয়ে থাকা। চ্যাম্পিয়নদের এ সব মানায় না। বুধবার রাতে তাই ফ্রান্সকে জিততে হলে আটকাতে হবে এই রোনাল্ডোকে। আর গোল করতে হবে। কোনও কাজটাই সহজ নয়।
এখানে একটা ফ্যাক্টর হতে পারে দুই কোচের মগজাস্ত্র। দুজনেই বড় কোচ। এই ধরনের ৫০-৫০ ম্যাচে কোচের মস্তিষ্ক থেকে বেরনো একটা নিখুঁত পরিকল্পনা কিন্তু ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। বুধবার সেটা কোন কোচের মাথা থেকে বেরোয় তাই এখন দেখার।