ডেনমার্ক–৪ ওয়েলস–০
(কাসপার ডলবার্গ–২, জোয়াকিম মাহেলে, মার্টিন ব্রেথওয়েট)
সেটাও ছিল আজকের মতো একটা শনিবার। কোপেনহেগেনে নিজেদের মাঠে ভরা স্টেডিয়ামের সামনে খেলতে নেমেছিল ডেনমার্ক। সামনে এই প্রথম ইউরোর আসরে নামা ফিনল্যাল্ড। ভালই খেলছিল ডেনিসরা। কিন্তু কোথা দিয়ে যে কী হয়ে গেল। বিরতির খানিক আগে সাইডলাইনের ধারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে গেলেন ডেনিশ মিডফিল্ডার ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন। ছুটোছুটি। ডাক্তার-আ্যাম্বুলেন্স-হাসপাতাল। ম্যাচ স্থগিত। পৌনে দু ঘণ্টা পর মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ডেনমার্ক খেলতে নামল এবং ফিনল্যান্ডের কাছে হেরে গেল এক গোলে। পরের ম্যাচে বেলজিয়ামের কাছেও হার। সবাই তখন ধরে নিয়েছিল এবারের ইউরোয় ডেনমার্কের অভিযান শেষ।
শুধু অন্য রকম ভেবেছিল ডেনিস প্লেয়াররা। নাহলে মরণ বাঁচন ম্যাচে রাশিয়াকে চার গোল দিয়ে ডেনমার্ক নক আউটে পৌছয় না। আর তারপর আবার একটা শনিবার আজকে। এবং গত বারের সেমিফাইনালিস্ট ওয়েলসকে গোলের মালা পরিয়ে ডেনমার্ক ড্যাং ড্যাং করে পৌছে গেল ইউরোর শেষ আটে। একটা টিমের প্লেয়াররা কতটা নিজেদের কর্তব্যে অটল হতে পারলে খাদের কিনারা থেকে ফিরে এসে শেষ আটে যেতে পারে তার উদাহরণ হয়ে রইল ডেনমার্ক। ১৯৯২ সালে মাত্র দশ দিনের প্রস্তুতিতে ইউরো খেলতে এসে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরেছিল। ডেনমার্কের ফুটবল ইতিহাসে সেই সাফল্য রূপকথার অর্ন্তগত। এবার ডেনমার্ক কোথায় গিয়ে থামবে তা সময়ই বলবে। কিন্তু এবারের কাহিনীও তাদের লোকগাথার বিষয় হয়ে রইল।
ডেনমার্ক চার গোলে জিতেছে। আরও বেশি গোলে জিততে পারত। এদিন আরও একটা ছোট্ট রেকর্ড হল। দুই দলের গোলকিপার ডেনমার্কের কাসপার স্কিমিশেল এবং ওয়েলসের ড্যানি ওয়ার্ড ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে একই ক্লাব লেস্টার সিটিতে খেলেন। দু জনেই মাঠে নেমেছিলেন একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার জন্য। ওয়ার্ড অনেকগুলো সেভ না করলে গ্যারেথ বেল-দের কপালে আরও অনেক দুঃখ ছিল। সেই তুলনায় স্কিমিশেলের কাছে বলই আসেনি। কী করুণ পরিণতি ওয়েলস ক্যাপ্টেনের। এবারের টুর্নামেন্টে চারটে ম্যাচে বেলের একটাও গোল নেই। এটাই মনে হয় জীবন। দেয়ও যেমন, কেড়ে নেয়ও তেমনই।
ডেনদের হিরো অবশ্যই কাসপার ডলবার্গ। ফরাসি লিগা ওয়ানে নিসের হয়ে খেলেন এই স্ট্রাইকার। বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে গোল করা ইউসুফ পলসেনকে বসিয়ে ডলবার্গকে নামিয়েছিলেন ডেনিস কোচ কাসপার হুলমান্ড। ডেনমার্ক টিমে দেখা যাচ্ছে কাসপারের ছড়াছড়ি। তবে কোচ কাসপারকে ডোবাননি স্ট্রাইকার কাসপার। তাঁর প্রথম গোলটি ২৭ মিনিটে। ড্যামসগার্ডের কাছ থেকে বল পেয়ে কাসপার বক্সের সামনে এক লহমা থমকালেন। তার পর ডান পা থেকে বুলেট শটে গোল। ডেনমার্ক টিমে আছেন বার্সেলোনার মিডফিল্ডার কাম স্ট্রাইকার মার্টিন ব্রেথওয়েট। এদিনে দলের জয়ে তাঁরও বড় ভূমিকা আছে। ৪৮ মিনিটে ডলবার্গের দ্বিতীয় গোলের পিছনে তিনিই। ডান দিক দিয়ে বল নিয়ে অনেকটা দৌড়ে ব্রেথওয়েট সেন্টার করেন। ওয়েলশ ডিফেন্ডার নিকো উইলিয়ামস ক্লিয়ার করতে গিয়ে ডলবার্গের পায়ে বল দিয়ে দেন। গোল করতে ভুল করেননি দিনের নায়ক।
এর পর গোল শোধের জন্য মরিয়া হয় ওয়েলস। অ্যারন র্যামসেকে সঙ্গে নিয়ে গ্যারেথ বেল চেষ্টা করেছিলেন খুব। কিন্তু দিনটা তাঁদের ছিল না। হতাশ হয়ে পা চালিয়ে খেলতে থাকেন বেল। হলুদ কার্ডও দেখেন। এই করতে করতেই সময় বয়ে যায়। কিন্তু গোল করার চেষ্টা কমে না ডেনমার্কের। ৮৮ মিনিটে জোয়াকিম মাহেলে ৩-০ করার পর হতাশা থেকে ওয়েলসের উইলসন মাহেলেকেই লাথি মেরে লাল কার্ড দেখেন। সংযুক্ত সময়ের চার মিনিট দশ জনে খেলতে হয় ওয়েলসকে। ৯৪ মিনিটে কর্নেলিয়াস ডেফ্টের পাস থেকে বাঁ পায়ের শটে ব্রেথওয়েট ৪-০ করেন।
পর পর দুই ম্যাচে চার গোল করে করল ডেনমার্ক। লাল সাদা জার্সিধারীরা কি তাহলে সত্যিই ডিনামাইট হয়ে গেল এবারের ইউরোতে?