বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যখন ২৫ তম বিবাহবার্ষিকীর দিনে পৌঁছে গেলেন লন্ডনে, তখন ভারতে তাঁর ভারতীয় বোর্ড ঋদ্ধিমান সাহার পোস্ট করা টুইট নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে। গতকালই কলকাতা়টিভি ওয়েব পোর্টালে ( kolkatatv.org) এই খবর প্রকাশ করা হয়েছিল। সোমবার বোর্ডের কোষাধক্ষ্য অরুণ ধুমাল সংবাদ সংস্থার কাছে, স্পষ্ট করে দিয়েছেন বোর্ডের ভাবনা চিন্তা। তিনি বলেছেন, ‘ অবিলম্বে বোর্ড সচিব জয় শাহ নিজে কথা বলবে ভারতীয় ক্রিকেটার ঋদ্ধিমান সাহার সঙ্গে। সাংবাদিকের হুমকি টুইটার নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করবে বোর্ড।’
ঋদ্ধিমান সাহা জাতীয় দলে জায়গা না পেয়ে , প্রচার মাধ্যমে কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের তাঁকে দেওয়া পরামর্শের কথা বলেছিলেন। আর হতাশার সঙ্গে বলেছিলেন , তারই রাজ্যের প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং এখনকার বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের তাঁকে লেখা একটি এস এম এস এর কথা। আর নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করেন এক সাংবাদিকের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের অংশবিশেষ। তাতে দেখা যাচ্ছে, ঋদ্ধিমান সেই সাংবাদিককে ইন্টারভিউ না দেওয়ায় নানানভাবে হুমকি দিয়েছেন।
https://twitter.com/Manya23140234/status/1496008217909944323?t=7BTkrMY2-P2l2M6rXc0-KQ&s=19
এমনকি, এটাও লিখেছেন – ঋদ্ধি যাঁদের সাক্ষাৎকার দিয়েছেন – তাঁরা কোনো পদের সাংবাদিকই নন। বরঞ্চ তাঁকে ইন্টারভিউ দিলে ঋদ্ধিমানের লাভই হতো। কিসের লাভ হতো? কিসের ইঙ্গিত এটা? তাহলে কি এই সাংবাদিককে ইন্টারভিউ দিলে ঋদ্ধিমান জাতীয় দল থেকে পারফর্ম করেও যে বাদ গেলেন, তা হতো না? সেই সাংবাদিক তাহলে কি কোনও সিস্টেমের সঙ্গে রয়েছেন, যা দিয়ে এমন সব কাজ করা যায়! এইসব প্রশ্ন নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।
ঋদ্ধিমানের টুইট দেখার পর প্রাক্তন জাতীয় দলের কোচ রবি শাস্ত্রী কড়া সমালোচনা করে টুইট করে , বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে অবিলম্বে এই ইস্যুটি দেখতে লিখেছে।
https://twitter.com/AnkitRaj8888/status/1496007826355134468?t=F26AL5zHM4FRyGltkEsmVQ&s=19
ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি হয়ে এখন বিসিসিআই অ্যাপেক্স কাউন্সিলে রয়েছে ঋদ্ধির সঙ্গে খেলা লেফট আর্ম স্পিনার প্রজ্ঞান ওঝা। তিনি টুইট করে লিখেছেন, ‘ ঋদ্ধি নাম জানাও সেই সাংবাদিকের, আমি তোমার হয়ে লড়তে চাই। মিটিংয়ে কড়া পদক্ষেপ করার দাবি জানাবো।’
https://twitter.com/Pat_thePsycho/status/1496004444726898688?t=PAs56rPTOTiAvViRRdEUfg&s=19
নেটজেনরা এক সাংবাদিকের নানান টুইট থেকে এক ধরনের শব্দ ব্যবহারের ছবি নিয়ে প্রচার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। সেই সাংবাদিকের বং কানেকশন আছে বলে লেখা হয়েছে। এবং সেই কানেকশনের জন্য বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কড়া সমালোচনা করেছেন অনেকেই।
Seems to be a sad and disappointing end to the saha saga. Like the saying goes, in a fight against institution, institution always win 😤😤
(We all know boria has ganguly’s and in turn BCCI’s backing) #Saha #BCCI— Pankaj (@Pankajhbk007) February 22, 2022
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় শিবিরে থাকা দুই প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার বীরেন্দ্র সেহয়াগ আর হরভজন সিং বাংলার এই উইকেটকিপারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কেকেআরের প্রাক্তন অধিনায়ক এবং জাতীয় দলের প্রাক্তন ওপেনার – বর্তমান বিজেপি সাংসদ গৌতম গম্ভীরও ঋদ্ধির হয়ে এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন।
সৌরভকে চিঠি:
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী , সৌরভের অতি ঘনিষ্ঠ মানুষ শিলিগুড়ির সদ্য প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য খোলা চিঠি লিখলেন বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৌরভ – স্নেহাশিসের ‘অশোক কাকু ‘ তাঁর জেলার ছেলে ঋদ্ধিমানের এভাবে জাতীয় দল থেকে বাদ যাওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। উনি সৌরভকে অনুরোধ করেছেন, ঋদ্ধিকে এভাবে সরিয়ে দেওয়ার যথার্থ কারণ বিচার করে পদক্ষেপ করতে। তিনি একসময় সৌরভের জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আশা করছেন, সৌরভ নিশ্চিত ঋদ্ধিকে প্রাপ্ত সম্মান ফিরিয়ে দেবে।
Former WB minister #asokebhattacharya wrote an open letter to his very close @SGanguly99 to reconsider #WriddhimanSaha issue..@CabCricket @Wriddhipops @BCCI pic.twitter.com/L4jEhcApUu
— DG Talk (@DGTalk2) February 22, 2022
যদিও সৌরভের বাদ পড়ার সময় বাংলার ক্রিকেট প্রশাসন যেভাবে বোর্ডের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল, তা কেউ ভুলে যায়নি। এখনকার সিএবি প্রশাসন কেন এড়িয়ে যাচ্ছে! বোর্ড সভাপতি সৌরভের দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় এখন সিএবি সচিব। তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘ বোর্ড আর নির্বাচকরা বুঝেছে, তাই এটা করেছে। আমরা কেন প্যারেন্ট বডির সঙ্গে লড়াইয়ে যাব।’ সেদিন জগমোহন ডালমিয়ার নেতৃত্ব এই কথা বা মানসিকতা দেখলে – সৌরভের প্রত্যাবর্তন কি হত? হয়তো হত, কিন্তু কঠিন হত। সৌরভের জন্য একটি সংস্থা করতে পারে লড়াই, আরে অন্য কোন ক্রিকেটার হলে করা যায় না! নাকি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় যেভাবে ঋদ্ধিমানের সমালোচনা করেছেন, সৌরভের অভিনন্দন বার্তা প্রকাশ করা নিয়ে – তাতেই বুঝিয়েছেন : ভিন্ন ব্যাক্তি , ভিন্নও নিয়মে তিনি বিশ্বাসী।
স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় নিজের ক্রিকেট জীবনে অনেক এই ধরনের সময় দিয়ে গেছেন। রঞ্জি ট্রফি ফাইনালে মাঠের বাইরে বসতে হয়েছিল, নিজের ভাই সৌরভকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে। একবার ফিরে দেখুন, সেদিন কতোটা যন্ত্রণায় ছিলেন। ভাঙ্গা পা নিয়ে ব্যাটিং করে বাংলাকে ফাইনালে তুলেছিলেন। আর ঋদ্ধি! দেশের জন্য শেষ ম্যাচে, ঘাড়ে চোট নিয়ে ব্যাটিং করে , দলকে বাঁচিয়েছিলেন। তাঁর তাহলে এটাই পাওনা ছিল?
ঋদ্ধি তো স্ত্রী অসুস্থ বলে, রঞ্জি খেলতে যাননি। তার জায়গায় খেলে , অভিষেক পোড়েলকে পাওয়া গেল। মনোজের পরের কাউকে কবে পাওয়া যাবে দেখা যাক। হয়তো মনোজ নিজে সরলে তবে মিলবে।
ছবি: সৌ টুইটার।