ইউরোপীয় ফুটবল নিয়ে আলোচনার সময় অনেকেই ভুলে যান যে, ইংল্যান্ড কখনও ইউরো কাপ জেতেনি। তারা বিশ্ব কাপ জিতেছে কিন্তু ইউরো কাপ জেতেনি এটা খানিকটা আশ্চর্যের। তবে ব্রিটিশদের সেই আক্ষেপ, মনে হচ্ছে, এবারের ইউরো কাপের শেষে মিটে যেতে পারে। ইংল্যান্ড বহু দিন পরে যে ফুটবল খেলছে তাতে যদি তারা নিজেদের ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন হয়, তবে সেটা কিন্তু অঘটন নয়। তবে ১১ জুলাই রাতের ফাইনালের আগে ইংল্যান্ডকে বুধবার ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামেই সেমিফাইনাল খেলতে হবে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে। ইংল্যান্ড যেমন ১৯৯৬ সালের পর এই প্রথম সেমিফাইনালে উঠেছে, ডেনমার্কও তেমনি ১৯৯২ সালের পর এবার আবার শেষ চারে উঠেছে। তবে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ডেনমার্কের তফাত হচ্ছে, ডেনমার্ক সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আর ইংল্যান্ড সেবার ফাইনালেই উঠতে পারেনি।
একটা টিম পঁচিশ বছর পরে সেমিফাইনালে উঠেছে। আর একটা টিম উঠেছে উনত্রিশ বছর পর। তার মানে ইউরোপীয় ফুটবলে এই দুই দেশের ইতিহাস খুব উচ্চমার্গের নয়। তবে এখন এ সব কথা অবান্তর। এখন বর্তমানে থাকাই শ্রেয়। বর্তমান বলছে টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ড সেই তিনটি দলের একটি যারা কোনও ম্যাচ হারেনি। এতে তাদের ডিফেন্সের যেমন প্রশংসা প্রাপ্য তেমনই সাধুবাদ জানাতে হবে তাদের ফরোয়ার্ড লাইনেরও। কিন্তু ইংলিশ ফরোয়ার্ড লাইন জেগেছে একটু দেরিতে। প্রথম তিন ম্যাচে যারা মাত্র দুটি গোল করেছিল, তারাই শেষ দুটি ম্যাচে ছটি গোল করে ফেলেছে। কী করে হল এমন পরিবর্তন? কিছুই না। ইংল্যান্ডের ক্যাপ্টেন হ্যারি কেন গোল পাচ্ছিলেন না। জার্মানি ম্যাচে কেন প্রথম গোল পেলেন। আর তার পরের ম্যাচে দুর্বল ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড চার গোলে জিতল। এর মধ্যে কেনের জোড়া গোল। ইংল্যান্ডের সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। শুধু সমস্যা ছিল হ্যারি কেনের গোল পাওয়া নিয়ে। কেন গোল পেতেই, তাই, ইংল্যান্ড বেশ ফুরফুরে।
ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট কিন্তু সেজন্য তাঁর আলট্রা ডিফেন্সিভ স্ট্র্যাটেজি থেকে সরছেন না। তাঁর সেই ৪-৩-২-১ ছকেই তিনি খেলতে চান। চার ডিফেন্ডার হবেন কাইল ওয়াকার, জন স্টোন্স, হ্যারি ম্যাগুয়ের এবং লুকা শ। তাঁদের সামনে তিন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। ডেকলান রিসে, কলভিন ফিলিপস, বুকায়া সাকা। এঁদের সামনে দুই অ্যাটাকিং মিডিও রহিম স্টার্লিং এবং ম্যাসন মাউন্ট। সিঙ্গল স্ট্রাইকার হ্যারি কেন। তবে রহিম স্টার্লিং খুবই ভাল ফর্মে আছেন। তিনটি গোল করা হয়ে গেছে তাঁর। কেনের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া এখন বেশ ভাল জায়গায় আছে। তাই গোল পেতে সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।
কী করবে ডেনমার্ক? নিশ্চিতভাবেই ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ষাট হাজার দর্শকের সামনে তারা আন্ডারডগ। ডেনিসরা এখনও ডিনামাইট না হলে কী হবে তাদের এবারের অভিযান কিন্তু চমকপ্রদ। প্রথম ম্যাচে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসনের মৃত্যুর হাত থেকে ফেরার পর ডেনিসরা যে তলিয়ে যায়নি এটাই এবারের ইউরোর সবচেয়ে বড় ঘটনা। প্রথম দুটি ম্যাচ হেরে তারা সেমিফাইনালে, এটাও মনে হয়, ইউরোর ইতিহাসে খুব একটা নেই। তবে তাদের কৃতিত্বকে বিন্দুমাত্র খাটো না করে বলা যায় ডেনিসরা কিন্তু ক্রীড়াসূচির আশীর্বাদ পেয়েছে। প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েলস এবং কোয়ার্টার ফাইনালে চেক প্রজাতন্ত্র খুব বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। ডেনমার্ক দুটো ম্যাচই আরামে জিতেছে। এবার তারা কিন্তু বেশ শক্ত টিমের সামনে পড়ে গেছে। এই ম্যাচ বের করা বেশ কঠিন হবে ডেনিসদের কাছে। ইংল্যান্ড কিন্তু ৬০-৪০ ফেভারিট।
তবে ডেনমার্ক কিন্তু লড়বে। তাদের গোলে আছেন কাসপার স্কিমিশেল। লেস্টার সিটির এই গোলকিপার তাঁর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সতীর্থদের খুবই ভালভাবে চেনেন। হ্যারি কেন কিংবা রহিম স্টার্লিংরা তাঁর বিরুদ্ধে সহজে গোল পাবেন না। তিন ব্যাকে খেলছে ডেনমার্ক। তাদের অধিনায়ক সেমন কাজের ডিফেন্সেরও নেতা। তাঁর সঙ্গে ভেস্টারগার্ড এবং চিরেনটেনসেনের সুনাম মহাদেশে না ছড়ালেও নিজের টিমকে নির্ভরতা দিতে তাঁরা ওস্তাদ। ডেনমার্কের আসল শক্তি তাদের মাঝ মাঠ। লারসেন, টমাস ডেলানি, হসবার্গ এবং মাহেলেকে নিয়ে গড়া তাদের মাঝ মাঠ ইংল্যান্ডের সঙ্গে টক্কর দিতে প্রস্তুত। ফরোয়ার্ডে ড্যামসগার্ড, কাসপার ডলবার্গ এবং মার্টিন ব্রেথওয়েট নিশ্চয়ই হ্যারি কেন কিংবা রহিম স্টার্লিং নন। কিন্তু টিমকে জেতাবার ব্যাপারে তাঁরা কিন্তু যথেষ্ট দক্ষ।
তবে ধারে-ভারে ইংল্যান্ড কিন্তু যথেষ্ট ভাল জায়গায় আছে। এবার যদি তারা না চ্যাম্পিয়ন হয়, তবে আবার কবে হবে কেউ জানে না। ইংল্যান্ডের কাছে হয় এবার, নয় নেভার। এ রকম একটা মরিয়া দলের বিরুদ্ধে ডেনমার্ক অবশ্যই আন্ডারডগ। তবে খোলা মনে খেলবে ডেনিসরা। তাদের কিছুই হারাবার নেই। সঙ্গে আছে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসনের অনুপ্রেরণা। কোপেনহেগেন থেকেই তো এরিকসন ডেনিসদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছেন। ওয়েম্বলিতে তিনি না থেকেও আছেন ডেনিসদের সঙ্গে। আর তাতেই বাজিমাৎ করবে ডেনিস ডিনামাইটরা?
কঠিন কিন্তু, অসম্ভব নয়। ফুটবলে অসম্ভব বলে কিছু হয় না। আর এবারের ইউরোতে তো অসম্ভবই সম্ভবই হচ্ছে। তাই…