ব্রাজিল–১ চিলি–০
(লুকাস পাকুয়েতা)
বিশ্ব ফুটবলে চিলি তেমন দাগ রাখতে না পারলেও কোপা আমেরিকায় তারা বরাবরই বড় শক্তি। ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে পর পর দুবার চ্যাম্পিয়ন। প্রতিবারই তাদের সামনে ধরাশায়ী হয়েছিল লিওনেল মেসির আর্জেন্তিনা। ২০১৬ সালের ফাইনালের পর মেসি তো রাগে দুঃখে অবসরই নিয়ে নিয়েছিলেন। পরে অবশ্য সিদ্ধান্ত বদলে খেলে যাচ্ছেন। এখনও তিনি আর্জেন্তিনার অধিনায়ক। চিলিকে নিয়ে এত কথা বলতে হল এজন্যই যে এই টিমটার ঝাঁঝ দুর্দান্ত। সেটা যে কতখানি তা শুক্রবার রাতে বুঝল ব্রাজিল। বিরতির একটু পরে গোল করেও তাদের ম্যাচ জিততে হল অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। তার একটা বড় কারণ ৪৯ মিনিটে গ্যাব্রিয়েল জেসুসের লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া। বাকি সময়টা দশ জনে খেলে ব্রাজিল যে শেষ পর্যন্ত কোপার সেমিফাইনালে উঠতে পারল এটাই তাদের দেশের মানুষের কাছে অনেক। সেমিফাইনালে ব্রাজিল খেলবে পেরুর সঙ্গে। তারা এদিনই টাই ব্রেকারে হারিয়েছে প্যারাগুয়েকে।
গ্রূপ বি-র শেষ ম্যাচে নেমার-কাশেমিরোদের বিশ্রাম দিয়েছিলেন তিতে। কিন্তু রিও দে জেনেরিও-র নিন্তন স্যান্টোস স্টেডিয়ামে তিতে এদিন পূর্ণ শক্তির দল নামান। টিমে ছিলেন নেমার, কাশেমিরো, ফির্মিনো, জেসুসরা। ওদিকে চিলিও তাদের অধিনায়ক আ্যালেক্সি স্যাঞ্চেসকে ফিরিয়ে আনে। চোটের জন্য তিনি এত দিন মাঠের বাইরে ছিলেন।
দু দলেই গোল করার একাধিক লোক থাকায় শুরু থেকেই দু দল গোলের জন্য সচেষ্ট হয়। নয় মিনিটের মাথায় চিলির ভেগাসের শট বাঁচান ব্রাজিল গোলকিপার এডেরসন। শুধু এ বারই নয় ম্যাঞ্চেস্টার সিটির গোলকিপারকে এদিন প্রচুর সেভ করতে হয়েছিল। উল্টো দিকে চিলির তিন কাঠির নীচে ছিলেন ক্লদিও ব্রাভো। বিশ্ব মানের গোলকিপার। তাঁকেও প্রচুর বল বাঁচাতে হয়েছে। রিচার্লিসনের যে শটটা বাঁচান তিনি তা থেকে গোল হলে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। ব্রাজিলের অধিনায়ক নেমারই ছিলেন সব আক্রমণের উৎস। একটু পরেই তিনি ফির্মিনোর জন্য বল সাজিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু লিভারপুল স্ট্রাইকার তাড়াহুড়ো করে মারতে গিয়ে বাইরে মারেন। বিরতির একটু আগেই চিলির এদুয়ার্দো ভার্গাসের শট বাঁচিয়ে দেন এডেরসন।
বিরতি পর ফির্মিনোকে বসিয়ে লুকাস পাকুয়েতাকে মাঠে নামান তিতে। ফরাসি লিগ ওয়ান ক্লাব লিওঁর এই মিডফিল্ডার মাঠে নামার দু মিনিটের মধ্যেই গোল করেন। নেমারের থেকে বল পেয়ে চমৎকার শটে ব্রাভোকে হার মানান পাকুয়েতা। এবং এর দু মিনিট পরেই অন্ধকার নেমে আসে ব্রাজিলের টিমে। নিজের পা অনেকটা উঁচুতে তুলে শট নিতে গিয়ে গ্যাব্রিয়েল জেসুস মেরে দেন ইউজেনিও মেনার মুখে। এবং নিজেই নিজের অপরাধ বুঝতে পেরে মুখ ঢেকে বসে পড়েন। আর্জেন্তিনার রেফারি পাত্রিসিও লোসতাও সঙ্গে সঙ্গে লাল কার্ড দেখিয়ে বের করে দেন জেসুসকে। ব্রাজিল দশ জনে হয়ে যাওয়ায় চিলি গোল শোধের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই সময় ব্রাজিল ডিফেন্স রুখে না দাঁড়ালে চিলি গোল পেয়ে যায়। আর দুভের্দ্য ছিলেন তাদের গোলকিপার এডেরসন। ব্রাজিল কিন্তু আক্রমণ থামায়নি। তারাও পাল্টা আক্রমণে গেছে। কিন্তু কাশেমিরো-নেমাররা গোলের সুযোগ তৈরি করেও গোল করতে পারেননি। আবার ব্রাভোও অনেক বল বাঁচিয়েছেন। আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে এই সময় খেলাটি অত্যন্ত উপভোগ্য হয়ে ওঠে। দুর্ভাগ্য করোনার জন্য গ্যালারি ছিল দর্শক শূণ্য।
প্যারাগুয়ের সঙ্গে পেরুর ম্যাচেও গোলের বন্যা। ম্যাচ শেষ হল ৩-৩ গোলে। দুদলের এক জন করে লাল কার্ড দেখলেন। প্যারাগুয়ের গোমেজ দেখেন বিরতির আগে সংযুক্ত সময়ে। আর পেরুর কারিলো দেখেন ৮৫ মিনিটে। শেষ পর্যন্ত টাই ব্রেকারে পেরু ৪-৩ গোলে জিতে সেমিফাইনালে পৌছে গেছে।