একই বছরে মাত্র ছয় মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে জয় এবং পরাজয়। এটাও রেকর্ড তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নন্দীগ্রামে তৃণমূলের এক জনসভায় দাঁড়িয়ে মার্চ মাসে আচমকাই নেত্রী ঘোষণা করে দিলেন, নন্দীগ্রামে তিনিই দলের প্রার্থী। তার আগে তিনি উদ্বেল জনতার সামনে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন, ‘আচ্ছা, আমি যদি নন্দীগ্রামে দাঁড়াই, তবে কেমন হয়?’ নেত্রীর এই প্রশ্ন শুনে জনতার গর্জন শোনা গিয়েছিল। সেই জনতা সায় দিয়েছিল নেত্রীর প্রস্তাবে। নেত্রী বললেন, নন্দীগ্রাম আমার আত্মা, নন্দীগ্রাম আমার আবেগ, ভবানীপুর আমার বড় বোন, নন্দীগ্রাম ছোট বোন। তিনি আরও বললেন, ‘আমি কিন্তু নন্দীগ্রামে বেশি সময় দিতে পারব না। কারণ ২৯৪ টা আসনে আমাকে ঘুরতে হবে। আপনারা আমার হয়ে সামলে দেবেন। ভোটের পর আমি নন্দীগ্রামকে সাজিয়ে দেব।
উল্টোদিকে নন্দীগ্রামের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক, দলত্যাগী শুভেন্দু অধিকারী জানিয়ে দিলেন, দল টিকিট দিলে তিনি নন্দীগ্রামেই দাঁড়াবেন। বুক বাজিয়ে শুভেন্দু দাবি করলেন, অন্তত পঞ্চাশ হাজার ভোটে মমতাকে হারাবেন। জোর জমে উঠল নন্দীগ্রামের লড়াই। গণনার দিন রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা। কখনও মমতা এগিয়ে, কখনও শুভেন্দু এগিয়ে। শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসলেন শুভেন্দু। তবে পঞ্চাশ হাজার নয়, মাত্র ১৯৫৬ ভোটের ব্যবধানে জিতলেন তিনি। মমতা বললেন, জনতার রায় মাথা পেতে নিলাম। একইসঙ্গে তৃণমূল পুনর্গণনার দাবি তুলল। ফল চ্যালেঞ্জ করে মমতা হাইকোর্টে মামলা করলেন। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন।
আরও পড়ুন : মমতা ঢেউয়ে বঙ্গ-রাজনীতির নয়া ভ্যারিয়্যান্ট বিজেপি পর্যুদস্ত
মমতা প্রথম হেরেছিলেন ১৯৮৯ সালের লোকসভা ভোটে সিপিএমের মালিনী ভট্টাচার্যের কাছে। আর ২০২১ সালে নন্দীগ্রামে হারলেন একদা তাঁরই ঘনিষ্ঠ শুভেন্দুর কাছে।
আবার জিতলেনও তিনি। তবে বড় বোন ভবানীপুরে। নেত্রীকে জায়গা ছেড়ে দিতে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ভবানীপুর থেকে ইস্তফা দিলেন। সেপ্টেম্বরের উপনির্বাচনে প্রায় ৫৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতে এলেন নেত্রী। জয়ের পরে বললেন, আমাকে চক্রান্ত করে নন্দীগ্রামে হারানো হয়েছিল। ভবানীপুরের মানুষ সেই চক্রান্তের জবাব দিলেন।
আরও পড়ুন : পেগাসাসের টিকটিকি, নিশানায় কেন্দ্র
চক্রান্ত হয়েছিল কি না, তা নন্দীগ্রাম মামলার রায় বেরোলে বোঝা যাবে। তবে একই বছরে কয়েক মাসের ব্যবধানে জয় এবং পরাজয় একই নেত্রীর, এটাও রেকর্ড। ২০২১ সালের ইতিহাসে এটা নিঃসন্দেহে বড় ঘটনা।