ঝড়খালি: রাজার জন্য রাজকীয় ব্যবস্থা! হোক না তিনি বৃদ্ধ, কিংবা অসুস্থ। তাঁর সেবায় রয়েছে ঠান্ডা-মিষ্টি জলের চৌবাচ্চা থুড়ি রয়্যাল বাথটাব। শরীর শীতল রাখতে চলছে পাখা। গরমে তাঁর শরীরে যাতে লবণ ও খনিজের ভারসাম্য বজায় থাকে, তার জন্য ঘনঘন দেওয়া হচ্ছে ওআরএস। গ্রীষ্মকালীন খাওয়াদাওয়াতেও কবরেজ মশাই বদল ঘটিয়েছেন। বেশিমাত্রায় মাংস একদমই নয়, তাই দিনে ৫-৬ কেজি করে মোষের মাংস বরাদ্দ করে দিয়েছেন রাজবৈদ্য। এবার নিশ্চই ধাঁধা কেটেছে! ঠিক ধরেছেন এতক্ষণ যাঁর কথা বলা হচ্ছিল, তিনি হলেন সুন্দরবনের রাজা— রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
বাথটাবে রয়্যাল বেঙ্গল
এমনিতেই জঙ্গলের রাজা। তার উপর সুন্দরবন। গরান, বাইন ও হেতালের ছায়াতে তিনি যখন শুয়ে থাকেন, তখন নদীর লোনা দখিনা হাওয়ায় মহারাজের মেজাজ পুরো ফুরফুরে করে রাখে। গরম কি বস্তু, সেটা উপলব্ধি করতে পারেন না ঠান্ডা ভেজা মাটি আর প্রকৃতির ছায়াতে। তবে দিনের শেষে শিকারের খোঁজে বা নদী পেরোতে গিয়ে জলে একচোট গা ডুবিয়ে নিতেই হতো লোনা জলে। সেই ভাবেই বড় হয়ে উঠেছেন রয়্যালে বংশধররা।
আরও পড়ুন: Rampurhat: ২৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই, রামপুরহাটে জাতীয় সড়কে আগুন জ্বালিয়ে পথ অবরোধ
কিন্তু বুড়ো বয়সে এসে বাথটাবে চান করতে হবে, এটা সে কখনো কল্পনাতেও আসেনি। প্রবল গরমে তাই এখন বাঘদের ভরসা মিষ্টি জলের বাথটাব। রাখা হয়েছে বিরাট সাইজের পাখা। সারা দিনরাত হাওয়া দিয়ে যাচ্ছে সেই ফ্যানগুলি। প্রবল গরমে পুড়ছে বাংলা। আর সেই দক্ষিণবঙ্গের একটি অংশে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যে অসুস্থ বাঘদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে চলে সেবা-শুশ্রূষার কাজ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বনবিভাগের ঝড়খালিতে গড়ে তোলা হয়েছে ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্র। সেখানেই গরমে সুন্দরবনের মহারাজ-মহারানিদের ঠিক রাখতে নাজেহাল বনকর্মীরা।
হোস পাইপ দিয়ে চলছে স্নানপর্ব
সেখানে রাখা দুটি বাঘ ও একটি বাঘিনীকে প্রতিদিন নিয়ম করে খাওয়ানো হচ্ছে ওআরএস মেশানো জল। প্রায় ৭-৮ লিটার জল খাওয়ানো হচ্ছে ওআরএস মিশিয়ে। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে যাবতীয় ওষুধপত্র। শুধু তাই নয়, গরমের কয়েকদিন মেনুতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রতিদিন ৫-৬ কেজি করে মোষের মাংস দেওয়া হচ্ছে। দুটি খাঁচায় বসানো হয়েছে বাথটাব। একজনের জন্য খনন করা হয়েছে পুকুর। প্রতিটি বাথটাব এবং পুকুরেই দেওয়া আছে মিষ্টি জল। প্রায় প্রত্যেক দিন পাল্টানো হচ্ছে সেই জল। শুধু কি তাই! দিনে দু-তিন বার করে পাইপের সাহায্যে হদ্দ করে চান করানো চলছে বাঘ-বাবাজিদের।
এ বিষয়ে বনকর্মী থেকে সুপারভাইজার ও চিকিৎসকরা জানান, ঝড়খালি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা প্রতিটি বাঘকে এই গরমে নজরদারিতে রাখতে হচ্ছে। উপযুক্ত ওষুধ, জল সব কিছুর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং তা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে খাওয়ানো হচ্ছে। যতদিন না বৃষ্টি নামছে, ততদিন এই ব্যবস্থা চালু থাকবে।