ওয়েব ডেস্ক: ২০২৬-এ বাংলা চাই, যে কোনও মূল্যে চাই, আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে হলেও বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতা চাই। সম্ভবত এটাই ওয়ান অ্যান্ড অনলি প্রোগ্রাম আমাদের রাজ্যের মানে বঙ্গ বিজেপির। কাজেই গতকাল মহেশতলায় যা হয়েছে, সেটাই শেষ নয়, হিন্দু-মুসলমান মিশ্র এলাকাতে এই আগুন লাগানো হবে, তার ব্লু প্রিন্ট রেডি। উচ্চতম সংগঠন আরএসএস-এর নির্দেশে প্রচারকেরা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র, সর্বত্র এই ফাঁকফোকরগুলো খোঁজা হচ্ছে, আগুন লাগানোর নানান ফন্দিফিকির আঁটা হচ্ছে। এই দাঙ্গা লাগানোর উদ্দেশ্য একটাই, হিন্দু ভোটের মেরুকরণ। শুভেন্দু অধিকারী তো সেই কবেই বলে দিয়েছেন যে ওনার সংখ্যালঘু ভোটের দরকারই নেই, এ রাজ্যে সবকা সাথ সবকা বিকাশ ওসব চলবে না। এ রাজ্যে হিন্দুদের ভোট চাই, আর তা করতে হলে সারা রাজ্যে একটা হাওয়া তৈরি করতে হবে, দিকে দিকে আগুন লাগাতে হবে আর স্লোগানটা ছড়িয়ে দিতে হবে, হিন্দু খতরে মে হ্যায়, হিন্দুদের বিপদ, হিন্দু জনসংখ্যা কমছে, মুসলমান জনসংখ্যা বাড়ছে। এবং শুভেন্দুবাবু অ্যান্ড কোম্পানির ধারণা তাহলেই হিন্দুদের ৭০ শতাংশ ভোট যাবে বিজেপির দিকে এবং ২০২৬-শে উনি মুখ্যমন্ত্রী হবেন। হ্যাঁ, তাকিয়ে দেখুন সারা ভারতের দিকে দাঙ্গা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেকে ডিভিডেন্ড পায় বিজেপি, এটাই হিন্দু ভোট মেরুকরণের সবথেকে সহজ উপায়। তারপর ক্ষমতায় এসে গেলে আর দাঙ্গা হয় না, কারণ তখন এক চরম সাবজুগেটেড, চরম নিপীড়িত মুসলমান সমাজের কোনওরকমে বেঁচে থাকাটাই প্রথম কাজ হয়ে ওঠে, কারণ প্রতিবাদ করলেই আসবে বুলডোজার। সেটাই বিষয় আজকে, শুভেন্দু আগুন নিয়ে খেলছেন, ওই আগুন গিলে খাবে বাংলাকে?
আরও পড়ুন: Aajke | মুখ্যমন্ত্রী পাকিস্তানের হয়ে কথা বলছেন? তো বাবাকে জানাচ্ছেন না কেন?
কী হয়েছে বুধবার মহেশতলায়? মহেশতলার ফটকবাজার, সব্বাই জানেন সেই জায়গা, ৯২-এর বাবরি মসজিদ ভাঙার পরেও সেখানে দাঙ্গা হয়নি, হ্যাঁ মুসলমানেরা এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু ফটক বাজারে হিন্দু মুসলমান ক্রেতা বিক্রেতা বহুদিন ধরেই বাজারে আসে, চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়, বেচাকেনা করে বাড়ি ফেরে। বাজারের গা ঘেঁষে থানা আছে। আর থানার গা ঘেঁষে এক মুসলমান ফলওলার ঝুড়ি ফেলা দোকান, মানে রোজ সে ঝুড়ি নিয়ে বসে ফল বিক্রি করে।
এবার মনে করুন, ৭ তারিখ ইদ ছিল, সেই ইদের সময় আমি নিশ্চিত যে এই ফলওলা বাড়ি গিয়েছিলেন, আর সেই ফাঁকেই তার দোকানের জায়গাতে গজিয়ে ওঠে এক বেদী, বেদীর ওপরে মাটি ফেলে তুলসী গাছ লাগিয়ে দেওয়া হয়। ফলওলা গতকাল বাজারা ফলের ঝোড়া এনে দেখে তাকে পেটে মারার, ভাতে মারার চক্রান্ত হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবে সে প্রতিবাদ করে। এইবারে শুরু হয় খেলা। বেশ কিছু মাতব্বর এগিয়ে আসে, তুলসী গাছ তোলা পাপ, ওটা তো পুজোর বেদী ইত্যাদি চলতে থাকে ভিড় জমা হতে থাকে, সেখানেই ওই ফলওলাকে বলা হয়, বল, জয় শ্রীরাম, তাহলে বসতে দেব। আগুনের মতো ছড়ায় এই ঘটনা আর স্বাভাবিকভাবেই তাতেও রং চড়ানো হয়। মজার কথা হল এসব যখন ঘটছে তখনই পুলিশ এসে ইন্টারভিন করলে, গ্রেফতার করে থানায় ঢোকালে এসব হত না, কিন্তু হল, বাড়ল, উত্তেজিত জনতার এই সংঘর্ষকে এক সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ার চেষ্টা হল, আর ততক্ষণে হাতে এখনও চে গ্যেভারা আঁকা একদা কমরেড বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, কাঁথির খোকাবাবু চলে গেছেন ভবানী ভবনে, হিন্দু খতরে মে হ্যায় স্লোগান দিচ্ছেন, সেসব নিয়ে সন্ধে থেকে কলতলার আসর বসে গেছে, উদ্দেশ্য একটাই আগুন ছড়িয়ে পড়ুক। হ্যাঁ বিজেপি ওটাই চায়, চাইছে। কিন্তু সরকার? থানা, পুলিশ, প্রশাসন? আমাকে মেনে নিতে হবে যে ওই থানার বাইরে একটা বেদী পাকাপোক্ত সিমেন্টের বেদী তৈরি হল আর থানার কেউ কিছু জানল না? ওই বাজারে ৩৬৫ দিন তোলা তোলেন যে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা তাঁরা কিছুই দেখতে পেলেন না? এলাকার বিধায়ককে কেউ কিছু জানাল না? কারণ বিধায়ক যখন এসেছেন তখন তো অবস্থা আয়ত্তের বাইরে। মানে, সেখানেও গাফিলতি, চরম গাফিলতি ছিল। সেই মুহূর্তেই ওই লোকগুলোকে ধরে থানায় পুরে দিলে আজ এই দাঙ্গার আবহ তৈরি হত না, কিন্তু কোথাও তৃণমূল কর্মী-নেতা, পুলিশ প্রশাসনের এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তা আছে, কাজ করছে, যার ফাঁক দিয়েই বাসরঘরে ঢুকছে কালনাগিনী। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমরা সব্বাই জানি, সরকার জানে, মমতা ব্যানার্জি বার বার বলছেন যে বিজেপি ২৬-এর আগে জায়গায় জায়গায় আগুন লাগানোর চেষ্টা করবে। সতর্ক থাকুন। কিন্তু তারপরেও বারবার এই ঘটনাগুলো ঘটছে। এগুলোর পিছনে কি তৃণমূল নেতাদের, কর্মীদের উদাসীনতা আর পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা কাজ করছে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
হ্যাঁ, দাঙ্গার আগুন লাগিয়েই হিন্দু ভোট জড়ো করে বিজেপি ক্ষমতায় আসে, আর তারা আসার পরে দেখবেন, মিলিয়ে নেবেন, আজকের যে বিপ্লবী আসফাকুল্লা নাইয়া, মিলিয়ে নেবেন সেদিন ভ্যানিশ হয়ে যাবেন, আজকের যে ন্যায়ের কথা বলে তৃণমূল সরকার বিরোধিতার ঝান্ডা তুলে সংখ্যালঘু স্বাধীন স্বর সেদিন এঁদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেদিন এই হিন্দুত্ববাদীদের বুলডোজার আর দমন পীড়নের মুখে সাধারণ মানুষেরও দমবন্ধ হবে। তাকিয়ে দেখুন উত্তরপ্রদেশের দিকে, মধ্যপ্রদেশ বা রাজস্থানের দিকে, কে কী খাবে, কে কী পরবে, কে কোন কবিতা পড়বে সেটাও ঠিক করে দিচ্ছে এই গুন্ডার দল। এখনও সময় আছে, সাবধান হোন, এই বিভেদের কুমন্ত্রণা কানে না দিয়ে সাম্প্রদায়িক ঐক্য গড়ে তুলুন, আপাতত সেটাই আমাদের একমাত্র কাজ।
দেখুন আরও খবর: