কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: ২০১১ সালের ৬ মে। জমি হাঙর ও জলাভূমি বোজানোর সিন্ডিকেটের বিষনজরে ততদিনে পড়ে গিয়েছেন তপন দত্ত। কিছুদিন আগেও যে সিপিএমের সঙ্গে এই একই বিষয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী। তাদের অনেকেই রাতারাতি তৃণমূল যুব নেতা তপন দত্ত ও বালির সাঁপুইপাড়া পঞ্চায়েতের সদস্য প্রতিমা দত্তের সবকর্মী হয়ে গেল। কিন্তু, জলাভূমি ভরাট নিয়ে লড়াইটা শেষদিন পর্যন্ত ছাড়েননি তপন দত্ত।
রাত পৌনে ১০টা নাগাদ প্রাক্তন যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তপন দত্ত বালি ষ্টেশনের কাছে ঘোষপাড়া রেল গেটে খুন হলেন। কয়েকজন এসে খুব কাছ থেকে তাঁকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক দূরত্ব থেকে গুলি করে। তার ২-১ বছর আগে তপন দত্তের ভাই বিজয় দত্তও কমিল্লাপাড়া তৃণমূল অফিসের সামনে একইভাবে মাফিয়াদের হাতে খুন হন। কিন্তু, তপন দত্ত খুনের পর বিষয়টি আর ধামাচাপা থাকেনি। কারণ, পরিবেশরক্ষা তথা জলাভূমি বাঁচানোর লড়াইটা তপন দত্ত ততদিনে আকারে বাড়িয়ে দিয়েছেন। দলের অভ্যন্তরেই এই নিয়ে ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকাতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: Tapan Dutta CBI: বালির তপন দত্ত খুনে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
শুধু তৃণমূল ভোটে কারচুপিতে বাধা দেওয়ায় সিপিএম এই খুন করেছে বলে অভিযোগ তুলল। এই নীরবতার কারণ কী? প্রকৃত কারণ ছিল আরও গভীরে, ওই বিশাল পরিমাণ জলাভূমির বিশবাঁও জলের তলায়। হাওড়া ও হুগলি জেলায় একসময় ছিল বিস্তীর্ণ এক জলাভূমি। সেখানে বিভিন্ন জায়গায় মাছ চাষ করে, সংসার চলত বহু মানুষের। এই জলাভূমিতেই কয়েক শতক ধরে গড়ে উঠেছে নানা জনপদ, শহর, গ্রাম, লোকালয়। কিন্তু তারপরেও বিশাল এক জলার অস্তিত্ব তখনও ছিল। তলেতলে ষড় চলছিল, তা বুজিয়ে ফেলা। জমি হাঙর ও মাফিয়ারা ওঁত পেতেছিল সেদিকেই। তাতেই বাদ সেধেছিলেন তপন দত্ত।
তপন দত্ত বালি-জগাছা এলাকায় তাঁর রাজনৈতিক দলের সঙ্গীদের নিয়ে এর প্রতিবাদ শুরু করেন। তখন তিনি হাওড়া জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি। ]প্রথমে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, পঞ্চায়েত, বিডিও, ভূমি দফতর, জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন নিবেদন শুরু করেন। এছাড়াও সভা-সমিতি, অবরোধও করেন। এই আন্দোলনে জয়পুর বিল, জগদীশপুর, চামরাইল এবং বাইগাছি মৌজার অধিবাসীদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘বালি-জগাছা জলাভূমি বাঁচাও কমিটি’।
আরও পড়ুন: Cancer: ‘ডোস্টারলিমাব’ ওষুধে সারছে ক্যানসার, কত লক্ষ দাম জানেন?
তথ্য জানার অধিকার প্রয়োগ করে জানতে পারেন যে, এলাকার সেচ-নিকাশি খাল ছাই দিয়ে বোজানো হয়ে গিয়েছে। তখন তাঁরা হাইকোর্টে যেতে বাধ্য হন। ২০০৯-এ একটি অন্তর্বর্তী নির্দেশে ডিভিশন বেঞ্চ জলাশয় বোজানো বন্ধ করতে বলে। তা সত্ত্বেও বোজানোর কাজ বন্ধ হয় না। তপন ও তাঁর দলবল রাস্তা অবরোধ করেন, ট্রাক থেকে ছাই ফেলা বন্ধ করে দেয়। জমি মাফিয়াদের সরাসরি বিষনজরে পড়েন তপন দত্ত।
ছাই ফেলে জলা ভরাট করার বরাত পাওয়া ঠিকাদাররা জোট বেঁধে গড়ে তোলে সিন্ডিকেট। স্বভাবতই তপন দত্ত দলের নেতৃত্বের কোপে পড়লেন। তবু বলতেন, শেষ দেখে ছাড়ব। বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ‘আর নয় রক্তপাত’— এই বিষয়ের উপর সভা করার অনুমতি চাইতে ৬ মে তিনি বালি থানায় গিয়েছিলেন। ফেরার পথে নিজেই হিংসার শিকার হয়ে গেলেন।